×

জাতীয়

এবার হয় জিততে হবে নইলে মরতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৭ এএম

এবার হয় জিততে হবে নইলে মরতে হবে

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পোড়খাওয়া রাজনীতিক। দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির মহাসচিব। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাহী আদেশে মুক্ত থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে পলাতক। এ অবস্থায় দেশের ভেতরে সক্রিয় বিএনপির মূল নেতা বলতে মির্জা ফখরুলই। তার নেতৃত্বেই সরকারবিরোধী যুগপথ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি, দলের ভেতরের নানা দিক ও আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে গত সোমবার খোলামেলা কথা বলেছেন ভোরের কাগজের সঙ্গে। দলীয় চেয়ারপাসনের গুলশান অফিসে বসে এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রুমানা জামান।

ভোরের কাগজ : কারাগারে এক মাস কেমন ছিলেন? মির্জা ফখরুল : অনেকবার কারাভোগ করেছি। তবে এবার কারাগারের ‘সিনারিও’ একেবারে ভিন্ন ছিল। প্রথমে তো ডিভিশন দিচ্ছিল না। সেটা পেতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আদালতে রিট করবে জেনে তখন ডিভিশন দিয়েছে। কারাগারে আগে দুদিন পর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি ছিল; এবার ৭ দিন পরও দেখা করার সুযোগ মেলেনি। খাবার-দাবারের কথা আর না বলি। আমি বয়স্ক মানুষ, সব মিলে আমার কষ্টে কেটেছে দিনগুলো।

ভোরের কাগজ : ২৯ দলীয় জোট নিস্ত্রিয় করে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি। এই আন্দোলনে জোর দিয়ে বলার মতো নতুন কোনো শক্তি যোগ হয়েছে কিনা? মির্জা ফখরুল : আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য একটাই- গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। তার জন্য আমরা সব রাজনৈতিক শক্তির সমন্বয়ে ঐক্য চাই। এই আন্দোলনে সব রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি। এখানে আগে কিছু সমস্যা ছিল। অনেকে নানা কারণে আমাদের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে পারেনি। পরে আমরা ঐক্যফ্রন্ট করেছি- ফলে দেখেছি আরো অনেক দল বাদ পড়ে যায়। ফের সবগুলো দলকে আন্দোলনে এক করার জন্য যুগগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি। তাতে অবশ্যই আমরা ইতিবাচক ফল পাচ্ছি। এবার অনেক নতুন দল পেয়েছি। আশা করছি আরো অনেক দলই আমাদের সঙ্গে আসবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই বলে দেবে আমরা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াব।

ভোরের কাগজ : আপনাদের আগামীর আন্দোলনের ধরনটা কেমন হবে? মির্জা ফখরুল : আন্দোলন কথাটার অর্থই তো নড়াচড়া করা। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে যখন কোনো সরকার দাঁড়িয়ে যায়; তখন কেবল নড়াচড়া নয়, ভূমিকম্প হয়। সেটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফর্মে আসে। কখনো সেটা প্রতিবাদ সমাবেশ, সমাবেশ কিংবা ধর্মঘট অবরোধের মধ্য দিয়ে আসে। সুতরাং বিএনপির সব প্রস্তুতিই রয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিই বলে দেবে কোন ফর্মে সেই আন্দোলন আসবে। যখন সরকার পড়তে বাধ্য হবে; তখনই এ আন্দোলনের সমাপ্তি হবে।

ভোরের কাগজ : গুঞ্জন রয়েছে সরকারের প্রলোভন কিংবা চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত শরিক অনেক দলই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপি বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করবে? মির্জা ফখরুল : শুধু বিএনপি কেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গেও অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে। এই রকম কিছু ঝুঁকি আমাদের নিতেই হয়। সবাইকে তো নজরে রাখা সম্ভব নয়- কে কোথায় কীভাবে কার সঙ্গে সমঝোতা করছে। তবে আমাদের বিশ্বাস জনগণের যে আকাংক্সক্ষা সৃষ্টি হয়েছে; তা আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্যই বুঝতে পারবে। সেক্ষেত্রে তারা ভিন্ন কোনো অবস্থান নেবে এটা বিশ্বাস করি না। সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে এবং শেষ পর্যন্ত থাকবে এটাই প্রত্যাশা। তাছাড়া সমমনারা যেভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে, আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট।

ভোরের কাগজ : সরকারকে উদ্দেশ করে আপনার দেয়া বক্তব্যে সব সময়ই ‘ফ্যাসিবাদ’ শব্দটি উচ্চারিত হয়। সেক্ষেত্রে একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে কি হটানো সম্ভব? মির্জা ফখরুল : ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনগণের শক্তি। কঠোর কিংবা শান্তিপূর্ণ যেই ফরম্যাটেই হোক; জনগণ যখন আন্দোলনে সমর্থন দেয় তখন নিঃসন্দেহে একটি বড় শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। জনশক্তির সামনে কোনো কিছু দাঁড়াতে পারে না। ফ্যাসিবাদের ভয়ংকর রূপও পরাজিত হয়। এটা অস্বাভাবিক এবং অসম্ভব কিছু নয়। তবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে জনগণ কী আকারে রাস্তায় নেমে আসছে তার ওপর। ইতোমধ্যে তেমন প্রেক্ষাপটই তৈরি হয়ে গেছে। মানুষ সমস্ত বাধা, ফ্যাসিবাদী আক্রমণকে অতিক্রম করে স্রোতের মতো রাস্তায় নেমে আসছে। জনতার এই ঢল দিন দিন বাড়ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো সবাই একসঙ্গেই আন্দোলন করছে, এটাই বড় ইতিবাচক দিক। সেদিক থেকে আশাবাদী। প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে বিএনপিকে যেতে হচ্ছে। তাই সবাই এখন মরিয়া। এবার হয় জিততে হবে, না হয় মরতে হবে।

ভোরের কাগজ : বিএনপির চলমান আন্দোলনে কি কিছুটা ভাটা পড়েছে? মির্জা ফখরুল : ব্যাপারটি ঠিক তেমন নয়। এখানে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার রয়েছে। ১৭ জন নেতাকর্মী এখনো পর্যন্ত চলমান আন্দোলনে শহীদ হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের কারাগাারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ফলে মাঠের নেতাকর্মীরা অনেকটা চাপ অনুভব করছিল। তবে এখন নতুন কর্মসূচিগুলোতে কিন্তু নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে।

ভোরের কাগজ : আগামী নভেম্বর নাগাদ যদি নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে সেক্ষেত্রে বিএনপির সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন কবে? মির্জা ফখরুল : আন্দোলন কখন কোন রূপ নেবে, কোন পথ অতিক্রম করবে- সেটা পরিস্থিতি বলে দেবে। প্রতিটি আন্দোলনের রোডম্যাপ থাকে; কিন্তু আগে থেকেই বলে দেয়া যায় না, এর ধারা কখন কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে। এটি একটি ‘ইনসিডেন্ট’ থেকে বাড়তে থাকে। তাছাড়া আগামীকাল থেকে কী ঘটবে, না ঘটবে- সেটা তো আজই বলা যাবে না।

ভোরের কাগজ : সরকার ইভিএমে ভোট থেকে সরে এসেছে। এর কারণ কি বিএনপির আন্দোলনের চাপ? নাকি অন্য কিছু? মির্জা ফখরুল : ইভিএম প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করবে কী দিয়ে? এতগুলো নষ্ট ইভিএম মেশিন সারাবে কীভাবে? নতুন মেশিন কেনারই বা টাকা কই? রাষ্ট্রীয় কোষাগার তো খালি। উন্নয়নের নামে সব টাকা সরকারের হর্তাকর্তাদের পকেটে।

ভোরের কাগজ : নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের পর বিএনপির নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি কী? নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কিনা? মির্জা ফখরুল : বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল সব সময় নির্বাচন করার জন্য তৈরি থাকে। বিএনপির একেকটি আসনে ৭ থেকে ৯ জন করে প্রার্থী আছে। এক্ষেত্রে মামলা কোনো বাধা নয়। সরকার যদি সব দাবি-দাওয়া মেনে নেয় এবং বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়- সেক্ষেত্রে তো অবশ্যই মামলাগুলোরও সুরাহা হবে।

ভোরের কাগজ : আলোচনা রয়েছে বিএনপির ভেতরে একটি পক্ষ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী এবং তারা ভেতরে ভেতরে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করছে। কী বলবেন? মির্জা ফখরুল : এই ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে সরকারের লোকেরাই। বিএনপি একেবারেই ইউনাইটেড আছে। এমনকি এখানে কোনো ব্যক্তি নেই, যারা দলের এবং জনগণের আকাক্সক্ষার বাইরে যাবে। এ ধরনের গুঞ্জন থাকতেই পারে, কিন্তু এর কোনো বাস্তবতা নেই। আমরা তো এখন পর্যন্ত দলে (ভাঙনের) কোনো আলামত খুঁজে পাইনি। এ নিয়ে আমরা চিন্তিতও নই। তাছাড়া আগেও বহুবার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে, বিএনপির দুঃসময় এলে ভাঙার চেষ্টা বেশি হয়, নির্বাচন এলে কিছু সুবিধাবাদীকে সরকারের পক্ষ থেকে টোপ দিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এগুলো ধোপে টেকে না।

ভোরের কাগজ : বিএনপিতে চাউর আছে দল ক্ষমতায় যাওয়ার পথে প্রধান অন্তরায় তারেক রহমান। অনেকে তার নেতৃত্ব মানতেও চায় না। আপনার কী মনে হয়? মির্জা ফখরুল : তারেক রহমানের নেতৃত্বই এখন প্রতিষ্ঠিত বিএনপিতে। তার নেতৃত্বে ‘ফুল কন্ট্রোল ইন দ্য পাটি’। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। তিনি সার্বক্ষণিকভাবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং এত গ্রাসরুট লেভেলে গিয়ে যোগাযোগ রাখেন যেটা অন্যদের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে দলের ওপর যে তার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব সেটা নেতা হিসেবে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত। বিএনপির প্রতিপক্ষরাই তারেক রহমানকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা মনে করে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে যদি প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়; তবে তাদের রাজনীতির জন্য সুবিধা হয়।

ভোরের কাগজ : বিএনপির নেতৃত্ব সংকট নিয়ে বহুবার বলেছেন। নতুন করে কি কিছু বলার আছে? মির্জা ফখরুল : বারবার একই বিষয় ঘুরেফিরে আসে আওয়ামী লীগের জন্য। বিএনপি নেতৃত্বশূন্য হলে ১৫ বছর ধরে টিকে আছে কেমন করে? একজন শীর্ষ নেতৃত্ব গৃহবন্দি, অন্যজন দেশের বাইরে। এমন অবস্থায় একটা লোকও তো বিএনপি ছেড়ে যায়নি। কই কোথাও তো কিছুই আটকায়নি। বরং বিএনপি দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হচ্ছে। তাহলে বিএনপির নেতৃত্বের অভাবটা কোথায়? আমাদের নেতা খালেদা জিয়া এবং তার অবর্তমানে এখন দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান। এই ইস্যুতে পার্টিতে কোনো বিভেদ নেই। কেউ কোনো দ্বিধায়ও নেই। এই বিষয়ে বারবার স্পষ্ট করেছি, বিএনপিতে কোনো নেতৃত্ব সংকট নেই। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়া হবেন প্রধানমন্ত্রী। তার অবর্তমানে তারেক রহমান।

ভোরের কাগজ : আগামী নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকা কী? তাদের তোড়জোড় বিএনপির জন্য কোনো আশাব্যঞ্জক কিছু? মির্জা ফখরুল : পশ্চিমা বিশ্ব সিরিয়াসলি কনসার্ন বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে। নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক বিশ্ব চাইবে বাংলাদেশে স্বচ্ছ নির্বাচন হোক। নির্বাচন বিষয়ে এবার তাদের অভিমত একেবারেই স্পষ্ট। ২০১৪ নির্বাচনকে ঘিরে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত তারানকোর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি সবার জানা আছে। আওয়ামী লীগ মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা দিয়েও তখন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আর বিএনপি আন্তর্জাতিক বিশ্বের ওপর নয়; জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। তাই জনগণের শক্তি নিয়েই বিএনপি এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বিশ্বের ভূমিকা বা কনসার্ন যদি কাজ করে সেটা আমাদের জন্য পজিটিভ হবে।

ভোরের কাগজ : প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক এখন কেমন? মির্জা ফখরুল : একটি দেশের বিরোধী দলের সঙ্গে অন্য একটি দেশের সরকারের যেমন সম্পর্ক হওয়া উচিত বিএনপির সঙ্গে ভারতের ঠিক তেমনই সম্পর্ক। অর্থাৎ কারো সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। কখনোই ছিল না। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেই আমরা চলি।

ভোরের কাগজ : রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ভারত আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে নেই। দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে প্রতিবেশী একটি দেশের সমর্থন কি খুব বেশি জরুরি? মির্জা ফখরুল : এটা অনেকই মনে করেন। কিন্তু আমরা এগুলো পাত্তা দিই না। বিএনপি জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করে। জনগণ যদি চায় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাবে, তবে সেটাই যথেষ্ট। তাছাড়া ভারতও চায় এখানে একটা নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন হোক। এটা যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশ চাইবে। তারাও খুব পরিষ্কার করে বলে, এখানে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া উচিত। এটা বলাই তো স্বাভাবিক, যেহেতু তারা একটি গণতান্ত্রিক দেশ।

ভোরের কাগজ : বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে সরকারে পাল্টা কর্মসূচির বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? মির্জা ফখরুল : মিডিয়ায় কাভারেজ পেতে প্রতিপক্ষ মরিয়া। তাই তো বিএনপির কর্মসূচিতে পাহারা দেয়ার অহেতুক বাহানা আওয়ামী লীগে। তাছাড়া তাদের চরিত্র সন্ত্রাসী চরিত্র। তবে সরকার যে কতটা ভয়ে আছে সেটা তাদের সাম্প্রতিক আচরণগুলো স্পষ্ট করে।

ভোরের কাগজ : রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী যদি সংলাপের আমন্ত্রণ দেন, যাবেন? মির্জা ফখরুল : ‘নো, নেভার’। প্রশ্নই ওঠে না। দাবি আদায়ের আগে পর্দার আড়ালে কিংবা প্রকাশ্যে সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না।

ভোরের কাগজ : বিএনপির কমিটি বাণিজ্য নিয়ে অসন্তোষের খবর এখন গণমাধ্যমের খোরাক বলা যায়। কী বলবেন? মির্জা ফখরুল : বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলে হাজার হাজার নেতাকর্মী। সবাই বড় পদ পেতে চায়। দায়িত্ব হচ্ছে এই ১৫১ জনকে আমাদের মূল ধারায় নিয়ে এসে কাজ করানো। সেই কঠিন কাজটাই এখন হচ্ছে। এখান থেকে ত্যাগীদের বেছে নিতে একটি কমিটি দেয়া হলে স্বাভাবিকভাবে যোগ্যরা অনেকেই বাদ পড়তে পারে। সেটা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হবে। এটাকে সিরিয়াসভাবে নেয়ার কিছুই নেই।

ভোরের কাগজ : ৫০-৬০টি আসন দিয়ে বিএনপিকে বিরোধী দলে বসানোর পরিকল্পনা চলছে। আপনাদের সিনিয়র অনেকেরই তাতে সায় আছে। সত্যি নাকি? মির্জা ফখরুল: ‘দিস ইজ টোটালি বোগাস’।

ভোরের কাগজ : বিএনপির দাবি খালেদা জিয়া গৃহবন্দি আছেন। অথচ সরকার পক্ষ বলছে তিনি রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়েছেন। বিষয়টি কতটা সত্যি? মির্জা ফখরুল : ‘বাজে কথা, মিথ্যা কথা, বানোয়াট কথা’। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আওয়ামী লীগের এক নেতা পার্লামেন্টে একথা বলেছেন। হয়তো তিনি নিজেকে দলের কাছে একটু বেশিই গ্রহণযোগ্য করতে আগ বাড়িয়ে এমন মিথ্যাচার করেছেন। খালেদা জিয়ার মুচলেকা দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

ভোরের কাগজ : বিএনপিকে নিয়ে যারা ভাবেন বা ভালো চান তারা অনেকেই বলেন, বিএনপি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চিন্তা, আদর্শ থেকে সরে গেছে। বিষয়টি কতটা যুক্তিযুক্ত? মির্জা ফখরুল : ‘নট অ্যাট অল’। বিএনপি সব সময়ই জিয়াউর রহমানের আদর্শধারণ করেই রাজনীতিতে টিকে আছে। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতাও ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। তার সৃষ্টি করা দলে তার আদর্শ উপেক্ষা করার সুযোগই নেই। তবে ‘প্র্যাকটিসের’ মধ্য দিয়ে গেলে দেখা যায়; অনেক সময় বিএনপির কোনো নেতা হয়তো বা এমন দুয়েকটা কাজ করে বসেন যেটা জিয়াউর রহমানের আদর্শের সঙ্গে মেলে না। সেটা একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু ‘অল পাটির্’ জিয়াউর রহমানের সততা, তার প্রতি ভালোবাসা, উন্নয়ন অগ্রগতি, তার বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে রাজনীতি তার সঙ্গে জড়িত। এমনকি কয়েক দিন আগে বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের যে রূপরেখা ঘোষণা করল তার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের ১৯ দফার পুরোপুরি মিল আছে।

ভোরের কাগজ : আপনি তো বিএনপির চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সমন্বয় করে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালনে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় কিনা? মির্জা ফখরুল : চ্যালেঞ্জ প্রতিটি কাজেই থাকে। টেলিফোনে বা ভার্চুয়ালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারি। অন্যদিকে দলের চেয়ারপারসন রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও সার্বক্ষণিক দেশ ও দলের খোঁজ রাখেন। আমি মাঝেমধ্যে গিয়ে কথা বলি। এভাবেই সমন্বয় হয়ে যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে শতভাগ আস্থাশীল এবং আনুগত্য নিয়ে কাজ করি। নিজের যে দায়িত্ব পালন করি তা উপভোগ করি।

ভোরের কাগজ : সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে বিশ্ববাসী বাহবা দিচ্ছে। বিএনপি কীভাবে এড়িয়ে যাবে? মির্জা ফখরুল : মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে আর আপনি উন্নয়ন দেখাচ্ছেন। কী লাভ? আপনি যদি মানুষের মৌলিক বিষয়গুলো, তার রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে না পারেন, তার অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে না পারেন, শুধু উড়ালসেতু, মেট্রোরেল আর পদ্মা সেতু দিয়ে শেষ রক্ষা হবে না।

ভোরের কাগজ : এতক্ষণ সময় দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। মির্জা ফখরুল : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App