×

জাতীয়

এখন নদী-খাল দখল করে বুক ফুলিয়ে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:১৬ পিএম

এখন নদী-খাল দখল করে বুক ফুলিয়ে

ছবি: ভোরের কাগজ

পরিবেশ ধ্বংস করে নদী, পাহাড় ও বনাঞ্চল দখল করা হতো রাতের আঁধারে। পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদ বা প্রশাসনিক পদক্ষেপের মুখে তারা জাল দলিলপত্র হাজির করত। পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজনকে ভিন্ন পন্থায় ‘ম্যানেজ’ করত। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সম্পত্তি গ্রাস করে দখলদাররা যখন অর্থ-বিত্ত ও রাজনৈতিক ক্ষমতায় প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে এখন প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়েই দখল করছে।

‘আমাদের কৃষি, প্রকৃতি, জলাভূমির সুরক্ষা এবং নদী দখলদারী প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তরা। ওয়াটার রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের সহযোগিতায় রবিবার এই আলোসভার আয়োজন করে এএলআরডি। নিজেরা করি এর সমন্বয়ক খুশি কবির এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন। তথ্যচিত্র তুলেন ধরেন এএলআরডি এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সানজিদা খান রিপা ও প্রোগ্রাম অফিসার আজিম হায়দার।

মূল প্রবন্ধে শেখ রোকন বলেন, বর্তমানে দখলদাররা পুলিশ প্রশাসন দিয়ে, ভিত্তিহীন মামলার মাধ্যমে, সামাজিকভাবে হেনস্তা ও হয়রানি করে প্রতিবাদকারী পরিবেশবাদীকে থামিয়ে দেন। পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকারীদের পুলিশ বা প্রশাসন দিয়ে হয়রানি করার ঘটনা বাড়ছে। সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে নিজেরাই পরিবেশকর্মীদের ওপর চড়াও হচ্ছে।

সত্তর ও আশির দশক থেকে নদী, পাহাড়, খেলার মাঠসহ প্রকৃতিক সম্পদ দখল করা শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, আইন ও নিয়মের অপপ্রয়োগ ও প্রয়োগকারী সংস্থার অপব্যবহারের মাধ্যমে দখলদারিত্বের ‘বৈধতা’ দেয়া হয়। যেমন, বিল-ঝিল ইজারা, চকিরপশারের মতো নদীকে অবক্ষয়িত জলাশয় দেখিয়ে ইজারা। নদী ও জলাশয় নিয়ে জনগণের মনে এমন ধারণা সৃষ্টি করা হয় দখল ও দূষণ ছাড়া এগুলোর কোন উপযোগিতা নেই। ফলে সাধারণ মানুষও পরিবেশ নিয়ে প্রতিবাদ করে না। বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে বাংলাদেশের এখন মোট জলাভূমির আয়তন ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার বা মোট আয়তনের অর্ধেকেরও বেশি ছিল। এখন যে হারে জলাভূমি দখল হচ্ছে, এগুলো কতদিন থাকবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, পরিবেশ রক্ষায় যারা কাজ করছে তাদের বাধা দেয়ার মতো মানুষ নদী রক্ষা কমিশন থেকে শুরু করে সব আফিস-আদালতে আছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরাই নদী, বন, জলাভূমি দখল করে। এগুলো আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বলতে হয়, সোনার দেশের জন্য সোনার মানুষ চাই। কিন্তু সোনার মানুষ নেই। নদী কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাজ প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা। কিন্তু তারা এগুলো রক্ষায় কাজ করছে না।

রাষ্ট্রের দর্শন পরিবেশবান্ধব নয় বলে অভিযোগ করে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসন বলেন, রাষ্ট্র উন্নয়ন বলতে বোঝায় বিল্ডিং বানানো, শিল্প কারখানা বানানো। এতে জলাভূমি, নদী, কৃষি জমি রক্ষা পেল কিনা সেটা নিয়ে ভাবে না। প্রশাসনকে বলতে দেখা যায়, বালুমহল, পাথরমহল ব্যবসায়ীদের কাছে তারা অসহায়। কিন্তু পরিবেশ কর্মীরা যখন আন্দোলন করে তখন তাদের দমনে প্রশাসন সহায় হয়, কঠোর হয়।

আলোচনায় আরো সভায় বক্তব্য রাখেন এএলআরডির সংগঠক শামসুল হুদা, হাওড় এর নির্বাহী পরিচালক সালেহীন চৌধুরী, বিআরডিএস এর নির্বাহী পরিচালক জান্নাত মরিয়ম প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App