×

মুক্তচিন্তা

বইমেলার বহুমাত্রিকতা প্রসারিত হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:১৭ এএম

বইমেলার বহুমাত্রিকতা প্রসারিত হোক
বই মানুষের মনকে করে পরিশুদ্ধ, জ্ঞানকে করে সুদূরপ্রসারিত। ইন্টারনেটের যুুগেও তবু মলাট বন্দি বইয়ের চাহিদার কোনো কমতি নেই। যুগ যুগ ধরে বই ও জ্ঞানের পারস্পরিক প্রশ্নাতীত সংশ্লিষ্টতাকে অস্বীকার করার তো কোনোরকম সুযোগ নেই। শিক্ষা, সভ্যতা ও জীবনমান আধুনিকায়নের প্রধান মাধ্যম হিসেবে বই সবচেয়ে এগিয়ে। তাই প্রাচীনকাল থেকেই সভ্য সমাজ বিনির্মাণ ও জ্ঞানের আলোকে ছড়িয়ে দিতে বইকে প্রধান বাহক হিসেবে ধরা হয়েছে। বই-ই তাই মানুষের সৃষ্টিশীল মানসিকতা গড়ার জন্য মননে প্রকরণে একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজমানের প্রধান বাতিঘর। আর এই বই বা বইয়ের ভাণ্ডারকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও বইমেলার আয়োজন করা হয়। আমাদের দেশেও শিক্ষিত জাতি গোষ্ঠীর প্রচেষ্টায় বই মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য বইমেলার আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই স্বল্প পরিসরে এই মেলার আয়োজন করা হলেও বর্তমানে এই মেলা রূপ নিয়েছে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বৃহৎ সংস্কৃতির অন্যতম উৎসবে। যা অমর একুশে বইমেলা বা গ্রন্থমেলা নামে পরিচিত। বইমেলায় কেবল বইয়ের কেনাবেচার জায়গায় নয়। বাঙালিদের জন্য বইমেলা পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের এক মিলনমেলার উৎসবে রূপ নেয়। লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের মেলবন্ধন হিসেবে বইমেলা আমাদের দেশের জন্য রূপান্তরিত হয় এক অনন্যমাত্রার উৎসবের সমাহার। এরই ধারাবাহিকতায় ‘পড়ো বই, গড়ো দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ শুরু হয়েছে। আর এই মেলা চলবে আমাদের আবেগের মাস ভাষার মাস পুরো ফেব্রুয়ারিজুড়ে। যদিও করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বইমেলা জমে ওঠেনি। করোনা সংকটের কারণে গত বছর বইমেলা শুরুও হয়েছিল দেরিতে এবং বিক্রিও হয়েছিল তুলনামূলক অনেক কম। তবু গত বছর সাড়ে ৫২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। গত বছর প্রায় সাড়ে ৩ সহস্রাধিক নতুন বই মেলায় এলেও মাত্র ৯০৯টি বইকে মানসম্মত বই হিসেবে পরিগণিত করা হয়। তবে এ বছরের বইমেলা গত বছরের চাইতে বৃহৎ পরিসরে সাজানো হয়েছে। স্টল বরাদ্দ হয়েছে গত বছরের তুলনায় বেশি। এবার প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৮টি। যা গত বছর ছিল ৩৫টি। এ বছর বইমেলায় অংশ নিচ্ছে ৬০১টি প্রতিষ্ঠান, যা গত বছর ছিল ৫৩৪টি। এবারও শিশুদের জন্য বইমেলায় নির্দিষ্ট স্থানটি হয়েছে বৃহৎ কলবরে। মেট্রোরেলের কারণে বইমেলার স্থানে খানিকটা পরিবর্তন এলেও আয়োজক সংশ্লিষ্টরা বলছেন এবারের বইমেলার স্থান বিন্যাস করা হয়েছে জ্যামিতিকভাবে, যাতে সহজেই স্টলগুলে খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া এবারের বইমেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে হবে বইমেলা। শিশু চত্বরটি এবার মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে রাখা হয়েছে। এবারের বইমেলায় পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের আগ্রহ ভিন্ন আমেজের। সারাবিশ্বে এখন অনেক আন্তর্জাতিক বইমেলা হয়ে থাকে। সেখানে লোকজনের ভিড়ও দেখার মতো। এর মধ্যে অন্যতম বইমেলাগুলো হলো- লন্ডন বইমেলা, আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা, নয়াদিল্লি বইমেলা, কায়রো বইমেলা, হংকং বইমেলা, বুক এক্সপো আমেরিকা (বিইএ), আবুধাবি বইমেলা ইত্যাদি। সর্বোপরি সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে এবারের বইমেলা লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে জমে উঠবে এবং রূপ নেবে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম বৃহৎ উৎসবে। একই সঙ্গে ক্রমান্বয়ে আমাদের তথা বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব বইমেলা একদিন বহুল পরিচিত ও প্রসারিত হয়ে আন্তর্জাতিক বইমেলায় রূপ নেবে সেই প্রত্যাশা করি। নুরুন্নবী খোকন : সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী, মেহেরপুর। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App