×

মুক্তচিন্তা

পদ্মা সেতু কেমন- যার মন যেমন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩২ এএম

পদ্মা সেতু কেমন- যার মন যেমন

সবার শুরুতে কিছু প্রাথমিক তথ্য তুলে ধরছি, যা কখনো একসঙ্গে আসেনি। প্রায় দুই যুগ আগে পদ্মা সেতু নিয়ে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু আদৌ সম্ভব কিনা তার প্রথম সমীক্ষা হয় ১৯৯৯ সালের মে মাসে। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া প্রান্তে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৯ সাল থেকে সেতুর নকশা তৈরির কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০১০ সালে। ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রথম স্বপ্ন দেখে। বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়। পদ্মা সেতু অন্য কোথাও তৈরি করা যায় কিনা সে জন্য তারা জাপান সরকারকে সমীক্ষা চালাতে বলে। কিন্তু সমীক্ষার পর জাপান জানায়, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য মাওয়া পয়েন্টই উপযুক্ত। এরপর ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর হাসিনা সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়। ২০১১ সালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংকের সঙ্গে হাত মেলায় বাংলাদেশ। লক্ষ্য ছিল, এ সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এসব ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া। ২০০৯ সালের পর বিশ্বব্যাংক সেতু প্রকল্পের অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সম্পন্ন করে। এ ছাড়াও এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকাও আর্থিকভাবে সহায়তা করতে চায়। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ তুলে হঠাৎই এ প্রকল্প থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে আসে। অন্যান্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানও হাত গুটিয়ে নেয়। হঠাৎ করে বিশাল অর্থের অভাবে সাময়িকভাবে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়লেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য জেদ, মানসিক শক্তি, দৃঢ় নেতৃত্ব পদ্মার খরস্রোতার মতো এতটাই তীব্র ছিল যে, বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে অবশেষে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নেই বাস্তবায়িত হয়েছে। পদ্মা সেতু নকশার দায়িত্ব ছিল নিউজিল্যান্ডের এইসিওম-এর ওপর। তাদের সঙ্গে ছিল অস্ট্রেলিয়ার এসমেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, কানাডার নর্থ ওয়েস্ট হাইড্রলিক কনসালট্যান্টস ও বাংলাদেশ এসিই কনসালট্যান্টস লিমিটেড। পদ্মা সেতুর নকশায় এইসিওম টিমের নেতৃত্ব দেন ব্রিটিশ নাগরিক রবিন শ্যাম। সেতু বাস্তবায়নে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তার মৃত্যুর পর ওই কমিটির প্রধান হন অধাপক শামীম জেড বসুনিয়া। কমিটিতে ছিলেন জাপানের দুজন, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও আমেরিকার একজন করে বিশেষজ্ঞ। এ কমিটি ছাড়াও স্টিয়ারিং কমিটি ও বাস্তবায়ন কমিটি ছিল। সেতুর পুরো নির্মাণকাজের দেখভালের দায়িত্ব ছিল কোরিয়ান সংস্থা এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের ওপর। তদারকি দলের নেতৃত্ব দেন নিউজিল্যান্ডের রবার্ট জন এভস। সেতু নির্মাণের কন্ট্রাক্টর ছিল চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং। পদ্মা নদীর দুই পারের সংযোগ (সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া) তৈরির দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশি সংস্থা আব্দুল মোনেম লিমিটেড। নদী শাসনের কাজ করেছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সেতুর পুরো কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগে ২ হাজার ৭৫৭ দিন। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং দুপাড়ে সেতুর বাইরে উড়াল পথ ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। ২২ মিটার চওড়া সেতুর সড়কটি চার লেনের এবং মাঝখানে রয়েছে সড়ক বিভাজক। সেতুটি প্রায় ১০ হাজার টন লোড বহন করতে সক্ষম। সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের পথ এবং নিচে অর্থাৎ ইস্পাতের কাঠামোর ভেতর দিয়ে রয়েছে ব্রডগেজ রেলপথ। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের মাধ্যমে রেল প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। নদীর পানি থেকে সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট। পদ্মা সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্প পোস্ট আছে। বড় কোনো জাহাজ এসে ধাক্কা দিলে কিংবা আট মাত্রার ভূমিক¤প হলেও সেতুর কোনো ক্ষতি হবে না। ২০০৭ সালে পদ্মা সেতুর জন্য বাজেট ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে খরচের হিসাব বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে আরো ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা যোগ হয় পদ্মা সেতুর বাজেটে। চতুর্থ দফায় সেতুর বাজেট বাড়ে আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। পদ্মা সেতুকে পানির মধ্যে ধরে রাখবে ৪২টি পিলার। পানির নিচে ১২২ মিটার পর্যন্ত গভীরে গিয়েছে এ পিলারের ভিত। পৃথিবীর আর কোথাও কোনো সেতুর পিলার এত গভীরে নেই। পদ্মা এত খরস্রোতা যে, তাকে শাসন করা অত্যন্ত কঠিন। গত ৩০ বছরে এ পদ্মা আড়াআড়িভাবে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। ১৫-২৫ মিটারের স্বাভাবিক গভীরতা বর্ষায় বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ মিটারে। নদীর তলদেশে পাথর না থাকায় এ সেতুর পাইলিং ছিল চ্যালেঞ্জের। কাদামাটির কারণে ১২২ মিটার গভীরে পাইল বসাতে হয়েছে। পদ্মা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। জাতীয় মহাসড়ক এন-৮ এক্সপ্রেসওয়ে পদ্মা সেতুকে উত্তরে ঢাকা এবং দক্ষিণে ফরিদপুরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। মহাসড়কটি ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, যার আওতায় রয়েছে ৫টি ফ্লাইওভার, ২টি ইন্টারচেঞ্জ, ৪টি ওভারপাস, ২৯টি সেতু, ৫৪টি কালভার্ট এবং ১৯টি আন্ডারপাস। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার জন্য দুপাশে দুটি থানার বাইরেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেডকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর এসব বর্ণনায় বাংলাদেশের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে এটি সম্পন্ন করা অনেক চ্যালেঞ্জিং এবং গর্বের বিষয়- এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই। বাংলাদেশের মতো একটি দেশের পক্ষে এটি করা সম্ভব হয়েছে- বিষয়টি বিশ্বসমাজে বেশ আগ্রহের সৃষ্টি করেছে এবং সাহসী প্রশংসা পেয়েছে। পদ্মা সেতুর মর্যাদা অন্য জায়গায়। খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের টেকনোলজি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের। এমন খরস্রোতা নদীর ওপর অবস্থিত সেতুগুলোতে যানবাহনের ওজনের পাশাপাশি নিচে নদীর পানির চাপ থাকে। তাছাড়া বহু গাড়ি চলাচলের ফলে সেতুতে কম্পনের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, পাশাপাশি-সোজা সেতুতে অনেক সময় চালকদের মনোযোগ নষ্ট হয়। এ কারণে পদ্মা সেতুটি সোজা না গিয়ে বাঁকিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কারিগরি দিক থেকে সেতুর বাস্তবায়ন করা ছিল বেশ কঠিন ও জটিল। দ্বিতীয় কারণটি আরো বেশি প্রণিধানযোগ্য। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের পক্ষে এমন একটি সেতু সে সময়ে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সে সময়ে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় ছিল ১ হাজার মার্কিন ডলার। সে অবস্থায় নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখার মতো সাহস পৃথিবীর খুব কম রাষ্ট্রনায়কদেরই থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন- ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু গড়ে তুলব।’ তার কথা এবং কাজে মিল রেখে ২৫ জুন ২০২২ উদ্বোধনের দিন সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে তিনি প্রথম টোল দেন। উদ্বোধনী ভাষণে শেখ হাসিনা উচ্চারণ করলেন কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার দুটি লাইন- ‘জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়’। পদ্মা সেতু প্রকল্প অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা নদী পুরো বাংলাদেশকে মূলত দুভাগে বিভক্ত করে রেখেছিল। পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার ফলে সারাদেশ সহজ যোগাযোগের আওতায় এলো। এখন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানীসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সহজ ও দ্রুত যোগাযোগ সুবিধা নিশ্চিত হলো। এর ফলে মংলা বন্দরের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে; দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন আগের চেয়ে সহজ হবে এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা সহজতর হবে। পদ্মা সেতুর ফলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। সেতুপথে কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যাবে। আগে কলকাতা থেকে ঢাকা ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগত ১০ ঘণ্টা। এখন সময় লাগবে মাত্র ৪ ঘণ্টা। এই হলো পদ্মা সেতু- বাংলাদেশের স্বপ্নের সেতু। পরিচালনা করেছে সরকার, বাস্তবায়িত করেছে সরকার। কিন্তু সেতুটি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের অর্থে। সম্পদটি বাংলাদেশের, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। তারপরও কি রাজনৈতিক বিতর্ক থাকে? সেতু নিয়ে গর্ব করা কিংবা উচ্ছ¡সিত হওয়ার সুযোগটি বাংলাদেশের সব মানুষের। বাংলাদেশের মানুষ জানে যে, তাদের এ সেতুটি পৃথিবীর সেরা সেতুগুলোর একটিও নয়। তারপরও এটি তাদের সেতু- নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করা সেতু। যিনি পরিকল্পনা করলেন, সাহস দেখালেন, বাস্তবে রূপ দিলেন- তাকে কি সম্মান জানানোর প্রয়োজন নেই? তাকে কি সাধুবাদ জানানোর রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই? যদি থাকে, তবে কি তার কার্পণ্যতা দেখতে পেয়েছি আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে? পদ্মা সেতু নিয়ে হয়তো বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে আলোচনা এবং সমীক্ষা হতে পারে। কারণ এমন একটি গর্বের সম্পদ তাদেরও হয়ে গেল। সরকার স্থায়ী নয়, বাংলাদেশের গর্বের জায়গাটি স্থায়ী- পদ্মা সেতুটি স্থায়ী। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে সরে গিয়ে বর্তমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি কি শুধু সরকারি মহলকেই সেবা দিচ্ছে, নাকি সব বাংলাদেশিকেই গর্বিত করছে? তাই প্রশ্ন জাগে, কোনটি সত্য- চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে গর্বিত সেতুটি, নাকি নাট খোলার টিকটক ভিডিওটি? পদ্মা সেতু চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’র (বিআরআই) মাধ্যমে করা হয়নি। এমনকি কোনো বিদেশি তহবিলের সাহায্যও নেয়া হয়নি। নিজেদের স্বপ্নের সেতু নিজেদের অর্থেই তৈরি করেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ের পর চীন-সহযোগিতা নিয়ে আরো কিছুটা সতর্ক হতে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশকে। কিন্তু নিজ অর্থে পদ্মা সেতু করার জেদটি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের এক হটকারী সিদ্ধান্তের ফলে। বিপর্যয়ের শুরু ২০১২ সালে, বিশ্বব্যাংক ঋণ দিতে অস্বীকার করে। তাদের অভিযোগ ছিল, সেতু তৈরিতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে এবং হচ্ছে। তখনো বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে কোনো অর্থই প্রদান করেনি। কিন্তু তারপরও তারা এ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। বরং বলা চলে, তারা দুর্নীতির পরিকল্পনার অভিযোগ তোলে। বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোয় অন্য ঋণদাতা সংস্থাগুলোও সরে আসে। বিশ্বব্যাংকের অনুরোধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিশ্বব্যাংক কর্তৃক উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি। বিশ্বব্যাংক অভিযোগ তুললেও অভিযোগ প্রমাণের ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। বরং অহমিকার চূড়ান্ত রূপ দেখিয়ে অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও তারা ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয় একতরফাভাবে। পরে কানাডার একটি আদালতে পদ্মা সেতুর প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ২০২৩ সালের শেষে কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে একটি অবিতর্কিত, অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা এদেশের সব জনগণের। এ কথা বলাই যায়, পদ্মা সেতু এবং এ সরকারের অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলো আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচারে ব্যাপক পজিটিভ দিক এনে দিতে পারে। অন্যদিকে সার্বিক বিষয়টি আগামী নির্বাচনী আবহাওয়ার জন্য, বাংলাদেশের জনগণের জন্য এবং কৌতূহলী বিদেশিদের জন্য শুভ ভাবনার পরিবেশ প্রদান করতে পারে। সরকার মনে করছে, পদ্মা সেতুসহ তাদের অনেক ভালো কাজ জনগণের সামনে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হবে নির্বাচনের মাঠে। অন্যদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিও সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ হাতছাড়া করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো হঠকারী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নাও নিতে পারে। ‘উইন-উইন’ একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে দিতে পারে স্বপ্নের পদ্মা সেতু এবং অন্যান্য মেগা প্রকল্প। সেদিক থেকে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিরই ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনতে পারে।

সুধীর সাহা : কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App