×

সাহিত্য

বইমেলার প্রবেশপথে ভোগান্তির শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩১ পিএম

করোনা মহামারির বন্ধ্যাকাল কাটিয়ে প্রাণের বাঁধভাঙা আবেগে আয়োজিত এবারের অমর একুশে বইমেলা ধীরে ধীরে জমে উঠতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহও পার হয়নি মেলার। এরই মধ্যে টানা ছুটির দুদিন পার করেছে বইমেলা। যেদিনগুলোতে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। পাঠক বইপ্রেমী আর দর্শনার্থীদের যথারীতি আবেগ আর উচ্ছ্বাসের যেন কমতি নেই। তবে অমর একুশে বইমেলাকে যতই প্রাণের বলি না কেন এই মেলার কারণেই প্রাণ হারাতে হয়েছে প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ আর বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়কে। যে দুঃসহ স্মৃতি কেউ ভুলতে পারেনি। আজও ভেতরটা তোলপাড় করে দেয়।

বিশেষ করে টিএসসির মোড়ের সেই ঘটনাস্থল এখনও সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়। শিউরে উঠতে হয়। প্রাণের মেলার সেই আবেগ যেন হঠাৎ থমকে যায়। মেলার আয়োজনে সতর্কতা, লেখকদের বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়টি অনেককেই ভাবায়। এবার অভিযোগ উঠেছে মেলার প্রবেশপথে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে টিএসসির সেই ঘটনাস্থলের কাছেই সংকীর্ণ প্রবেশপথ রাখা হয়েছে। যে পথে প্রবেশ করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে অনেককেই। সন্ধ্যার পরে অজানা কারণে আলোক ব্যবস্থা থাকার পরও তা বন্ধ রাখা হচ্ছে। সড়কের সামান্য আলোর স্বল্পতায় সেখানে ছোপছোপ অন্ধকার ভয়, শঙ্কা জাগায়। যে অন্ধকারের সুযোগে ঘটে যেতে পারে ভয়ংকর কোনো দুর্ঘটনা।

প্রবেশপথে দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা বলছেন, আলোকের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছে, তবে আয়োজকরা এদিকে নজর দিচ্ছেন না। টিএসসি দিয়ে বইমেলায় প্রবেশ করতে গিয়ে অনেকেই বলছেন, এতদিনেই মেট্রোরেলের কাজের জন্য এই এলাকা যেমন জনাকীর্ণ তেমনি ঝুকিপূর্ণ হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই আসতে হচ্ছে প্রাণের টানে, প্রাণের মেলায়। তাছাড়া বইমেলার প্রবেশপথ যদি রমনার দিকে আরেকটা থাকতো তাহলে এতটা সমস্যা হতো না। অন্যকোনো দিকে বিকল্প প্রবেশপথ না থাকায় মেলার ঢল চলে আসছে টিএসসির দিকে।

কয়েকজন বই প্রেমী বললেন, বিকেলের পর থেকেই এলাকা ভিড়ে ঠাসা হয়ে যায়। ঠিকমতো হাঁটাও দায়। আবার এসময় যারা মেলা থেকে বের হন তাদেরও নাজেহাল হতে হয়। তার ওপর আবার আশপাশের রিকশাচালকরা হাঁটার পথ বন্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি এড়াতে রিকশায় উঠতে গেলেও কয়েকগুণ ভাড়া হাকে তারা। এতে দুর্ভোগ বেড়ে যায় বইপ্রেমী আর পাঠকদের।

জানতে চাইলে মধুমিতা ইমু নামে এক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, প্রতিদিন মেলায় আসতে অনেক ভোগান্তি আর অর্থনাশ হয় আমার। সেই সঙ্গে মেলা শেষে ফেরার সময় বেরুনোর পথে অন্ধকার থাকায় অনেকেই ধাক্কাধাক্কি আর নোংরামি করে, শরীরে হাত দেয়। আলো ছড়ানোর বইমেলায় এসে শরীরে অন্ধকারের কালো হাত মনকে বিষিয়ে দিচ্ছে। সামনে পুরো মেলা পড়ে আছে, প্রতিদিন এমন আশংকা নিয়ে কাজে আসব কি করে? এর কোনো প্রতিকার নেই?

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী স্নিগ্ধা ঘোষ বলেন, আমি প্রতিদিন মেলায় আসি। বিকালে টিএসসির সামনের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢোকার সময় নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়। অনেক মোটর সাইকেল গেটের সামনে এলোমেলো করে পার্কিং করা হয়, এতে নানা তর্কাতর্কি, হাতাহাতি আর ধাক্কাধাক্কি হয়। তবে সবচে’ বেশি ভীতিকর পরিস্থিতিতে পড়ি বেরুনোর সময়। টিএসির দিকে টিনের ব্যারিকেড খুলে মেলার জন্য যে অস্থায়ী গেট করা হয়েছে, এর আশপাশে কোনো আলোক ব্যবস্থা নেই! এটা কেমন উদাসীনতা? অথচ এই এলাকাতেই ঘাতকেরা বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতার মূল্য আবার অন্য কোনো লেখককে দিতে হবে না তো?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্টলমালিক জানালেন, নিরাপত্তা দেয়া বা সামলানো কঠিন হবে এমন অজুহাতে রমনা বা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের দিকে কোনো প্রবেশ পথ রাখা হয়নি। এজন্য সবাইকে শাহবাগ কিংবা দোয়েল চত্বর ঘুরে মেলায় আসতে হচ্ছে। এতে শুধু পাঠক বা বইপ্রেমীদেরই নয়, সমস্যায় পড়ছেন স্টল মালিকরাও। সোমবার এসব বিড়ম্বনা, দুর্ভোগ, ভয় আর আশঙ্কার কথা জানালেন মেলায় আগত দর্শক, পাঠক আর প্রকাশকেরা।

এ প্রসঙ্গে অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. কেএম মুজাহিদুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, টেণ্ডারের মাধ্যমে যাকে আমরা আলোকসজ্জার দায়িত্ব দিয়েছি, সেই ব্যক্তিকে কয়েক দফায় জানানোর পরও এদিকে নজর দেয়নি বলে অভিযোগ করলেন তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, গেটের অন্ধকারের ছবি আমি তাকে ভিডিও করে পাঠাচ্ছি। যেন তার টনক নড়ে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App