×

সম্পাদকীয়

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিমা ভাঙচুর : দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:১৭ এএম

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় গত শনিবার রাতে ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন এ দেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রতিমা ভাঙচুর এবং সংখ্যালঘুদের ওপর একের পর এক নির্যাতন ও নিপীড়ন চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো এসব ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেয়া হলেও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় ন্যক্কারজনক এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে হচ্ছে। এছাড়া ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের বাড়িঘর ও বৌদ্ধবিহারে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হয়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে সুনামগঞ্জেও এমন ঘটনা ঘটে। গত বছর জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ৩৫টি সরস্বতী প্রতিমা ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর ২৫ আগস্ট মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। দেশে একের পর এক এমন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। দোষীদের আইনের আওতায় আনতে না পারা উদ্বেগজনক। বিচার প্রক্রিয়ার শ্লথগতি মোটেও কাম্য নয়। আমরা দেখেছি, ঘটনার পরপর তাৎক্ষণিকভাবে তোড়জোড় দেখা গেলেও দিনে দিনে তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা, ভয়ভীতির কারণে সাক্ষীদের অনাগ্রহ ও নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা কারণে বছরের পর বছর এসব মামলার বিচার প্রক্রিয়া থমকে থাকে। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে। অপরাধীদের বিচার না হওয়ার দায় প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। সর্বশেষ ঘটে যাওয়া ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিমা ভাঙচুরের এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আশা করছি। দোষীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। দোষীরা যাতে কোনোভাবেই ছাড় না পায়, সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। এদের মূল লক্ষ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা। সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি ধ্বংস করতে চায় মৌলবাদী জনগোষ্ঠী। আসলে মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে ফায়দা লুটছে কেউ কেউ। এ প্রবণতা বিপজ্জনক। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পকে প্রতিহত না করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের শৈথিল্য এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতার দায় রয়েছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতির প্রয়োগ না থাকা, আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া এবং আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে না পারলে বাংলাদেশে মিলেমিশে বসবাসের যে সংস্কৃতি তা বাধাগ্রস্ত হবে এবং মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা হারাবে। আমরা চাই, এ ধরনের ঘটনার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করে অবিলম্বে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি সতর্কতার বিকল্প নেই। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখতে সরকার ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App