×

সম্পাদকীয়

প্রথম কিস্তি পেল বাংলাদেশ : আইএমএফের ঋণ যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৭ এএম

প্রথম কিস্তি পেল বাংলাদেশ : আইএমএফের ঋণ যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার এই ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে জমা হয়েছে। বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম সামনে রেখে আইএমএফ এই ঋণ সহায়তা করেছে। এরই মধ্যে জ¦ালানি তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয়েছে সরকারকে। বৈশ্বিক এ সংকটে বাংলাদেশ ঋণ পেয়েছে এটাই ইতিবাচক। অর্থনীতির চলমান সংকট মোকাবিলায় গত জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তিনটি কর্মসূচির আওতায় সাড়ে চারশ কোটি ডলার ঋণ চায় অর্থ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের আবেদনে গত নভেম্বরে বাংলাদেশ সফর করে ঋণের নানা শর্ত নিয়ে আলোচনা করে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। ১৬ জানুয়ারি সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তোয়নেত এম সায়েহ বাংলাদেশকে ঋণ দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা দেন। সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে বোর্ড সভায় বাংলাদেশের আবেদনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় আইএমএফ। সরকারের অনুরোধে ২টি প্যাকেজে সোমবার ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। মোট সাত কিস্তিতে তারা বাংলাদেশকে এই ঋণ দেবে। এ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সুদহার নির্ধারিত হবে বাজারদর অনুযায়ী, যা গড়ে ২ দশমিক ২ শতাংশ হবে। ঋণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ঋণের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারব- এটাই আমাদের আকাক্সক্ষা। অর্থনৈতিক খাতে যে বিশৃঙ্খলা, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে গুরুত্ব দিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে এসেছে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি রেমিট্যান্স আসাও কমে গেছে। এখন আইএমএফের এ সিদ্ধান্তের ফলে ‘প্যানিক সিচুয়েশন’ যেটা তৈরি হয়েছিল, সেটা কেটে যাবে। আইএমএফ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঋণ দেয়ার আগে সেখানকার সামষ্টিক অর্থনীতি, সুশাসন, গণতন্ত্রসহ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব বা শর্ত জুড়ে দেয়। আইএমএফ তিনটি উইন্ডোতে ঋণ দিচ্ছে। এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইইএফ) এবং রেজিলিয়েন্স এন্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)। আরএসএফ নতুন একটা উইনডো, যা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত। এতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং এর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থা শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে এমন একটা অবস্থা থাকতে হবে, যাতে জলবায়ু সম্পর্কিত অনেক বিনিয়োগ হয়। জলবায়ু বা পরিবেশবান্ধব শিল্প-কারখানা করতে হবে। জীবাশ্ম জ¦ালানি কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি বাড়াতে হবে। শিল্প-কারখানা থেকে দূষণ বন্ধ করতে হবে। এছাড়া রাজস্ব বাড়াতে আইএমএফ ভ্যাট অবকাঠামোর সরলীকরণ, রাজস্ব প্রশাসনের আধুনিকায়ন ও বড় করদাতাদের কাছ থেকে ঠিকমতো কর আদায় করতে না পারার ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাপনার মতো লক্ষ্য নির্ধারণের সুপারিশও করেছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বেশকিছু সুপারিশ করে আইএমএফ বলেছে, ব্যাংক খাতে উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এ সমস্যা অনেকটাই প্রকট। শর্তগুলো মানা দেশের জন্যও কল্যাণকর। দেশের অর্থনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি কাটাতে আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। আইএমএফের ঋণ নিশ্চিত হওয়াতে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App