×

পুরনো খবর

বিশেষ ব্যক্তির সুবিধায় শাবিপ্রবির পোষ্য কোটা নীতিমালায় পরিবর্তন!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:০২ পিএম

বিশেষ ব্যক্তির সুবিধায় শাবিপ্রবির পোষ্য কোটা নীতিমালায় পরিবর্তন!

ছবি: ভোরের কাগজ

শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য বিদ্যমান ‘পোষ্য কোটা’ বিধিমালায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিধিমালায় পরিবর্তনের পাশাপাশি অবসরোত্তর ও মরণোত্তর পোষ্য কোটা সুবিধা চালু করা হয়েছে। যা কোন ব্যক্তিকে বিশেষভাবে সুবিধা দিতে করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া নতুন সংযুক্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সুত্রে জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম, ওরিয়েন্টেশন ও পোষ্য কোটা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগসমূহের প্রধানগণ ও সিনিয়র অধ্যাপকবৃন্দসহ একাডেমিক কাউন্সিলের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পোষ্য কোটায় ভর্তির বিষয়ে পূর্ব থেকে নীতিমালা থাকলেও নতুন সংযোজন ও পরিবর্তন ব্যক্তি বিশেষকে সুবিধা দিতে নীতিমালায় বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন একাধিক একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাডেমিক কাউন্সিলের এক সদস্য বলেন, বর্তমানে দেশে চাকুরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। সেখানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে পোষ্য কোটায় ভর্তির ব্যবস্থা থাকা স্বত্ত্বেও নীতিমালায় সুযোগ বৃদ্ধি তথা অবসরোত্তর ও মরণোত্তর পোষ্য কাউকে ব্যক্তি বিশেষ সুবিধা দিতে করা হয়েছে।

বিশেষ সুবিধার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকের চাকুরি বয়স শেষের দিকে। এমনকি সম্প্রতি উপাচার্যের আস্থাভাজন বেশ কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে গেছেন। আবার অনেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে স্ব স্ব পদে বহাল রয়েছেন। তবে পোষ্য কোটা নীতিমালা কোন চুক্তিভিত্তিক বা মাস্টাররোল কিংবা এ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য এ সুবিধা না থাকায় চুক্তিভিত্তিক এক কর্মকর্তার সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দিতে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, পোষ্য কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তিতে ২০১৪ সালে একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশে ও সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনে নীতিমালা প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সে নীতিমালায় বলা হয়েছে, পোষ্য কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানরা শর্ত পুরণ সাপেক্ষে ভর্তির সুযোগ পাবে। তবে কোন যা মাস্টাররোল, এ্যাডহক বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ সুবিধা পাবেন না।

তবে বিধিমালায় নতুন পরিবর্তন হিসেবে পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র স্থায়ীপদ বা স্থায়ী পদের বিপরীতে চাকুরিরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পোষ্যরা ভর্তির সুযোগ পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পোষ্য কোটার বিধিমালায় পরিবর্তন হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য অবসর পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত পোষ্য কোটায় ছেলে-মেয়ে ভর্তি সুযোগ রাখা হয়েছে।

তাছাড়া চাকুরীরত অবস্থায় কোন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মারা গেলে মৃত অবিভাবকদের পোষ্য এর ক্ষেত্রে অভিভাবকের অবসরকাল পর্যন্ত পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।

ভর্তির জন্য পূর্বের বিধিমালায় ৪০ শতাংশ নম্বরের কথা থাকলেও বর্তমানে ৩০ শতাংশ প্রাপ্তদের ভর্তিতে আবেদনে নির্দেশিকা প্রকাশ করে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টারের ভর্তি কমিটি। যা নিয়মবহির্ভুত বলে দাবি অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, আবেদনের সময় একধরণের নির্দেশিকা দিয়ে চুড়ান্ত ভর্তির সময় ভিন্ন নির্দেশিকা অনুসরণ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যা ইচ্ছা তা করতে পারে না।

এ বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, যেকোন শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে (পিতা-মাতা উভয়ই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলেও) সর্বোচ্চ দুইজন এ কোটা সুবিধা পাবে। এছাড়া পোষ্য কোটায় ভর্তির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক শর্ত হিসেবে বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতার শর্ত পূরণের পাশাপাশি ন্যুনতম ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। পোষ্য কোটায় ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে বিভাগে সর্বশেষ ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১০ নম্বর কম থাকলে ভর্তি হতে পারবে, অন্যথায় চাহিদার বিভাগের ভর্তি হতে পারবে না ।

এ বিষয়ে ২০২১-২২ সেশনের ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, সবসময় ভর্তির পূর্বেই একাডেমিক কাউন্সিলে কোটায় ভর্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সে আলোকে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। বিশেষ কোন ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এমন কোন পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়নি, অনেকে চাকরি শেষ করেছেন কিংবা অল্প বয়সে মারা যান। এ বিবেচনায় নতুন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায় নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App