×

সারাদেশ

পানছড়িতে অটোরিকশার দাপটে অসহায় জনসাধারণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৫৩ পিএম

পানছড়িতে অটোরিকশার দাপটে অসহায় জনসাধারণ

ছবি: সংগৃহীত

অটোরিকশা বা ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের দাপটে রাস্তায়-পথঘাটে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে প্রতিদিন অটোরিকশা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে জীবনের ঝুঁকি। যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। জনগনের দুর্ভোগ দেখার কেউ নাই-এমন অভিযোগ খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাবাসীর।

রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) হাটবারে পানছড়ি বাজার ও আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা যায় অন্তত হাজারোখানেক অটোরিকশা-ইজিবাইক। সড়কের যান চলাচলের নিয়মকানুন জানা না থাকায় দেখা যায় যত্রতত্র পার্কিং, গাড়িতে যাত্রী উঠা-নামা। ফলে অন্যান্য যানবাহনের চলাচলে বিঘ্ন ছাড়াও পায়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

পানছড়ির ৪টি অটোরিক্সা বা ইজিবাইক মালিক ও চালক সমিতির তথ্যমতে, ৫৮০টি তালিকাভুক্ত থাকলেও, সমিতির বাইরে আরোও পাঁচশতের বেশি অবৈধ যানবাহনের কাছে জিম্মি স্থানীয় বাসিন্দারা। দ্রুতগতিতে চলার ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাওয়া, যত্রতত্র পার্কিং, যানজট বৃদ্ধি ও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগসহ এ নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ।

পানছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জ্ঞান রঞ্জন চাকমা জানান, বিশেষ করে হাটের দিন পানছড়ি জিরো পয়েন্ট থেকে কলা বাগান ব্রিজ ও চেঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সব মিলিয়ে এক কিলোমিটারের কম এলাকা পাড়ি দিতে পায়ে হেঁটেও ৪০-৪৫ মিনিট সময় লাগে। অটোরিকশা ওয়ালারা ফুটপাত-সহ রাস্তায় জ্যাম করে দাঁড়িয়ে থাকে। যার ফলে শুধু শরীরটা নিয়ে হেঁটে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। এ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল কাদের জানান, পানছড়ির প্রতিটি রাস্তায় ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা এলোমেলোভাবে রাখায় প্রতিনিয়ত জরুরি সেবার রোগী নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। সামান্য ৫০০ গজ রাস্তা পাড়ি দিতে মাঝে মাঝে আধা ঘন্টা সময় লাগে।

ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালক সাইফুল হোসেন বললেন, আমরাতো উপজেলা পরিষদ ও সমিতির স্টিকার নিয়ে চালাচ্ছি। তবে স্টিকারবিহীন প্রায় ৫-৬ শত নতুন ইজিবাইক ও অটোরিকশা ঢুকছে। সেগুলোর কী হবে? অবৈধ বা অনুমোদনহীন অতিরিক্ত অটোরিকশা না থাকলে রাস্তা জ্যাম হতো না।

বয়োবৃদ্ধ মো. শাহ আলম। তিনি আগে রিক্সা চালাতেন। বয়স ও যাত্রী অভাবে জীবিকার তাগিদে অটো রিকশা চালান। তিনি বলেন, পায়ে টানা রিকশায় এখন আর যাত্রী উঠতে চায় না। তাই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋন নিয়ে একটি অটো রিকসা কিনেছেন। এমনি প্রতি মাসেই বাড়ছে অটোরিকশা। লতিবান ইজিবাইক কল্যাণ সমিতির সভাপতি অমিত চাকমা জানায়, আমাদের ৪ সমিতির বৈধ অটো ছাড়া ও অবৈধ ভাবে আরো ৫ শতাধিক অটো রিকশা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সর্বোপরি উপজেলা প্রশাশনের ভূমিকা খুবই জরুরি। তা না হলে আগামীতে সমস্যায় পরবেন পানছড়িবাসী নিজেরাই।

আগামীতে নয়, এই মুহূর্তেই এই সব অটোরিকশা নিয়ে চরম সমস্যা দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আলী আহাম্মদ বলেন, যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য যানবাহন জরুরি একথা যেমনি সত্য, তেমনি অতিরিক্ত ও ভালো না। অটোরিকশাগুলো এখন পানছড়ি র বিষফোঁড়া। এগুলোর যন্ত্রণায় রাস্তা পার হতেও আতঙ্কিত আমরা। যখন তখন উল্টে যাচ্ছে। ১২ ফেব্রুয়ারি রবিবার দুপুরে বেপরোয়া গতিতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকসা পুকুরে নেমে পড়ে। এতে কমল চরণ ত্রিপুরা নামে বয়োবৃদ্ধের ডান হাত ভেঙ্গে যায়। গত এক বছর কম হলেও ২০-৩০ জন পাবেন যারা অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। বৈধ অটো রিকশাগুলো রেখে বাকী সব তুলে দেয়া জরুরী। মোটর সাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারিনা এই অটোরিকশাগুলোর জন্য। যাত্রী নেই তারপরও ছুটছে। এই উপজেলা সড়কের নিয়ন্ত্রণ যে কার তাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজারের ও উপজেলার স্ট্যান্ড পরিকল্পিত পূনর্বিন্যাসের প্রয়োজন।

পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া আফরোজ বলেন, অটোরিকশা রেজিষ্ট্রেশনের জন্য স্টিকার দিয়েছি। এগুলোর বাইরে সবই অবৈধ। আমি প্রতিটি মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে পরিবহন চালক ও মালিক সমিতির নেতাদের এ বিষয়ে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও অটো চালকদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। নিয়ম না মানলে খুব শীঘ্রই এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App