×

ফিচার

চার দিবসে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ কোটি টাকা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:১৫ পিএম

চার দিবসে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ কোটি টাকা!

ছবি: ভোরের কাগজ

চার দিবসকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ন্যায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, হাড়িয়া ও পানিসারা মোড়ে বসবে ফুল প্রেমিকদের মেলা। এবারের এই সব দিবসগুলোতে ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ীদের আশা ফুল প্রেমিক দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠবে। এছাড়া গত বছরের তুলনায় ফুলের আশানুরুপ লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

ইতিমধ্যে যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী, হাড়িয়া ও পানিসারায় নাড়া দিচ্ছে বসন্ত। এ মাসেই পহেলা ফাল্গুন বসন্ত উৎসব, ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস, ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। এই চার দিনেই ফুল অতি প্রয়োজনীয়।

পহেলা ফাল্গুন বসন্তকে বরণ করে নিতে রঙিন ফুলের জুড়ি নেই। বিশ্ব ভালবাসা দিবসে প্রিয়জনকে দেয়া গোলাপের সুঘ্রাণে ভালবাসা বেড়ে যায় বহুগুনে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের স্মরণে দেয়া হয় পুস্পার্ঘ। এ কারণে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসজুড়ে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালী, হাড়িয়া ও পানিসারা জুড়ে উৎসবের আমেজ বয়ে চলে।

এই অঞ্চলের ফুলচাষিরাই দেশের প্রায় ৮০ ভাগ ফুলের চাহিদা মেটায়। উৎসবের এই মাসে তাই ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।

এই চার দিবস ঘিরে গদখালী, হাড়িয়া ও পানিসারা ফুলের বাজার ধীরে ধীরে জমে উঠেছে। পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতিপিস ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত যা মাসখানেক আগেও বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। জারবেরা প্রকারভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা। রজনীগন্ধা ৮ টাকা, গ্লাডিওলাস ৮ থেকে ১২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গাঁদা ফুল বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার পাঁচ থেকে সাত শত টাকা পর্যন্ত। ফুলের এমন দামে খুশি চাষিরা। এসব এলাকার লক্ষ্যাধিক মানুষের জীবন জীবিকা নিবাহ করে থাকে ফুল চাষের উপর।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সাবেক সভাপতি মো. আব্দুর রহিম জানান, যশোরে ফুল চাষি রয়েছে প্রায় ৬ হাজার। তারা অন্তত ১৫৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, হাড়িয়া, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে অন্তত ১১ ধরণের ফুল উৎপাদন করা হয়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কলনডালা, চন্দ্রমল্লিকা, টিউলিপসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল শোভা পাচ্ছে। এসব ফুল উৎপাদন করে সারাদেশের মানুষের মন রাঙাছেন এখানকার চাষিরা।

সাম্প্রতিক সময়ে ঠান্ডার দেশের দামি টিউলিপ ফুল চাষ করে সকলকে অবাক করে দিয়েছেন স্থানীয় ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন। তার পাঁচশতক জমিতে ফুঠেছে বিভিন্ন রঙের সাত প্রকারের টিউলিপ ফুল। তিনি জানান, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে তার জমিতে টিউলিপ ফুটেছে। ভালবাসা দিবসে এসব ফুল বিক্রি করা হবে। করোনা আর ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের রেশ কাটিয়ে উঠে চাষিরা আশার আলো দেখছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, গদখালী বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল। ফেব্রুয়ারি ও মার্চের চার দিবসকে ঘিরে ফুলচাষিরা বাড়তি পরিচর্যায় ব্যস্ত। চোখ ধাঁধানো গোলাপ বাগানে ফুলগুলোতে সাদা ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে।

পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুলচাষি রেজাউল ইসলাম চার বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ফুল যাতে দেরিতে ফোঁটে সেজন্য গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়। এ জন্য বাড়তি তিন থেকে চার টাকা খরচ হয়। ভালবাসা দিবসকে টার্গেট করে সেই ফুল বিক্রি করতে পারলে বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব হয়।

হাড়িয়া নিমতলা এলাকার তরুণ ফুলচাষি রাসেল হোসেন জানান, তাদের দেড় বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ রয়েছে। আগে থেকেই কুঁড়িতে ক্যাপ লাগিয়ে রাখার কারণে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই ফুলবিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে গোলাপের দামও অনেক ভাল। এইবার ফুল বিক্রিতে অন্তত এইবার এক লক্ষ টাকা থেকে দেড় লক্ষ লাভ হতে পারে বলে জানান।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, বিভিন্ন কারণে এবারের চার দিবসকে ঘিরে ফুল বিক্রির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। তিনি আরো জানান, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুল উৎপাদন অনেক ভালো হয়েছে সে কারণে, ফুল বাজারে এখন দাম অনেক ভাল। পহেলা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবস যত নিকটে আসবে ফুলের দামও তত বাড়বে।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হাসান পলাশ জানান, গদখালীকে বলা হয় ফুলের রাজধানী। এই অঞ্চলের ফুল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের মনের খোরাক মেটাচ্ছে। ফুলচাষিদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। নতুন নতুন জাতের ফুল চাষের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ফুল চাষিরা টিউলিপ চাষে সফলতা অর্জন করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App