×

জাতীয়

বায়ুদূষণেও অসচেতনতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩১ এএম

বায়ুদূষণেও অসচেতনতা

ফাইল ছবি

করোনা মহামারির ভয়াবহতা কমে গেলেও একেবারে শূন্য হয়ে যায়নি। এমনকি উন্নত দেশগুলোতে নতুন করে করোনা হানা দিয়েছে। সংক্রমণ যেমন বাড়ছে তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশে যে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে, তা এখনো তুলে নেয়া হয়নি। মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা এখনো বহাল। তবে জনগণের অসচেতনতায় মাস্ক ব্যবহারে ব্যাপক অনীহা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ভাষার মাসে শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলার চিত্রটা উদ্বেগজনক।

এর ওপর প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বাতাস বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ও বিপজ্জনক হয়ে থাকছে। এই ভয়াবহতা থেকে বইমেলা মুক্ত নয়। মেলায় ব্যাপক জনসমাগমে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বায়ুদূষণের ভয়াবহ বিপদ। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাস্ক ব্যবহার অনেকটাই জনস্বাস্থ্যবান্ধব এবং নিরাপদ। তবে মেলার গত ১০ দিন ধরে যত দর্শনার্থী পাঠক, বইপ্রেমী এসেছেন বিস্ময়করভাবে তাদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

গত শুক্রবার ছুটির দিনে জনসমাগমে যে ব্যাপকতা দেখা গেছে তাতে মাস্ক না থাকার কারণে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়েছে শতগুণ। মেলায় যে পরিমাণ ধুলোবালি উড়েছে তাতে সেই দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়া ছিল বিপজ্জনক। এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক ব্যবহার ছিল অনেকটা নিরাপদ। তবে এ ব্যাপারে কারো মধ্যে তেমন কোনো সতর্কতা দেখা যায়নি। ঢাকার বিষযুক্ত বাতাস আর বইমেলার ধূলিময় বাতাস প্রতিরোধে মাস্ক পরা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে। অমর একুশে বইমেলা আয়োজকরা বলছেন, মেলা যেন ধুলোবালি মুক্ত থাকে, বাতাস যেন বিশুদ্ধ থাকে এজন্য পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বাতাস বেশি দূষিত হলে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই।

কয়েকজন প্রকাশক এবং স্টল মালিক বলেন, গত শুক্রবার ছুটির দিনে ব্যাপক জনসমাগম হয়েছিল মেলায়। এ দিনে মেলার বাতাস ধূলিময় ছিল। এতে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল স্বাস্থ্য। তবে মেলা চত্বরে পানি ছিটিয়ে ধুলোবালি ঠেকানোর চেষ্টাও ছিল। মেলায় লেকের ধারে

বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুভ, শোভন, হৃদি, সুদেষ্ণা, মিতিলা। তাদের কারো মুখেই ছিল না মাস্ক, তবে হাতে এবং থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রেখেছেন। তারা এক বাক্যে বললেন, মাস্ক পরা খুবই জরুরি। আসলে ঢাকার বাতাস ভয়াবহ রকম দূষিত। যে বাতাস বইমেলাতেও রয়েছে। এর ওপর আবার ধুলোবালি উড়ছে এখানে বেশি। তাই মনে হয়, এখানকার বাতাস আরো বেশি বিপজ্জনক। সেজন্য মেলায় মাস্ক পরা দরকার। বাধ্যতামূলক করলে আরো ভালো।

জানতে চাইলে মেলায় আসা কবি বিমল গুহ বলেন, বইমেলায় ঢুকেই দেখি, পঁচানব্বই শতাংশ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। অথচ স্বাস্থ্যের জন্য কী ভয়ংকর এই ধুলো। মেলার মতো এলাকায় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে ভ্রাম্যমাণ টিম রাখা উচিত এবং কয়েক দফায় পানি ছিটাতে হবে। রুবেল আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, মাস্ক পরলে দম বন্ধ দম বন্ধ লাগে। এ জন্য পরি না। তবে মাস্ক পরা উচিত।

এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, মেলায় সব বয়সিরাই আসছে। দূষিত বায়ু তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এ থেকে বাঁচতে মেলা চত্বরে সকাল থেকেই পানি ছিটাতে হবে। শুধু আয়োজকরাই নয়, স্টল মালিকদের এ ব্যাপারে সহযোগিতা দরকার। তাছাড়া ব্যাপক জনসমাগমে যে ভয়াবহ ধুলো সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে বাঁচতে মাস্ক পরাটা জরুরি। প্রবেশ পথেই মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু করোনাই নয়, অন্য রোগব্যাধি থেকেও মুক্ত থাকা যাবে।

ক্যাপস পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার আরো বলেন, প্রতি বছরই যখন একই স্থানে মেলার আয়োজন হচ্ছে, তাহলে এখানে স্থায়ীভাবে ঘাস লাগাতে হবে। সবুজ ঘাস রক্ষা করেই মেলার আয়োজনটা করতে হবে। এতে মেলার পরিবেশ ও বায়ু বিশুদ্ধ থাকবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য যা সহায়ক হবে। এদিকে গতকাল শনিবার ছুটির দিন হলেও সকালের শিশু প্রহরে শিশুদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। বিকালেও বইপ্রেমীদের দেখা মেলেনি।

মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আশরাফ সিদ্দিকী এবং স্মরণ সাঈদ আহমদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইয়াসমিন আরা সাথী এবং মাহফুজা হিলালী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস্ আল দীন, রীপা রায় এবং আব্দুল হালিম প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুরশীদা বেগম।

প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, ড. আশরাফ সিদ্দিকী ছিলেন প্রথিতযশা লোকসংস্কৃতি সংগ্রাহক এবং বিশ্লেষক। তিনি বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের ফোকলোর চর্চায় ভিন্নতার অনুসন্ধান করেছেন। ফোকলোরের নানা অনুষঙ্গ বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে সাঈদ আহমদ ছিলেন বাঙালি হয়েও একজন বিশ্বমানব। বাংলা এবং ভারতীয় সংস্কৃতি তো বটেই বিশ্বের প্রতিটি দেশের সংস্কৃতির প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। তার সব থেকে বড়ো অবদান, তিনি বিদেশি সাহিত্য আঙ্গিককে দেশে এনেছিলেন এবং দেশের সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশে যারা ফোকলোর চর্চায় উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন আশরাফ সিদ্দিকী তাদের মধ্যে একজন। ফোকলোর গবেষণায় কিংবদন্তি, লোককাহিনী ও উৎসব-আচার সম্পর্কে তার বিস্তর আগ্রহ ছিল। তিনি কেবল লোকসংস্কৃতি গবেষকই ছিলেন না, বাংলা সাহিত্যের জীবনঘনিষ্ঠ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, কবি, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদও ছিলেন। অন্যদিকে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাঈদ আহমদ এ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অনন্য নাম। চাকরির সুবাদে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন এবং বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্ব সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।

সভাপতির বক্তব্যে খুরশীদা বেগম বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বরেণ্য দুজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. আশরাফ সিদ্দিকী এবং সাঈদ আহমদ। তাদের জীবন, কর্ম ও আদর্শ আমাদের তরুণ সমাজকে পথ দেখাবে। এই গুণী ব্যক্তিদের স্মরণ করা আমাদের জন্য একান্ত জরুরি।

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মুর্শিদা বিনতে রহমান, রমজান মাহমুদ, ইশরাত তানিয়া এবং কবির কল্লোল। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি হারিসুল হক, রিশাদ হুদা, শেলী সেলিনা, আসাদউল্লাহ এবং জরিনা আখতার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন গোলাম সারোয়ার, মো. মাসকুরে সাত্তার, বেলায়েত হোসেন এবং সায়েরা হাবীব। এছাড়াও ছিল জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠন’ এবং অমিত হিমেলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমস্বর’-এর পরিবেশনা।

সংগীত পরিবেশন করেন রওশন আলম, অনাবিল ইহসান, মামুনুল হক সিদ্দীক, জুলি শারমিলী, ফারহানা আক্তার, মো. রবিউল হক, আরতি রানী সেন এবং জয় চক্রবর্তী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App