×

সাহিত্য

অনেক স্টলে এখনো ঠুকঠাক শব্দ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৩ পিএম

অনেক স্টলে এখনো ঠুকঠাক শব্দ

ফাইল ছবি

যদিও এখনো অনেকটাই অগোছালো, এখানে সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে ইটের স্তুপ, হাতুড়ি পেরেকের ঠকঠক শব্দ। তবুও ছিমছাম পরিবেশ। শীতের হালকা বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময় যত এগোচ্ছে, সন্ধ্যা যত ঘন হচ্ছে ততই পরিবর্তিত হচ্ছে মেলার চেহারা। প্রথম দিন মেলা ঘুরে দেখা যায়, দিনের শেষ মুহূর্তে এসে প্রত্যেকের মুখেই যেন উচ্ছ্বাস।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা গড়াতেই প্রাণের মেলা বইমেলায় ভিড় বাড়তে থাকে বইপ্রেমীদের। অনেকেই আসেন প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে। প্রত্যেকেই আশাবাদী, মেলার সামনের দিনগুলো নিয়ে। তবে মেলার অগোছালো ভাব দেখে হতাশ হয়েছেন অনেকেই। কোথাও কোথাও স্টলের আশেপাশে নির্মাণ সামগ্রী আর সাজ সজ্জা উপকরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিকেলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গেলেও বইমেলার ভেতর অধিকাংশ স্টলে এখনও হাতুড়ি-বাটালের শব্দে শোনা যাচ্ছে। কাজ শেষ করে গুছিয়ে উঠতে পারেনি প্রায় পঞ্চাশের অধিক স্টল। প্যাভেলিয়নগুলো (স্টল) অনেক আগেই গুছিয়ে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। ছোট ছোট স্টলের মাঝখানে এসব প্যাভিলিয়ন ঝলক দিচ্ছে। এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি বেশ কিছু অংশ। বেশিরভাগ স্টলেই চলছে কাজ শেষ করার জোর প্রস্তুতি।

এদিকে, মেলার বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে বই দেখেছেন আগত দর্শনার্থীরা। আর মেলার পরিধি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় নতুন বইয়ের পরিচিত গন্ধে প্রাণ ভরে মনোরম সন্ধ্যায় শ্বাস নিয়েছেন তারা।

প্রকাশক ওসমান গনি বললেন, অনেকদিন পরে মুক্ত বাতাসে বইমেলার আয়োজন হলো। আশাকরি এই মেলা সফল হবেই। তবে বড় বেশি ঠাসাঠাসি হয়েছে। আরো ছিমছাম হতে পারত। এতো বড় জায়গায় মেলা করার প্রয়োজন আছে কী? বড় হতে হতে মেলার গুণগত মান হারাচ্ছে। স্টল বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছু নয়, মেলার আসল উদ্দেশ্য বই।

বইমেলায় আগত কয়েকজন দর্শনার্থী ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে মেলায় আশা নিয়ে শঙ্কা ছিল। মেলার আয়োজনও ছিল অনেকটা স্বল্প পরিসরে। তবে সব দ্বিধা কেটে এবার মেলার আয়োজনটা হয়েছে পরিপূর্ণভাবে। আর কোন ভয় নেই। প্রথম দিন আমরা এসেছি মূলত দেখতে। শুনছি এবার স্টল বেড়েছে। তাছাড়া মেলার সাজসজ্জাতেও বেশ মনোযোগ দেয়া হয়েছে। আশা করছি, সময় পেলেই চলে আসব।

কয়েকটি স্টলের বিক্রেতারা জানান, উদ্বোধনের দিনে নানা ব্যস্ততা থেকে কেটে যায়। গত দুই বছরে হাত ছেড়ে বেঁচে এবার পূর্ণোদ্যমে আমরা মেলায় ফিরেছি।

‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলা সাহিত্যের মাধুর্যের দিক তুলে ধরে তা বিদেশিদের জানানোর তাগিদ দিয়েছেন। দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, বন, পাখির ডাক সব কিছুর মধ্যেই যে আলাদা সুর ছন্দ আছে সে কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলা সাহিত্যের এই মাধুর্য বিদেশিদের জানানোর জন্য বাংলা একাডেমিকে বিশেষ সাহিত্য মেলা আয়োজনের আহবান জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ভাষা-সাহিত্য চর্চাও ডিজিটালাইজড করার আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি প্রত্যেকটা সাহিত্যকর্মের অডিও ভার্সন করারও তাগিদ দেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, প্রকাশক প্রতিনিধি বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

শুরুতে শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরের ধারার শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও ঐতিহাসিক ভাষার গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। বইগুলো হলো- শেখ হাসিনা সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলি ১ম খণ্ড, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনী আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি, মুহম্মদ নূরুল হুদা সম্পাদিত চারটি বই- অসমাপ্ত আত্মজীবনী: পাঠ-বিশ্লেষণ, কারাগারের রোজনামচা : পাঠ-বিশ্লেষণ, আমার দেখা নয়াচীন: পাঠ-বিশ্লেষণ, জেলা সাহিত্যমেলা এবং প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের সাবিত্রী উপাখ্যান উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ দি ম্যাটার অব সাবিত্রী।

বইমেলা উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা পরিদর্শন করেন।

প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে মেলা চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১ টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। শুক্র ও শনিবার মেলার প্রবেশদ্বার খোলা হবে সকাল ১১টায় আর ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল আটটা এবং চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।

বাংলা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন যারা

বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করেন। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- কবিতায় ফারুক মাহমুদ, তারিক সুজাত, কথাসাহিত্যে তাপস মজুমদার, পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ/গবেষণায় মাসুদুজ্জামান, অনুবাদে আলম খোরশেদ, নাটকে মিলন কান্তি দে, ফরিদ আহমদ দুলাল, শিশুসাহিত্যে ধ্রুব এষ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় মুহাম্মদ শামসুল হক, বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক গবেষণায় সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞানে মোকারম হোসেন, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনিতে ইকতিয়ার চৌধুরী, ফোকলোরে আবদুল খালেক, মুহম্মদ আবদুল জলিল। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে তিন লক্ষ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App