জরুরি অবস্থা জারি
আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্পে মৃত্যু দুই শতাধিক ছাড়িয়েছে
বিধ্বস্ত হয়েছে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি
এখন পর্যন্ত তুরস্কে মৃত্যু ৬৪০ ছাড়িয়েছে
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯৬০ জনে ছাড়িয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছেন কয়েক সহস্রাধিক মানুষ। তাদের উদ্ধারে চলছে চলছে জোর তৎপরতা। খবর বিবিসি, সিএনএনের।
ভূমিকম্পের তীব্রতায় ৩৪টি বহুতল ভবন একেবারে গুঁড়িয়ে গেছে। তুরস্কেই কমপক্ষে ৬৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া আহত হয়েছেন সহস্রাধিক মানুষ। আবার সিরিয়াতেও ৩২০ জন মারা গেছেন বলে জানা গেছে। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও সহস্রাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতেই জানিয়েছেন, তুরস্কে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৪০। আহত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৩২৩ জন। উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে এয়ারক্রাফট। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বানও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস ভূমিকম্পের আঘাত হানার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে তাতে দেখা গেছে একাধিক বহুতল ভেঙে পড়েছে। একাধিক বাড়ি ভেঙে পড়ার ছবি দেখা গেছে।
এদিকে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক, লেবাননের রাজধানী বৈরুত ও বন্দর শহর ত্রিপোলিতে ভূমিকম্পের কারণে লোকজন দৌঁড়ে রাস্তায় বের হয়ে যায়, তাদের ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে আশঙ্কায় কেউ কেউ নিজেদের গাড়ি সেখান থেকে সরিয়ে নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সানার খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের আঘাতে ৩২০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ার মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা এই নতুন তথ্য নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সিরিয়ার এখন পর্যন্ত আহতের সংখ্যা সহস্রাধিক। এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে আছেন বহু মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগি শহরের পূর্বাঞ্চলে। ভূ-কম্পনটির উৎপত্তিস্থলে গভীরতা ছিল ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার। জায়গাটি নুরদাগি থেকে ২৩ কিমি পূর্বে অবস্থিত।
গাজিয়ান্তেপের গভর্নর দাভুত গুল টুইটারে বলেছেন, শহরে ভূমিকম্পটি প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে। জনসাধারণকে বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করার ও শান্ত থাকার পরামর্শও দিয়েছেন গভর্নর দাভুত গুল।
তুরস্কের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলেও শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়েছে। মূল ভূ-কম্পনটি আঘাত হানার প্রায় ১১ মিনিট পর আরেক দফায় আঘাত হানে ভূমিকম্প। ৬ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী আফটারশক মূল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আঘাত হানে। ১৯ মিনিট পরে, ৫ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি তীব্র আফটারশক অনুভূত হয়।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হতাই, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাটিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস-এই ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভয়াবহ এ ঘটনার পরপরই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান টুইটারে বলেছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ‘তাৎক্ষণিকভাবে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, পাঠানো হয়েছে উদ্ধারকারী দল। আমরা যথাশীঘ্রসম্ভব ও কম ক্ষতি হয় সেভাবে কাজ করছি।
সবাইকে একসঙ্গে এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার আশাও ব্যক্ত করেন তিনি। যদিও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট টেলিফোনে আটটি ক্ষতিগ্রস্ত শহরের গভর্নরদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে তুর্কি শহর গাজিয়ানতেপের বাসিন্দা এরদেম বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে এমন ভয়াবহ ঘটনার মুখোমুখি হয়নি। আমি বেঁচে আছি কিনা এমন অনুভব করতে পারছিলাম না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।