×

সারাদেশ

ভাঙনের ঝুঁকিতে চরফ্যাশন সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩০ এএম

ভাঙনের ঝুঁকিতে চরফ্যাশন সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

ছবি: ভোরের কাগজ

মেঘনায় বালুদস্যুদের উৎপাত

চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়ায় মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ১০-১২টি ড্রেজার দিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। আর সেই বালু নিতে মেঘনার বুকে নেমেছে অন্তত ২০টি বাল্কহেড। বাল্কহেডে করে এসব বালু বেতুয়াসহ চরফ্যাশন উপজেলার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বিভিন্ন পয়েন্টে পাহাড়ের মতো স্তূপ আকারে রেখে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রান্তে। তবে অবৈধভাবে বালু তোলায়, বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে অবৈধভাবে বালু তোলা ও পরিবহনের কারণে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও উন্নয়ন অবকাঠামো। ঝুঁকির মুখে পড়েছে চরফ্যাশন শহররক্ষা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আশপাশের কৃষি জমি।

জানা গেছে, চরফ্যাশন উপকূলের আশপাশে কোনো বালু মহাল বা বালু ইজারা না থাকলেও ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলন করছে একাধিক চক্র। অবৈধ এ বালু ড্রেজিং বন্ধে প্রশাসন কিংবা কোস্টগার্ডের কোনো তৎপরতা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার বেতুয়া লঞ্চঘাটের পশ্চিম পাশের অদূরে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা মাঝের চরের ঢাল সংলগ্ন নদীর তলদেশ থেকে ১০-১২টি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডে করে বেতুয়ায় নিয়ে আসছে বালুদস্যুদরা। অবৈধভাবে এসব বালু উত্তোলনে চরফ্যাশনের একাধিক প্রভাবশালীসহ স্থানীয়রা জড়িত বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা স্থানীয় তাজুল ইসলাম, বেলায়েত হোসেন, আকতার হোসেন, নাসির, নোমান খা, মনির ও বেলালসহ আরো একাধিক চক্রের সদস্যরা চরফ্যাশনের অন্তত ১৫টি পয়েন্টে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়াও মেঘনা নদীর তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া পর্যন্ত ১০টি পয়েন্টে ড্রেজিং করে বালুর জাহাজ বা বাল্কহেডে ভর্তি করে বালু নিয়ে আসে। পরবর্তিতে এসব বালু এলাকাবাসীর কাছে অথবা বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। তবে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে চরফ্যাশন উপকূলে কোনো বালু মহাল না থাকায় কোনো ড্রেজার বা প্রতিষ্ঠানকে বালু কাটার অনুমতি দেয়া হয়নি। অথচ অনুমতি না নিয়েই উপজেলা বালুর জাহাজ সমিতি ও বালু ব্যবসায়ীচক্র প্রভাব বিস্তার করে মেঘনার বুকে এখন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব করছে।

এলাকাবাসী বলছেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অভিযান বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় মেঘনায় বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। ড্রেজার ও বাল্কহেড শ্রমিকরা জানান, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই বালু উত্তোলন করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ড্রেজার শ্রমিক জানান, ঘনফুট দরে ব্যবসায়ীদের কাছে বালু বিক্রি করছেন তারা। আয়তন অনুযায়ী একেকটি বাল্কহেডে ৬ হাজার থেকে ৩০ হাজার ঘনফুট বালুর ধারণক্ষমতা রয়েছে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা জাহাজ থেকে ৩ টাকা ফুট হিসেবে কিনে অধিক লাভে বিক্রি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা প্রশ্ন রেখে বলেন, উপজেলা বা জেলা প্রশাসন থেকে মেঘনায় বালু উত্তোলনে কোনো বালুমহাল বা ইজারা না থাকলেও প্রতিদিন মেঘনার তলদেশের লাখ লাখ ফুট বালু লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। উপজেলার বেতুয়া, শশিভূষণ, হাজারীগঞ্জ খেজুর গাছিয়া, আবদুল্লাহপুর মিনাবাজার, নীলকমল ঘোসেরহাট, নুরাবাদ গাছিরখালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একাধিক ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বালু ব্যবসায়ীরা। যার ফলে উপজেলার বেড়িবাঁধে ব্লক নেই এমন একাধিক পয়েন্ট নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান রাহুল বলেন, চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলে মেঘনায় কোনো বালু মহাল অথবা বালু ড্রেজিংয়ে কোনো ইজারা দেয়া হয়নি। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App