×

মুক্তচিন্তা

ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:১৫ এএম

ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি

বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় ঢাকা সবচেয়ে ব্যস্ততম নগরী। বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ঢাকা। উন্নত চিকিৎসার কেন্দ্র ঢাকা। উচ্চশিক্ষার মূল কেন্দ্রও এই ঢাকা। অর্থাৎ কেন্দ্রীয়করণের কারণে সবকিছু রাজধানীকেন্দ্রিক। আর কেন্দ্রীয়করণের জন্য সবাইকে রাজধানীমুখী হতে হয়, নানা কাজে ঢাকায় আসতে হয়। তথ্যমতে, প্রতিদিন ১ হাজার ৭০০ লোক যুক্ত হচ্ছে এই ঢাকা শহরের বিদ্যমান জনসংখ্যার সঙ্গে। এতে ঢাকা হয়ে পড়ছে জনচাপে ন্যুব্জ, দূষিত আর জ্যামে-ঘামে বিপর্যস্ত। ঢাকা শহরের এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, যানজট, দূষণ ও নাগরিক দুর্ভোগ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হতে পারে বিকেন্দ্রীকরণ। বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কল্যাণকর রাষ্ট্রের পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রে সরকারের বিস্তৃতি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত। তাই সরকারকে তৃণমূলের সব জনগণের উন্নয়ন ও সরকারের কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সজীব রাখতে হয়। আর বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সরকারি উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতা স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়; জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা হ্রাস পায়, সমন্বয় সাধন সহজ হয়, কাজের চাপ কমে, সময় বাঁচে আর পরিবেশ ও যানজটের মতো অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিকেন্দ্রীকরণের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার ফলশ্রæতিতে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে সর্বপ্রথম পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যাতে স্থানীয়ভাবে ক্ষমতা ও সম্পদ ন্যস্ত করার উদ্যোগ গৃহীত হয়। এ কর্মসূচি বঙ্গবন্ধুর বাধ্যতামূলক গ্রাম-সমবায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যা তার একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ছিল। তাছাড়া স্বাধীন দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়ন, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ, শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার যুক্ত করেছিলেন। তারই আলোকে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা সরকার একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করে। এ কমিশন চার স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার পদ্ধতির সুপারিশ করে। ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রতিশ্রæতির দলিলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলে গ্রাম হবে শহর। আর সেই প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়নে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ কর্মসূচির বাস্তবায়নে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। ‘আমার গ্রাম, আমার শহরে’র অর্থ হলো গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক রূপ অটুট রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া। এই কর্মসূচির বাস্তবায়ন হলে শহরগুলোর ওপর চাপ কমবে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান আছে। এতে কর্মসংস্থানজনিত কেন্দ্রীভূত চাপ শহরকেন্দ্র থেকে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়বে। ঢাকাকেন্দ্রিক চাপ দূরীভূত করতে শিল্প-কারখানা বাধ্যতামূলকভাবে ঢাকার বাইরে অন্য জেলাগুলোয় স্থানান্তর করা উচিত। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বৈদেশিক দপ্তরগুলোকে এক নগরমুখী না রেখে সব বিভাগীয় শহর ও নগরে স্থাপন করা উচিত। আবাসন, শিক্ষাকেন্দ্র, চিকিৎসাকেন্দ্র নগরের সীমান্ত এলাকায় স্থাপন করা গেলে ভালো হয়। এতে দূষণমুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশের পাশাপাশি যানজট, কোলাহল ও জনসংখ্যার চাপমুক্ত নগর পাওয়া যাবে। এছাড়া নগরগুলোকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন শহরকে রাজধানী, বাণিজ্যিক রাজধানী ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবা যেতে পারে। ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে মানুষের বসবাস উপযোগী করতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি সবুজ বনায়ন বাড়াতে হবে।

অমল বড়ুয়া : লেখক, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App