×

অর্থনীতি

৪৫০ নয়, ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে আইএমএফ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪২ পিএম

৪৫০ নয়, ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে আইএমএফ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের জন্য চারশ ৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। জলবায়ু মোকাবেলা ও উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ গড়তে উচ্চাভিলাষী কার্যক্রম এবং অবকাঠামো খাতে উন্নয়নে এই সহায়তা দিয়েছে আইএমএফ। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে অনুষ্ঠিত আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে এ ঋণ অনুমোদন করা হয়।

আইএমএফ-এর নবগঠিত রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) অধীনে একশ ৪০ কোটি ডলার ও বর্ধিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ) এবং বর্ধিত তহবিল সুবিধার (ইএফএফ) আওতায় পাচ্ছে তিনশ ৩০ কোটি ডলার বাংলাদেশ। দুই খাত মিলিয়ে বাংলাদেশ সর্বমোট চারশ ৭০ কোটি ডলার পাবে। দেশীয় টাকায় এর পরিমাণ ৫০ হাজার ২৯০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসেবে।

৪২ মাসের চুক্তিতে এ অর্থ পাবে বাংলাদেশ। সুদের হার হবে ২.২ শতাংশ। সমঝোতা অনুযায়ী শেষ কিস্তি বাংলাদেশ হাতে পাবে ২০২৬ সালে। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আইএমএফ থেকে বাংলাদেশেই প্রথম এ ঋণ পেল। শিগগিরই ৪৭৬ মিলিয়ন ডলার (দেশীয় টাকায় প্রায় ৫ হাজার ৯৩ কোটি টাকা) ছাড় করবে আইএমএফ। আইএমএফ পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা যায়।

সংস্থাটি জানায়, মহামারি থেকে বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হবে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ দেশের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে, যার ফলে বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি রয়েছে, টাকার অবমূল্যায়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে।

বাংলাদেশ স্বীকার করে যে, এই তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার পাশাপাশি, দীর্ঘস্থায়ী কাঠামোগত সমস্যা সমাধান জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত দুর্বলতাগুলোকেও প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে, ব্যক্তিগত বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে হবে বলে মত দিয়েছে আইএমএফ। এসব সমস্যা মোকাবিলায় আইএমএফের ঋণ সহায়ক হবে। এই সর্বশেষ অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ সংস্থাটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যে আরও টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সরকারকে তার উচ্চাভিলাষী সংস্কার কার্যক্রমের গতি বাড়াতে হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হতে গেলে মানবসম্পদ ও অবকাঠামো খাতে আরও বিপুল বিনিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও তা জরুরি।

আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আরও বলেন, আর্থিক খাতের দুর্বলতা কমলে, নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা উন্নত করা হলে ও পুঁজিবাজারের উন্নতি করা গেলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা সম্ভব হবে।

এছাড়া প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন আইএমএফের ডিএমডি। সে জন্য দরকার, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সহায়ক পরিবেশ তৈরি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন। চারশ ৭০ কোটি ডলারের ঋণ পেতে ও চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার কয়েক মাস ধরেই সংস্কার কর্মসূচি পরিচালনা করছে। চলতি জানুয়ারিতে যখন আইএমএফের ডিএমডি বাংলাদেশ সফরে আসেন, তখন এসব সংস্কারে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। মৌলিক এসব সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রতিও আইএমএফের ডিএমডি গুরুত্বারোপ করেন তখন।

ঋণ আলোচনা চূড়ান্ত করতে ১৪ জানুয়ারি পাঁচ দিনের সফরে দেশে আসেন আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্যও দেন তিনি।

এ ঋণ পাওয়া পর আইএমএফের প্রতিকৃজ্ঞতা জানিয়েছেন আর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে আইএমএফ হয়তো বা এই ঋণ দেবে না। তারা ভেবেছিল আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাসমূহ দুর্বল তাই আইএমএফ এ ঋণ প্রদান থেকে বিরত থাকবে। এ ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক এলাকাসমূহ শক্ত ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে আছ এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভালো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App