×

সারাদেশ

শেরপুরে সাংবাদিককে জেলে পাঠানোর হুমকি বন কর্মকর্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম

শেরপুরে সাংবাদিককে জেলে পাঠানোর হুমকি বন কর্মকর্তার

প্রতীকী ছবি

সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ভোরের কাগজের শেরপুর প্রতিনিধি খোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন মকরুল ইসলাম আকন্দ নামে এক বন কর্মকর্তা। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত তিনি।

রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা সদর বাজারের ধানহাটি মোড়ে এই হুমকি দেন তিনি।

গত ৬ জানুয়ারি ভোরের কাগজে শেরপুরে বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছাড়পত্র বাণিজ্যের অভিযোগ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদ প্রকাশের পর থেকে ওই বন কর্মকর্তা সাংবাদিক খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে। তিনি খোরশেদ আলমকে বন মামলায় জড়িয়ে হয়রানির হুমকি দিয়ে আসছিল। ঘটনার দিন রবিবার রাত ৮টার দিকে বিট কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দের সঙ্গে দেখা হলে গারো পাহাড়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রেগেমেগে তিনি বলে ওঠেন, ‘আপনি বনের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন কেন? বনের বিরুদ্ধে কোনো লেখালেখি করতে পারবেন না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেবো?’

জানা গেছে, ১৯৯২ সালে ময়মনসিংহ বনবিভাগের আওতায় শেরপুরে সীমান্তবর্তী তিনটি উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার গারো পাহাড়ে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম হাতে নেয় সরকার। গারো পাহাড়ে বসবাসকারী হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থে গড়ে তোলা হয় এ সামাজিক বনায়ন।

বনের ওপর নির্ভরশীলদের করা হয় অংশীদার। প্রতি হেক্টর জমিতে বন সৃজন করে হেক্টর প্রতি একজনকে ১০ বছর মেয়াদে অংশীদার করে চুক্তিনামা দলিল দেয়া হয়। এভাবে শতশত হেক্টর জমিতে গড়ে তোলা হয় সামাজিক বনায়ন। ১০ বছর পরপর সৃজনকৃত বনের কাঠ মাপযোগ করে প্লট আকারে নিলামে বিক্রি করা হয়।

কাঠ বিক্রির টাকা ৪৫ শতাংশ অংশীদাররা পান। ৪৫ শতাংশ সরকার। আর ১০ শতাংশ রাখা হয় পুনরায় বন সৃজনের জন্য। জানা গেছে, সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরুর ১০ বছর পর থেকেই শতশত হেক্টর জমির উপর সৃজনকৃত নিলামে বিক্রি করা কাঠ স্থানান্তরিত করার ক্ষেত্রে স্থানীয় বন কর্মচারীরা ছাড়পত্র বাণিজ্য চালিয়ে আসছে।

প্রতি ট্রাক কাঠ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিতে হলে ছারপত্রের প্রয়োজন হয়। নিয়ম অনুযায়ী নিলামে ক্রয়কৃত কাঠের ছারপত্র বিনা মূল্যে দেয়ার কথা। কিন্তু এখানে টাকা ছাড়া ছারপত্র দিচ্ছেন না বন কর্মচারীরা। প্রতি ট্রাক কাঠের ছারপত্র নিতে ব্যবসায়ীদের বন কর্মকর্তাকে দিতে হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। টাকা না দিলে ছারপত্র মিলছে না। নানা অজুহাতে ট্রাকে ভর্তি করা কাঠ ঘন্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকতে হয়। এসব অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ব্যবসায়ীদের।

হতে হয় নানা বিড়ম্বনার শিকার। গত দুই যুগ ধরে এভাবেই চলছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বন কর্মকর্তাদের ছারপত্র বাণিজ্য। লাখ লাখ টাকা ছারপত্র বানিজ্য চালিয়ে আসছে বন কর্মচারীরা। বন কর্মকর্তাদের এসব ছারপত্র বানিজ্যের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিবাদতো দুরের কথা মুখ পর্যন্ত খুলতে সাহস পায় না।

আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হতে হয় হয়রানির শিকার। আর হয়রানি থেকে রেহাই পেতেই বন কর্মচারীদের দাবি মিটিয়েই নিরবে ব্যবসা চালিয়ে আসছে অর্ধশতাধিক কাঠ ব্যবসায়ী। গত দুই যুগে হাজার হাজার ট্রাক কাঠ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। হয়েছে ছাড়পত্র বাণিজ্য। ছাড়পত্র বানিজ্য এখন আর গোপন নেই। প্রকাশ্যেই হচ্ছে এই বাণিজ্য।

২০২০ সালে জনৈক বন কর্মকর্তা যোগদান করেন ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসে। যোগদান করেই ছাড়পত্রের মূল্য দ্বিগুণ করেন তিনি। এসময় ব্যবসায়ীরা ফুঁসে উঠতে শুরু করে। ব্যবসায়ীরা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ডাকযোগে অভিযোগপত্র পোস্ট অফিসে নিবন্ধনও করা হয়।

এসময় বন কর্মচারীরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আপোষ মীমাংসা করে অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করানো হয় বলে জানা গেছে। সম্প্রতি রাংটিয়া ও গজনী বিট এলাকায় ৪৬ প্লট নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।

এসব কাঠ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিতে বন কর্মকর্তাদের ছাড়পত্র বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বন কর্মকর্তারা কেউ স্বীকার করতে রাজি হননি।

এছাড়া, রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জ এলাকার গজনী, হালচাটি, আঠারো ঝুড়া বাঁকাকুড়া ও গান্দিগাও এলাকার বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন থেকে অবাধে পাথর ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক খোরশেদ আলম বন কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দকের কাছে জানাতে চাইলে এভাবেই হুমকি দেন তিনি। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App