×

মুক্তচিন্তা

ভূমিকম্পে আমরা কতটা সচেতন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৭ এএম

ভূমিকম্পে আমরা কতটা সচেতন

করোনার প্রভাব কমার আগেই ভূমিকম্প নামক প্রাণঘাতী দুর্যোগের আঘাত আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যা মানবজীবনের এক মহাসংকটাপন্ন অবস্থা। ২০২১ সালে হাইতিতে আঘাতের পর সাম্প্রতিক তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে তা শতাব্দীর ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় ধ্বংসাত্মক ঘটনা বলে স্বীকার করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। আকস্মিক এ আঘাতে ৮ হাজারের বেশি প্রাণহানি হয়েছে এবং আরো অসংখ্য প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশ-জাতি ভেদাভেদ ভুলে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে অনেক দেশ, জাতি ও সংগঠন। ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে অবকাঠামো যেভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তা লোমহর্ষক। তুরস্ক ও সিরিয়ার রাজধানী শহরের বাইরে ভূমিকম্পের আঘাতে যে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে তা রাজধানী বা বড় শহরে ঘটলে ফলাফল কিরূপ হতো? নিশ্চয়ই কয়েকগুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতো! এখন প্রশ্ন হলো, যে ঘটনা তুরস্ক আর সিরিয়ায় ঘটেছে তা বাংলাদেশে হলে কী হতো? অবকাঠামো, জনজীবন ও পরিবেশের কতখানি ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হতো? প্রশ্নের চেয়ে উত্তর অতি ভয়াবহ। দুর্যোগপ্রবণ আমাদের বাংলাদেশকে ৩টি ভূমিকম্প অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। ১. রেড জোন : দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল তথা রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ। ২. ইয়োলো জোন : দেশের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চল তথা রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের উত্তরাংশ। ৩. গ্রিন জোন : কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চল। আশঙ্কার কথা রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা যদিও ইয়োলো জোনের অন্তর্ভুক্ত তবুও অপরিকল্পিত নগরায়ণ এসব এলাকাকে মাঝারি নয় রেড জোনে পরিণত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে তুরস্ক ও সিরিয়ায় যে মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে তা ঢাকায় সংঘটিত হলে ক্ষতির মাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। আইনের অনুন্নয়ন, বাস্তবায়নে অধোগতি, আত্মসচেতনতার অভাব, লোভ-লালসা, পরিকল্পনার অভাব, কেন্দ্রীকরণ, পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণার অভাব, স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা, দখলীকরণ, বিল্ডিং কোডের অবমাননা, বৈদ্যুতিক তারের ছড়াছড়ি, উদ্ধার কাজের জন্য অপ্রতুল রাস্তা ইত্যাদি সমস্যাগুলো ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোকে সংকটজনক অবস্থার মুখোমুখি করেছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে, ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে হলে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রশমনে স্মার্ট চিন্তা ভাবনার বিকল্প নেই। প্রায় দুর্যোগের পূর্বাভাস জানা গেলেও ভূমিকম্প নামক প্রাণঘাতী দুর্যোগের সংকেত পাওয়া দুষ্কর। সে জন্য প্রথমে প্রয়োজন নাগরিক জনসচেতনতা। সেই সঙ্গে ভূমিকম্প নিয়ে আধুনিক গবেষণা, বিল্ডিং কোডের কঠোর বাস্তবায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত পরিবেশ আইন ও সচেতনতা, উদ্ধার কাজের জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, দক্ষ উদ্ধারকর্মী, জরুরি ত্রাণ তহবিল গঠন অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে, বাঁচার জন্য জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ভূমিকম্প নামক পূর্ব সংকেতহীন দুর্যোগের মোকাবিলা করার জন্য আত্মসচেতনতা, সুপরিকল্পিত উপায় অবলম্বনের বিকল্প নেই। অন্যথায় তুরস্ক ও সিরিয়ার মতো স্বজন হারানোর ব্যথায় ভুগতে হবে জাতিকে, যার ক্ষয়ক্ষতি সামলিয়ে ওঠা আমাদের জন্য দুঃসাধ্য বৈকি।

আব্দুস সালাম : সাবেক শিক্ষার্থী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App