মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার হতে পারে সিন্ডিকেটমুক্ত

আগের সংবাদ

তুরস্কে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প

পরের সংবাদ

সানেমের অর্থনীতিবিদ সম্মেলনে অভিমত

রাজনৈতিক সমঝোতা ব্যতীত উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩ , ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩ , ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ

রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে উন্নয়নের কোনো লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, জাতীয় উন্নয়নের জন্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রধান শর্ত। এ ধরনের নির্বাচনের জন্য এখন রাজনৈতিক সমঝোতার খুব প্রয়োজন। রাজনৈতিক শক্তি সমঝোতায় না এলে সামাজিক শক্তি এগিয়ে আসে।

‘রাষ্ট্র এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে ক্ষমতার গতিপ্রকৃতি : বাংলাদেশে যেভাবে পুঁজিবাদের বিকাশ’ শীর্ষক এক কম অধিবেশনে গতকাল রবিবার এসব কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক ও গবেষকরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল এ কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান।

আলোচনায় ড. দেবপ্রিয় বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন জাতীয় উন্নয়নের প্রধান শর্ত। রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) কিংবা অন্যান্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হয়ে যাবে। জাতিসংঘ নির্ধারিত এসডিজি অনুযায়ী গনতন্ত্র উন্নয়নের অংশ। আবার মানবাধিকারও উন্নয়নের অংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও সই করেছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক শক্তি সমঝোতায় না এলে সামাজিক শক্তি এগিয়ে আসে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কিংবা ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন এর বড় উদাহরণ। রাজানীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যকার সম্পর্কের নিবিড়তা বোঝাতে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা-বাণিজ্য হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ না থাকলে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব নয়।

পুঁজিবাদ প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে পুঁজিবাদের বিকাশে রাষ্ট্রের ভূমিকা বুঝতে হলে পুঁজি আহরণ এবং পুঁজির গঠন বুঝতে হবে। স্বাধীনতার পর পরিত্যক্ত সম্পদ গ্রহণ ও লুট এবং বিদেশি সহায়তার জন্য এমন সব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে যেগুলোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। উন্নয়ন ব্যাংক, শিল্পঋণ সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণের টাকা মেরে দেয়া হয়েছে। এরপর শেয়ার বাজার, আইপিও কেলেঙ্কারি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রকে শোষণ করে আগামীতেও পুঁজিবাদ এগিয়ে যাবে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

সভাপতি হিসেবে সভা সঞ্চালনার ফাঁকে অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, গত ৩০ বছরে দেশে অন্যায়-বিচার বেড়ে গেছে। দরিদ্র মানুষেরা নানামুখী শোষণের শিকার হচ্ছে। মনে হচ্ছিল দেশের মানুষ আর বেশি দিন এ অবস্থা মেনে নেবে না। বাস্তবে জনগণ সব অবস্থা মেনেই চলেছে। সঞ্চালনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আগে বিভিন্ন দলের মধ্যে সংঘাত হতো। এখন সরকারি দলেরই বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘাত হচ্ছে।

অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ড. মির্জা এম হাসান। তিনি বলেন, ৯০ দশকে ব্যবসায়ী সমাজ উদার পুঁজিবাদের রূপ দেখতেন। বাস্তবে সেটা হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বেটার বিজনেস ফোরাম গঠন করা হয়। তবে পরে তা আর এগোয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর যারা ক্ষমতায় এলেন তারা জানালেন ব্যবসায়ীরাই নাকি এ ধরনের কোন প্ল্যাটফর্ম চায় না।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই পুঁজিব্যবস্থা শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা থেকে প্রাধান্য বিস্তার ব্যবস্থায় যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর নেতা হয় সরকার পক্ষের লোক। যুক্তরাজ্যে সংসদ সদস্য হতে মাত্র ৮০ হাজার পাউন্ড লাগে। আর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ভোলায় একটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হতেও দেড় কোটি টাকা লাগে। রাজনীতির খরচ বেড়ে গেলে আদানি আর ট্রাম্পের মতো লোকের সৃষ্টি হবে। রাজনীতির খরচ কমাতে না পারলে উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।

গত ছয় বছর ধরে অর্থনীতিবিদদের এ সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে সানেম। সম্মেলনের দুই দিনের বিভিন্ন কর্মঅধিবেশনে মোট ৮০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং এ অঞ্চলের বাইরের মোট ১৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদরা আলোচনায় অংশ নেন।

শনিবার কর্মঅধিবেশনটি উদ্বোধন করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। প্রথম দিনের বিভিন্ন কর্ম অধিবেশেন অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহামন প্রমুখ। সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বিভিন্ন অধিবেশন সঞ্চালনা করেন।

কেএইচ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়