×

সাহিত্য

ধুলিময় বাতাসে উপেক্ষিত মাস্ক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম

ধুলিময় বাতাসে উপেক্ষিত মাস্ক

ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারির ভয়াবহতা কমে গেলেও একেবারে শূন্য হয়ে যায়নি। এমনকি উন্নত দেশগুলোতে নতুন করে করোনা হানা দিয়েছে। সংক্রমণ যেমন বাড়ছে তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। করোনাভাইরাস নিয়ে দেশে যে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে, তা এখনো তুলে নেয়া হয়নি। মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা এখনো বহাল। তবে জনগণের অসচেতনতায় মাস্ক ব্যবহারে ব্যাপক অনিহা দেখা যাচ্ছে। বিশেষকরে ভাষার মাসে শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলার চিত্রটা উদ্বেগজনক।

এর ওপর প্রায় প্রতিদিনই ঢাকার বাতাস বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ও বিপদজনক হয়ে থাকছে। এই ভয়াবহতা থেকে বইমেলা মুক্ত নয়। মেলায় ব্যাপক জনসমাগমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশংকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বায়ুদূষণের ভয়াবহ বিপদ। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাস্ক ব্যবহার অনেকটাই জনস্বাস্থ্যবান্ধব এবং নিরাপদ। তবে মেলার গত ১০ দিন ধরে যত দর্শনার্থী পাঠক, বইপ্রেমী এসেছেন বিস্ময়করভাবে তাদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

গত শুক্রবার ছুটির দিনে জনসমাগমে যে ব্যাপকতা দেখা গেছে তাতে মাস্ক না থাকার কারণে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়েছে শতগুণ। মেলায় যে পরিমাণ ধুলোবালি উড়েছে তাতে সেই দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়া ছিল বিপজ্জনক। এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক ব্যবহার ছিল অনেকটা নিরাপদ। তবে এ ব্যাপারে কারো মধ্যে তেমন কোনো সতর্কতা দেখা যায় নি। ঢাকার বিষযুক্ত বাতাস আর বইমেলার ধুলিময় বাতাস প্রতিরোধে মাস্ক পরা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে।

অমর একুশে বইমেলা আয়োজকরা বলছেন, মেলা যেন ধুলোবালি মুক্ত থাকে, বাতাস যেন বিশুদ্ধ থাকে এজন্য পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বাতাস বেশি দূষিত হলে সে ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই।

কয়েকজন প্রকাশক ও স্টল মালিক বলেন, গত শুক্রবার ছুটির দিনে ব্যাপক জনসমাগম হয়েছিল মেলায়। এ দিনে মেলার বাতাস ধুলিময় ছিল। এতে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল স্বাস্থ্য। তবে মেলা চত্বরে পানির ছিটিয়ে ধুলোবালি ঠেকানোর চেষ্টাও ছিল।

মেলায় লেকের ধারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুভ, শোভন, হৃদি, সুদেষ্ণা, মিতিলা। তাদের কারো মুখেই ছিল না মাস্ক, তবে হাতে এবং থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রেখেছেন। তারা এক বাক্যে বললেন, মাস্ক পরা খুবই জরুরি। আসলে ঢাকার বাতাস ভয়াবহরকম দূষিত। যে বাতাস বই মেলাতেও রয়েছে। এর উপর আবার ধুলোবালি উড়ছে এখানে বেশি। তাই মনে হয় এখানকার বাতাস আরো বেশি বিপদজনক। সেজন্য মেলায় মাস্ক পরা দরকার। বাধ্যতামূলক করলে আরো ভালো।

জানতে চাইলে মেলায় আসা কবি বিমল গুহ বলেন, বইমেলায় ঢুকেই দেখি, ৯৫ শতাংশ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। অথচ স্বাস্থ্যের জন্যে কি ভয়ংকর এই ধুলো। মেলার মতো এলাকায় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে ভ্রাম্যমান টিম রাখা উচিত। এবং কয়েক দফায় পানি ছিটাতে হবে।

রুবেল আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, মাস্ক পরলে দম বন্ধ দম বন্ধ লাগে। এজন্য পরি না। তবে মাস্ক পরা উচিত।

এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, মেলায় সব বয়সীরাই আসছে। দুষিত বায়ু তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ঝুকিপূর্ণ। এ থেকে বাঁচতে মেলা চত্বরে সকাল থেকেই পানি ছিটাতে হবে। শুধু আয়োজকরাই নয়, স্টল মালিকদের এ ব্যাপারে সহযোগিতা দরকার। তা ছাড়া ব্যাপক জনসমাগমে যে ভয়াবহ ধূলো সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে বাঁচতে মাস্ক পরাটা জরুরি। প্রবেশপথেই মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু করোনাই নয়, অন্য রোগব্যাধি থেকেও মুক্ত থাকা যাবে।

ক্যাপস পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার আরো বলেন, প্রতিবছরই যখন একই স্থানে মেলার আয়োজন হচ্ছে, তাহলে এখানে স্থায়ীভাবে ঘাস লাগাতে হবে। সবুজ ঘাস রক্ষা করেই মেলার আয়োজনটা করতে হবে। এতে মেলার পরিবেশ ও বায়ু বিশুদ্ধ থাকবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য যা সহায়ক হবে।

এদিকে গতকাল শনিবার ছুটির দিন হলেও সকালের শিশু প্রহরে শিশুদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। বিকালেও বইপ্রেমীদের দেখা মেলেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App