নাটোরে বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের পাল্টা সমাবেশ এবং হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) নাটোর সদর, সিংড়া এবং নলডাঙ্গা উপজেলায় এসব ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে সকাল ১০টার দিকে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের ছাতনী দিয়াড় বটতলায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ব্যানার নিয়ে পদযাত্রা শেষে ফেরার আগেই একই জায়গায় সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকে সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কৈগ্রাম এলাকায় বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় ৭ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, নলডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় কমপক্ষে ৮ জন আহত হয়েছেন।

এছাড়া নাটোর সদর উপজেলার পীরগঞ্জ বাজারে সকালে বিএনপি বিক্ষাভ সমাবেশ করতে গেলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সেখানে সমাবেত হতে থাকেন। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঠা নিয়ে ধাওয়া দিলে পালিয়ে যান বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ সময় আহত হয়েছেন ৫ জন।

অন্যদিকে, সকাল সাড়ে ৯টার আগেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের দিয়াড় মাদরাসাঘাট বটতলায় সমবেত হন। সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় নেতারা পদযাত্রা শুরু করার আগেই সেখানে বক্তব্য দিতে শুরু করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এ সময় জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও পৌর বিএনপির সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান খান চৌধুরী বক্তব্য দেন। পরে তারা ব্যানার নিয়ে বের হলেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে বিএনপির সমাবেশের স্থানে সমাবেশ শুরু করেন।

এ সময় শান্তি সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন সরকার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দুলাল মন্ডল, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এমরান সরকার প্রমুখ।

এ বিষয়ে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করে। কেউ আহত হওয়ার বিষয় তিনি জানেন না।

অন্যদিকে নলডাঙ্গায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড সাখাওয়াত হোসেনসহ মাধনগর ইউনিয়ন ও পিপরুল ইউনিয়ন বিএনপির অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। শনিবার সকালে মাধনগর ও পিপরুল ইউনিয়ন বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে এ হামলা হয়। আহতদের নাটোর শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। কেউ আহত হয়নি। তবে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তোজনা ও ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।

অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নের কৈগ্রাম এলাকায় বিএনপি পদযাত্রায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া চৌগ্রাম ও ইটালী ইউনিয়নেও হামলার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব দাউদার মাহমুদ জানান, বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় হামলা চালানো হয়েছে। কয়েকজন নেতা-কর্মীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়ন আ. লীগের সহ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর কোনো হামলা করা হয়নি।

সিংড়া থানার পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি।

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু দাবি করেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের শান্তিপর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়ে ২০ জন নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। এ ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা ও বিচারের দাবি জানাই।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় কর্মসূচি পালন করেছে। কোনো হামলার বিষয়ে তিনি জানেন না।