×

মুক্তচিন্তা

কোটার জালে বন্দি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০৯ এএম

কিছুদিন আগে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হলো, যেখানে ৩৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলো। সংখ্যাটা দেখতে কত বেশি, এই নিয়োগ দেখে দেশের শিক্ষিত বেকার যুবক আসার আলো দেখেছিল। পরীক্ষার সব ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করার পর যখন চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন যেদিন প্রকাশ হলো সেদিন এই আশাবাদী যুবকরা এক বুক হতাশা নিয়ে নিরাশা হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এমন অনেক যুবক রয়েছে যারা সেদিন থেকেই নিজের প্রতি শেষ বিশ্বাসটুকু জলাঞ্জলি দিয়েছে। এখন আপনারা ভাবতে পারেন তারা নিয়োগ পায়নি সেটা তাদের দুর্বলতা। যদি তারা ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতো তাহলে তাদের নিয়োগ হতে বাধ্য হতো। এই কথা যে মিথ্যা সে কথা আজকের এই লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করব। যেদিন চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হলো সেদিন যখন সাধারণ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হলো- সেদিনই পত্রিকায় একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে দেখানো হয়েছে পোষ্য কোটা, নারী কোটা আর বিজ্ঞান কোটার হিসাবের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীকে খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই নিয়োগের এক বড় অংশ দেয়া হয়েছে পোষ্য কোটাধারীদের। নিয়োগ যদি এমন করে দেয়া হয় তাহলে যতগুলো পোস্ট ফাঁকা হবে ততগুলোই এই পোষ্য কোটাধারীদের নিয়োগপত্র জমাদানের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়াটাই কি সঠিক পন্থা নয়। আপনার এতগুলো যুবকের স্বপ্ন নিয়ে খেলা করলেন, এর জবাব কে দেবে? কে তাদের হাহাকারের সঠিক সান্ত¡না প্রদান করবে? হতে পারে কারো জন্য হয়তো এই নিয়োগটাই ছিল জীবনের শেষ নিয়োগ পরীক্ষা। শেষ পর্যায়ে এসে কোটা নামক আজব হিসাবের কাছে হেরে গেল। যেখানে তার চেয়ে কম যোগ্য আর কম নম্বর পেয়েও বিজয়টা অর্জন করল কোটার কারণে। বাংলাদেশের এমনই আরো একটা সেক্টর রয়েছে যেখানে সাধারণ বেকার যুবকদের জন্য নিয়োগ নীতিমালা প্রদান করা হয়। কিন্তু যখন চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হয় তখন ঘুরেফিরে কোটার কাছে হেরে যাওয়া। প্রতি বছর সরকারকে রেলওয়েতে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। যেখানে লাভ হওয়ার কথা সেখানে লোকসান, এ যেন ধরা-বাঁধা নিয়ম। আর কোটা হিসাবের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যারা কোনো শিক্ষকের সন্তান নয়। নয় কোনো মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বা রেলওয়ে কর্মচারীর সন্তান, তারা আজ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে। দেশ-জাতিকে ভালো কিছু উপহার দেয়ার যে অঙ্গীকার করে শিক্ষা অর্জন করেছিল সেই অঙ্গীকারকে মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে। এ কেমন হিসাব আর এ কেমন নিয়ম। একটা আধুনিক সভ্য সমাজে এমন একপেশে নিয়ম চালু থাকে কোন ক্ষমতার মাধ্যমে। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল, যেখানে দেশের শিক্ষিত মেধাবীরা এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ২৯-এর ১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। অনুচ্ছেদের ২৯-এ ৩-এর ক-তে বলা হয়েছে, নাগরিকদের যে কোনো অগ্রসর প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারিবেন সেই উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান উন্নয়ন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিভৃত করিবে না। যেখানে বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্ট করে বিধান করে দেয়া হয়েছে সেখানে কোন ক্ষমতা বলে এমন রাজত্ব চলছে, সেটাই ভাববার বিষয়। এ দেশের চাকরি নিয়োগের যে দশা শুরু হয়েছে তাতে দেখা যাবে অযোগ্য লোক দিয়ে ছেয়ে যাবে দেশ আর যোগ্য লোকগুলো হাহাকার করতে থাকবে। তাই সাধারণ শিক্ষিত যুবক হিসেবে আমাদের আবেদন দেশের যারা সেবক হবে তাদের যেন যোগ্যতার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়।

জাফরুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App