×

খেলা

সাবেকদের ভাবনায় হাথুরুর দ্বিতীয় ইনিংস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫৩ পিএম

সাবেকদের ভাবনায় হাথুরুর দ্বিতীয় ইনিংস

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে

বাংলাদেশ জাতীয় দলের পরবর্তী সূচি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে ৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। ইংল্যান্ড দল আসবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। সাদা বলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা বাংলাদেশে পা রাখার দিন পাঁচেক আগেই দেশে চলে আসবেন হাথুরুসিংহে। ২০১৪ থেকে ২০১৭, এই তিন বছর বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ ছিলেন হাথুরুসিংহে। তার সময়ে বাংলাদেশ দেশের মাটিতে টেস্টে হারায় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে। ওয়ানডে সিরিজ জেতে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলে কোয়ার্টার ফাইনালে আর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে। তবে এমন সাফল্যের পাশাপাশি সমালোচনাও ছিল তাকে ঘিরে। মাশরাফি বিন মতুর্জাকে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ দেয়া, শততম টেস্টের আগে মাহমুদউল্লাহকে শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফেরত পাঠাতে চাওয়াসহ মুমিনুল হককে টেস্ট দল থেকে বাদ দেয়ার কঠিন সিদ্ধান্তগুলো তাকে অপ্রিয় করে তুলেছিল ড্রেসিং রুমে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় অধ্যায়ে হাথুরুসিংহে হয়তো অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিখেই দায়িত্ব পালন করবেন। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করেই বলে দেয়া যায়, দল নির্বাচনে থাকবে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সেই সঙ্গে দলের শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের বেলায় কঠোর অবস্থান নেবেন হাথুরুসিংহে। তাতে করে হয়তো বাংলাদেশের কোনো কোনো সিনিয়র ক্রিকেটারকে দলে জায়গা হারাতে হতে পারে, নাও খেলা হতে পারে বিশ্বকাপ।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, একজন প্রধান কোচ যে দল হাতে পাবেন, সেই দল নিয়েই কাজ করবেন। কিন্তু চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এর আগে বাংলাদেশের কোচ থাকার সময় যারা সেরা ক্রিকেটার ছিলেন, তারা এখন বিদায়ের পথে। নতুন দল নিয়ে তিনি কতটুকু সাফল্য এনে দিতে পারবেন, সে প্রশ্ন থাকেই। আমার দৃষ্টিতে, যে কোচই আসুক, কাজটা কঠিন।

হাথুরু সস্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক বলেন, বিসিবির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে হাথুরুর কাছ থেকে সর্বোচ্চটা আদায় করা। কারণ, এর আগে আমরা দেখেছি, তিনি অন্যের কথায় চলার লোক নন। তাকে কোচ হিসেবে এনে বিসিবি হয়তো আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে যে, তারা একজন কোচ পেয়েছে, কিন্তু আমরা তো জানি, বিতর্কিতভাবে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার পর হাথুরুসিংহে কোথাও ভালো কিছু করতে পারেননি। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশকে তিনি যেখানে রেখে গেছিলেন, সেখান থেকে আরো ভালো জায়গায় নিতে পারেন কিনা।

বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, তারা একজন প্রধান সহকারী কোচ নিয়োগের কথা ভাবছেন। স্থানীয় কোচদের মধ্য থেকেই কাউকে হাথুরুর সহকারী নিয়োগের চিন্তাভাবনা বিসিবির।

বিসিবি সভাপতির এমন বক্তব্যের পর থেকেই ক্রিকেটপাড়ায় কৌতূহলী প্রশ্ন- কে হবেন টাইগারদের প্রধান সহকারী কোচ? এ মুহূর্তে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকাদের মধ্য থেকে কেউ কি হবেন হাথুরুসিংহের ডেপুটি? খালেদ মাহমুদ সুজন, মোহাম্মদ সালাউদ্দীন, সোহেল ইসলাম কিংবা মিজানুর রহমান বাবুলদের মধ্যে কাউকে কি বেছে নেবে বিসিবি? দেশের অন্যতম সেরা কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন জানিয়েছেন, জাতীয় দলের প্রধান সহকারী কোচের দায়িত্ব পালনে ইচ্ছুক নন। প্রস্তাব পেলেও তিনি তা গ্রহণ করবেন না।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সিলেট স্ট্রাইকার্সের প্রধান কোচ রাজিন সালেহ জানিয়েছেন, সুযোগ পেলে তিনি চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সহকারী কোচ হতে রাজি আছেন। সিলেট স্ট্রাইকার্স সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করে রয়েছে শীর্ষে দুইয়ে থাকার দৌড়ে। রাজিন বিপিএলে সিলেটকে চ্যাম্পিয়ন করে নিজের সামর্থ্যরে জানান দিতে চান। সামনে জাতীয় দলের সহকারী কিংবা বোলিং বা ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পেলে খুশি হবেন। তিনি বলেন, ‘আমি জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। সহকারী কিংবা ব্যাটিং কোচ হলে তো কথাই নেই। ফিল্ডিং কোচের অফার পেলেও রাজি আছি।’

জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, ‘আমরা সব সময় শুনি তাকে কড়া হেডমাস্টার বলা হয়, কিন্তু ওই ধরনের কড়া সে নয়। ও আসলে কারো পেছনে কথা না বলে সামনে বলে। এটাই তো ভালো মানুষের লক্ষণ। হাথুরু ভালো মানুষ, যা বলে সামনেই বলে, পেছনে কিছু বলে না। পেছনে না বলে একটা খেলোয়াড়ের যদি সামনে বলে, তোমার থেকে এটা চাই বা তোমাকে এটা করতে হবে, এটাতে আমি খারাপ তো দেখি না। এতে সে কড়া হেডমাস্টার হলেও তাই।’

সুজন যোগ করেন, ‘কিন্তু আমি মনে করি অনেক কোচের সঙ্গে কাজ করেছি, বাংলাদেশে যারা সামনে একরকম পেছনে অন্যরকম কথা বলেন। আমার হাথুরুকে দারুণ লাগে। ও সাকিব বা তামিম অবশ্যই তাদের সম্মান করে। বড় খেলোয়াড় বা সিনিয়র খেলোয়াড়, কিন্তু সে টিমের মধ্যে ডেফিনেশন তৈরি করে না। সে মনে করে টিমে একজন জুনিয়র যে সম্মান পাবে সিনিয়র সেটাই পাবে।’

হাথুরুর সঙ্গে ইতোমধ্যে সুজনের কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাথুরুর সঙ্গে আমার একটা ভালো সম্পর্ক ছিল, আমার সঙ্গে ইতোমধ্যে ফোনে কথা হয়েছে। এ ব্যাপারটা নিয়ে বেশ বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। সে এ বিষয়ে খুবই পজিটিভ।’

ফরচুন বরিশালের হেড কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যুগে এখন ভালো কোচ পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। যারা ভালো, একনামে জানি-চিনি বা যাদের চাই, তারা হয়তো খুব ব্যয়বহুল হবেন বা রাজিই হবেন না দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে। বিসিবির হাতে হয়তো বেছে নেয়ার তেমন সুযোগ ছিল না।

সেদিক দিয়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সহজ পছন্দ। কারণ, তিনি আমাদের এখানে কাজ করে গেছেন, তার সময়ে আমরা কিছু সাফল্যও পেয়েছি। তবে একটা কথা প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে দেখি, হাথুরুসিংহে নাকি ‘হার্ড টাস্ক মাস্টার’। তাহলে এ কারণেই কি তাকে নেয়া হচ্ছে?

আমার মনে হয় না এটি যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে। এটা একটা জাতীয় দল, এখানে সবাই পরিণত। তবে হাথুরুসিংহে অভিজ্ঞ, উপমহাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে তার ধারণা আছে। বাংলাদেশ সম্পর্কেও পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় এখন নিশ্চয়ই তিনি কোচ হিসেবে আরো পরিণত হবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App