×

সারাদেশ

গুরুদাসপুরে পলো উৎসবে মাছের খরা

Icon

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:২৩ পিএম

গুরুদাসপুরে পলো উৎসবে মাছের খরা

ছবি: ভোরের কাগজ

গ্রামীণ ঐতিহ্য পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎস আছে কিন্তু মাছ নেই। অতীতে দেখা গেছে পলো বাইজ মানেই মাছ ধরার মহোৎসব। বড় বড় শোল, বোয়াল, আইড়, বাঘারসহ প্রচুর মাছ পাওয়া যেত পলো উৎসবে। কিন্তু কালের বিবর্তনে বৈরি আবহাওয়ায় বন্যার অভাব, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, মাছের অভয়ারণ্য না থাকা, চীনা জালের ব্যবহারসহ আধুনিক প্রযুক্তিতে মা মাছ নিধনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় নানা প্রজাতির প্রজাতির মাছ। ফলে পলো উৎসবে চলছে মাছের খরা।

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর ত্রিমোহনা থেকে কালাকান্দর মহাশ্মশান পর্যন্ত চলে পলো উৎসব। এতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দুই শতাধিক মাছ শিকারি অংশ নেয়। মাছ ধরার সময় নদীর দুই তীরে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেলেও দেখা মেলেনি আগের মতো বড় কোনো মাছ।

মাছ শিকারী রমিজ, ফিরোজসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, এই উৎসবে এক বা একাধিক নেতা থাকেন, যার নেতৃত্ব মেনে সবাই নামেন পলো উৎসবে। প্রতিবছর শীতের শেষ মৌসুমে খাল, বিল ও নদনদীর পানি কোমর পর্যন্ত পৌঁছালে ওই পলো উৎসব শুরু হয়। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম থেকে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন বিল, নদী, জলাশয়ে ওই উৎসব চলে। অন্যান্য বছর খাবার মাছ ছাড়াও বিক্রি করা যেত পলোর মাছ। কিন্ত এ বছর সকাল থেকে দুই একটা করে মাছ পাওয়া গেছে। অনেকে আবার শূন্য হাতে ফিরে গেছে।

প্রতি বছর বিস্তীর্ণ চলনবিলের ইরি ধান চাষাবাদের জন্য পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর-দুর্গাপুর পয়েন্টে আত্রাই নদীতে রাবার ড্রাম দিয়ে পানি আটকানো হয়। বাঁধের কারনে ভাটিতে পানি কমে যাবার সুযোগে পরদিন শুরু হয় পলোসহ সব উপকরণ দিয়ে মাছ শিকারের উৎসব।

উৎসবে অংশ নিতে আসা মশিন্দা ইউনিয়নের কাছিকাটা রানীগ্রামের বুলবুল আহম্মেদ জানান, ‘শীত উপেক্ষা করে পলো দিয়ে মাছ ধরতে একটা অন্য রকম অনুভুতি কাজ করে। শখের বশেই বড়দের সঙ্গে মাছ ধরার উৎসবে যোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাছের দেখা মেলেনি’।

দলনেতা আব্বাস আলী বলেন, ‘প্রতিবছরই শুকনা মৌসুমে দলবেঁধে মাছ ধরার নেশায় নামেন তারা। বাবা-দাদার আমল থেকে এ উৎসব রীতিতে পরিণত হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত দিনে মাছ ধরার উৎসব চলে। নির্ধারিত স্থান ও সময়ে সবাই একত্রিত হয়ে দল বেঁধে চলে মাছ ধরার উৎসব। একসময় ধরা পড়া মাছের মধ্যে শোল, আইড়, বাঘার, সরপুটি, বোয়ালসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। মাছ ধরা পরতো কিন্তু বর্তমানে খাবার মাছই হয় না। নদীর মাছ খেতে খুবই সুস্বাদু তাই প্রতি বছর এসময় আসলে লোভ সামলাতে পারি না’।

পরিবেশ কর্মী সাংবাদিক নাজমুল হাসান নাহিদ বলেন, ‘পলোয় মাছ ধরা উৎসব গ্রামীণ ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। বর্তমানে যেমন নদী,খাল বিলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে তেমনি মাছের সংখ্যাও কমছে। এছাড়াও নদী খননের নামে নদী মাঝে দুই-এক জায়গা গর্ত কওে রাখা হয়েছে। সেগুলো প্রভাবশালীরা ওই গর্তে গাছের ডালপালা (কাঠ) দিয়ে নিজেরা তা দখল করে ঘিরে রাখার কারণে পলো উৎসবে আশানুরুপ মাছ হচ্ছে না’।

খুবজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম দোলন বলেন, ‘এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই নদী বিলে পলো বাওয়া উৎসব পালন করে আসছে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে মাছ শিকার করেন। মাছ না পেলেও নতুন প্রজন্ম এ উৎসবের আনন্দ উপভোগ করে’।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App