×

সাহিত্য

বই কেনার বাজেট নিয়ে পাঠকের শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৬ পিএম

বই কেনার বাজেট নিয়ে পাঠকের শঙ্কা

প্রতীকী ছবি

অমর একুশে বইমেলায় পছন্দের বই কিনতে রাজধানীর মিরপুর থেকে এসেছেন তাহমিনা আকতার। বেশ কয়েকটি স্টলে ঘুরে ঘুরে পছন্দের বইও পেয়েছেন। তবে কিনতে গিয়ে খানিকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। বইয়ের দাম তার নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে অনেকটাই বেশি। কী আর করা পছন্দের বইয়ের কয়েকটি কিনে বাকিগুলো রেখে দিলেন। পরে এসে কিনতে চান।

অনেক কষ্টমাখা মুখে তাহমিনা আরো বললেন, গতবারের চেয়ে এবার বইয়ের দাম অনেক বেশি। একেবারে অস্বাভাবিক! ভেবেছিলাম পছন্দের সব বই কিনব। কিন্তু বাজেটে কুলিয়ে উঠতে পারলাম না।

রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মেলায় এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শামীম হোসেন। তিনিও বললেন, বইয়ের দাম অনেক বেশি হয়ে গেছে। এমনিতেই তো আমার মতো শিক্ষার্থীদের বই কেনার বাজেট কম থাকে। তার ওপর দাম বাড়লে তো বই কেনাই কঠিন হয়ে যায়। মেলায় এসেছি পছন্দের বইগুলোর দাম দেখে বাজেট তৈরি করতে। পরে সাধ্য অনুযায়ী কিনব। তবে এবার দাম এবার বেশিই মনে হচ্ছে।

সোমবার মেলার পঞ্চম দিনে বইয়ের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে পাঠকরা এমন বিড়ম্বনার কথা জানালেন। একই রকম কথা বললেন পুরান ঢাকা থেকে আসা চাকরিজীবী সোহেল আরমান। অফিস থেকে সরাসরি তিনি মেলায় এসেছেন। বললেন, সবকিছুর দামই তো বেড়েছে, বইয়ের দাম আবার বাদ থাকবে কেন। তবে সংসারের সবকিছু সামাল দিয়ে বই কেনার মতো টাকা হাতে তো থাকছে না। তারপরেও নিজের আর পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রতিবছর বই কিনতেই হয়। এবারও কিনবো, তবে সাধ্যের বাইরে হয়তো পারবো না। মনে হচ্ছে এবার আগের মতো বেশি বই কেনা সম্ভব হবে না।

কয়েকটি স্টলের বিপণন কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল বই কিনতে এসে বইপ্রেমী অনেকের চোখ আটকে যাচ্ছে দামে। বিক্রেতারা বলছেন, পাঠক আর ক্রেতারা আরো কম দামে বই কিনতে চান। অনেকেই কমিশন বেশি দিতে বলেন। কিন্তু আমরা তো দিতে পারি না। কারণ স্টল মালিকরা কমিশন বেঁধে দিয়েছেন। এর বাইরে তো যেতে পারি না। খলিলুর নামের এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, দাম বেশি হওয়ার কারণে ক্রেতারা বই কম কিনছেন। অনেকেই বইয়ের দাম বেশি দেখে ফিরে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণরা বই উল্টে পাল্টে দেখে চলে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে খুব কমই বই কিনছেন।

জানতে চাইলে কয়েকজন স্টল মালিক বললেন, পাঠক আর বইপ্রেমীরা বেশি করে বই যেন কিনতে পারেন সে ব্যাপারে প্রতিবারই আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি। তবে এবার উল্টো ঘটনা ঘটেছে। প্রকাশনা উপকরণের দাম এত বেশি বেড়েছে যে বই প্রকাশ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। যেমন কাগজের দাম বেড়েছে কয়েক দফায়। যে কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বইয়ের দাম কোনোভাবেই কমানো যায়নি। প্রকাশকরা বলছেন, এমনিতেই গত প্রায় তিন বছরে করোনা মহামারির ধাক্কায় প্রকাশনাখাতে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। এবার বইয়ের দাম কম রাখলে লাভ তো দূরের কথা ফের লোকসান গুণতে হবে।

লেখকরা বললেন, আমরা চাই পাঠকের হাতে আমাদের বইগুলো উঠুক। তারা বেশি করে বই কিনলে লেখক প্রকাশক সবারই ভালো। তবে এবার কাগজসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকাশকরা সত্যিই বিপাকে পড়েছেন। আমাদেরও আশঙ্কা এবারের মেলায় বই বিক্রি নিয়ে।

লেখক কাশেম খালিল বললেন, অনেক লেখক প্রস্তুতি নিয়েও শেষ অবধি বই বের করতে পারেননি। প্রকাশনা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রকাশকদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে। তবে এতে শুধু লেখকরাই নন, পাঠকও বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক নতুন লেখকের বই আসেনি মেলায়। এতে দেশের শিল্প সাংস্কৃতির প্রবাহমান ধারাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমেদ বলেন, উপকরণের দাম বাড়ার কারণে বইয়ের দাম বেড়ে গেছে। বেচা কেনা বেশি না হলে আগের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা যাবে না। মেলাটা যদি পূর্বের পূর্ণাঙ্গ মেলার রূপে ফিরে আসে তাহলে ভালো হবে।

নতুন বই

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য মতে, গতকাল সোমবার অমর একুশে বইমেলার পঞ্চম দিনে নতুন বই এসেছে ৭৩টি। এর মধ্যে গল্পের বই চারটি, উপন্যাস ১৪টি, প্রবন্ধ ১২টি, কবিতা ১২টি, গবেষণা একটি, ছড়া একটি, শিশুসাহিত্য দুটি, জীবনী চারটি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি, বিজ্ঞান একটি, ভ্রমণ চারটি, ইতিহাস সাতটি, রাজনীতি একটি, স্বাস্থ্য একটি, অনুবাদ একটি, সায়েন্স ফিকশন একটি ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর সাতটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App