×

জাতীয়

ফের বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩৬ এএম

ফের বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ

ছবি: সংগৃহীত

দাবি আদায়ে রাজপথেই আন্দোলনের হুমকি বিএনপির ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। নির্বাচনের পদ্ধতিসহ বেশ কিছু ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। সংকট নিরসনে আপাতত সংলাপ বা সমঝোতার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। উল্টো রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে দুই দল। সরকারি দলের নেতাদের সাফ বক্তব্য, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন। অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অনড় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ নিয়ে বছরের শুরু থেকেই কর্মসূচি-পাল্টা কর্মসূচিতে ব্যস্ত দুই দল। আগাম কর্মসূচি নিয়েও মাঠে নেমেছে তারা। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই এগিয়ে আসবে, নির্বাচনকে ঘিরে ততই রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়বে- এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি ফ্লপ করায় হতাশ দলটির নেতাকর্মীরা। সেই হতাশা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া দলটি। দিচ্ছে নতুন কর্মসূচি। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সমাবেশ করবে দলটি। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একসঙ্গে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ওই সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এছাড়া রাজধানীতে চার দিনের নীরব পদযাত্রা শেষ হয়েছে গত বুধবার।

বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে নৈরাজ্য ঠেকাতে পাল্টা প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দলটির পক্ষ থেকে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী দিনে বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা করা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির নেতারা। দাবি আদায়ে রাজপথেই আন্দোলনের হুমকি বিএনপির : বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, সবার অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদ্ধতি নিশ্চিত করার জন্যই আন্দোলন। নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। এর আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। সরকার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে রাজপথে গণআন্দোলনের মাধ্যমেই তাদের বিদায় করা হবে। সরকারের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়। রাজপথেই হবে ফয়সালা। সূত্র জানায়, রাজপথে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে নেতাকর্মীদের নামে নতুন মামলা ও গ্রেপ্তার নিয়ে কিছুটা চাপে আছে বিএনপি। তবে এটাকে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা। তৃণমূলের চাঙাভাব ধরে রাখতে নানা পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক কারণে নানা হুমকি ধামকির বিষয় সামনে এলেও শেষ পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছেন। শত বাধাবিপত্তির পরও অনড় অবস্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিটি সমাবেশ সফল হয়েছে। কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে, বিএনপির যৌক্তিক দাবি-দাওয়া সরকারের মেনে নিয়ে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় নিয়ে যাওয়া জরুরি। তেমনই দল এখন আরো বেশি শক্তিশালী এবং নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ। এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল হবে বলেও মনে করেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের পতন শুরু হয়ে গেছে। বাকিটুকু সময়ের ব্যাপার মাত্র। আওয়ামী লীগকে না সরালে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন হবে না। নির্বাচন নিয়ে সংবিধানের দোহাই দিলেও অতীতে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে।

ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ নতুন বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। ইতোমধ্যে ভোটের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে দলটি। নেতাকর্মীদের চাঙা করতে তৃণমূল ঢেলে সাজানোর কাজও প্রায় শেষের দিকে। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। নানা ষড়যন্ত্রের পর স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবে। এ সরকারের আমলেই মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছে দেশ। এছাড়া আরো অনেক মেগা উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। আগামী নির্বাচনে সরকারের এ উন্নয়নের চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে দলটি। বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলার হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নতুন বছরে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আন্দোলনের নামে সহিংসতার সৃষ্টি হলে তাদের প্রতিহত করা হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসবে- বুঝতে পেরে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত। নির্বাচনি ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে উদ্ভট কথাবার্তা বলছে। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিএনপি বিতর্কিত করেছে, সেই সরকারের অধীনেই নির্বাচনের দাবিতে মাঠ গরমের চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হবে না। সংবিধান অনুযায়ীই হবে আগামী নির্বাচন। এ নিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থির করার অপচেষ্টা করলে এবার তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

রাজনীতি সংঘাতময় হওয়ার আশঙ্কা বিশ্লেষকদের দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থানে সামনের দিনগুলো ভয়াবহ সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সংকট ভয়ংকর রূপ নিলে তা দেশকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেবে। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের রাজনীতি সুস্থ ধারায় নেই।

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগের উচিত হবে বিএনপিকে যৌক্তিক আন্দোলন করতে দেয়া। তবে বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও-নৈরাজ্য দেশের মানুষের মনে এখনো জ¦লজ¦লে। তারা দেশের উন্নয়নে, জনগণের স্বার্থে কোনো আন্দোলন করতে পারেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App