×

জাতীয়

বইয়ের দামে আটকে যাচ্ছে চোখ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২০ এএম

বইয়ের দামে আটকে যাচ্ছে চোখ

ছবি: সংগৃহীত

অমর একুশে বইমেলায় পছন্দের বই কিনতে রাজধানীর মিরপুর থেকে এসেছেন তাহমিনা আকতার। বেশ কয়েকটি স্টলে ঘুরে পছন্দের বইও পেয়েছেন। তবে কিনতে গিয়ে খানিকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন তিনি। বইয়ের দাম তার নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে অনেকটাই বেশি। কী আর করা পছন্দের বইয়ের কয়েকটি কিনে বাকিগুলো রেখে দিলেন। পরে এসে কিনেতে চান। তাহমিনা আরো বলেন, ভেবেছিলাম পছন্দের সব বই কিনব কিন্তু বাজেটে কুলিয়ে উঠতে পারলাম না। গতবারের চেয়ে এবার বইয়ের দাম অনেক বেশি।

রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মেলায় এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শামীম হোসেন। তিনিও বললেন, বইয়ের দাম অনেক বেশি হয়ে গেছে। এমনিতেই তো আমার মতো শিক্ষার্থীদের বই কেনার বাজেট কম থাকে। তার ওপর দাম বাড়লে তো বই কেনাই কঠিন হয়ে যায়। মেলায় এসেছি পছন্দের বইগুলোর দাম দেখে বাজেট তৈরি করতে। পরে সাধ্য অনুযায়ী কিনব। তবে এবার দাম বেশিই মনে হচ্ছে।

গতকাল সোমবার মেলার পঞ্চম দিনে বইয়ের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে পাঠকরা এমন বিড়ম্বনার কথা জানালেন। একই রকম কথা বললেন পুরান ঢাকা থেকে আসা চাকরিজীবী সোহেল আরমান। অফিস থেকে সরাসরি তিনি মেলায় এসেছেন। বললেন, সবকিছুর দামই তো বেড়েছে, বইয়ের দাম আবার বাদ থাকবে কেন। তবে সংসারের সবকিছু সামাল দিয়ে বই কেনার মতো টাকা হাতে তো থাকছে না। তারপরও নিজের আর পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রতি বছর বই কিনতেই হয়। এবারো কিনব, তবে সাধ্যের বাইরে হয়তো পারব না। মনে হচ্ছে এবার আগের মতো বেশি বই কেনা সম্ভব হবে না।

কয়েকটি স্টলের বিপণনকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, বই কিনতে এসে বইপ্রেমী অনেকের চোখ আটকে যাচ্ছে দামে। বিক্রেতারা বলছেন, পাঠকরা আরো কম দামে বই কিনতে চান। অনেকেই কমিশন বেশি দিতে বলেন- কিন্তু আমরা তো দিতে পারি না। কারণ স্টল মালিকরা কমিশন বেঁধে দিয়েছেন। এর বাইরে তো যেতে পারি না। খলিলুর নামের এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, দাম বেশি হওয়ার কারণে ক্রেতারা

বই কম কিনছেন। অনেকেই বইয়ের দাম বেশি দেখে ফিরে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণরা বই উল্টে পাল্টে দেখে চলে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে খুব কমই বই কিনছেন।

জানতে চাইলে কয়েকজন স্টল মালিক বলেন, পাঠক আর বইপ্রেমীরা বেশি করে বই যেন কিনতে পারেন সে ব্যাপারে প্রতিবারই আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি। তবে এবার উল্টো ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশনা উপকরণের দাম এত বেশি বেড়েছে যে বই প্রকাশ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। যেমন কাগজের দাম বেড়েছে কয়েক দফায়। যে কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বইয়ের দাম কোনোভাবেই কমানো যায়নি। প্রকাশকরা বলছেন, এমনিতেই গত প্রায় তিন বছরে করোনা মহামারির ধাক্কায় প্রকাশনা খাতে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। এবার বইয়ের দাম কম রাখলে লাভ তো দূরের কথা ফের লোকসান গুণতে হবে।

লেখকরা বলেন, আমরা চাই পাঠকের হাতে আমাদের বইগুলো উঠুক। তারা বেশি করে বই কিনলে লেখক-প্রকাশক সবারই ভালো। তবে এবার কাগজসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকাশকরা সত্যিই বিপাকে পড়েছেন। আমাদেরও আশঙ্কা এবারের মেলায় বই বিক্রি নিয়ে। লেখক কাশেম খালিল বলেন, অনেক লেখক প্রস্তুতি নিয়েও শেষ অবধি বই বের করতে পারেননি। প্রকাশনা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রকাশকদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে। তবে এতে শুধু লেখকরাই নন, পাঠকও বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক নতুন লেখকের বই আসেনি মেলায়। এতে দেশের শিল্প-সাংস্কৃতির প্রবাহমান ধারাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমেদ বলেন, উপকরণের দাম বাড়ার কারণে বইয়ের দাম বেড়ে গেছে। বেচাকেনা বেশি না হলে আগের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা যাবে না। মেলাটা যদি আগের পূর্ণাঙ্গ মেলার রূপে ফিরে আসে তাহলে ভালো হবে।

মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : সমরজিৎ রায় চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহিদ মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মইনুদ্দীন খালেদ এবং মুস্তাফা জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী হাতে লেখা বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম নকশাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান লোগোসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের লোগো তৈরি করেছেন। তিনি ছবি আঁকতেন আমাদের দেশের রূপবৈচিত্র্যকে বিষয়বস্তু করে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও ছবি এঁকেছেন। এছাড়া নিসর্গ ও মানুষ ছিল তার প্রিয় বিষয়। গ্রামীণ দৃশ্যাবলি, সেই সঙ্গে তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্যাবলি তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। শিল্পী সমরজিৎ তার জীবনব্যাপী প্রগতিশীল আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করেছেন। শান্তির অন্বেষায় তার চিত্রপটে রং, রেখা, রূপ- সব একাকার হয়ে আছে।

আলোচকরা বলেন, সমরজিৎ রায় চৌধুরী একাধারে একজন প্রতিভাবান শিল্পী, অভিভাবকসূলভ শিক্ষক এবং বন্ধুবৎসল একজন মানুষ ছিলেন। পরম্পরানির্ভর শিল্পী হলেও তার চিত্রভাষায় আধুনিকতার ছোঁয়াও ছিল স্পষ্ট। শিল্প-সৃষ্টির ক্ষেত্রে আনন্দ ও লাবণ্য তৈরিতে তিনি বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন। পরিচিত ও অপরিচিত দুই ধরনের মোটিফের ব্যবহার তার চিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতি, মানুষ আর লাল-সবুজের বিন্যাস তার চিত্রকে বিশিষ্টতা দান করেছে। সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী হাশেম খান বলেন, শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ছিলেন নিষ্ঠাবান একজন শিক্ষক। দৃঢ় মনোবলের অধিকারী এই শিল্পী চাটুকারিতাকে কখনোই প্রশ্রয় দেননি। বরং ভালোবাসা দিয়েই সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মন জয় করেছিলেন। তিনি তার নিজের চিত্রভাষা নির্মাণ করতে পেরেছিলেন।

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কুদরত-ই-হুদা, বায়তুল্লাহ্ কাদেরী, আবু সাঈদ তুলু, ফরিদুর রহমান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আলতাফ হোসেন, আসলাম সানী এবং মারুফ রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, ইকবাল খোরশেদ এবং কাজী বুশরা আহমেদ তিথি। এছাড়া ছিল ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন’ এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, সালাউদ্দিন আহমদ, সুজিত মোস্তফা, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী এবং প্রিয়াংকা গোপ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App