×

সম্পাদকীয়

ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সর্বস্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১০ এএম

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতি। এতে ব্যবসা পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, যথেষ্ট ঋণ না পাওয়া, অদক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা এবং সুশাসনের অভাব। এসব সমস্যার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট ও অস্থায়ী নীতি ব্যবসার পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলেছে। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পৃথক দুটি জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গত রবিবার। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৭৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সরাসরি দুর্নীতির শিকার। করোনা-পরবর্তী সময়ে এটি আরো ভয়াবহভাবে বেড়েছে। লাইসেন্স গ্রহণ ও কর পরিশোধে সবেচেয়ে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসা শুরুর লাইসেন্স পেতে ও নবায়ন করতে ১৪-১৫টি ক্ষেত্রে ঘুষ দিতে হয়। অপরদিকে ৬৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা মনে করেন আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতি হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান আমাদের শঙ্কিত করে। দুর্নীতি দেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। দুর্নীতি প্রতিরোধে বর্তমান সরকারের দৃঢ় অবস্থান এবং জিরো টলারেন্স নীতি অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু দুর্নীতির মূলোৎপাটন কেবল সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সর্বস্তরের জনগণের সদিচ্ছা ও নৈতিকতার চর্চা সমাজের সব ক্ষেত্র থেকে দুর্নীতি দূর করবে বলে আমরা মনে করি। সরকারি ও বেসরকারি সব খাত দুর্নীতিমুক্ত করতে না পারলে দেশের সার্বিক অগ্রগতি থমকে যাবে। দেশে দুর্নীতির কারণে একদিকে ব্যবসাক্ষেত্র যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অপরদিকে দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হচ্ছে। অর্থ পাচার ঠেকানো সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জরিপের তথ্যমতে, ২০২১-এর তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে বেশি। যা একটি বড় সমস্যা হিসেবেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। সারা বিশ্ব এখন এক অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত মন্দাভাব থাকবে। দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ মূল্যস্ফীতির কারণে দিশাহারা। এর মধ্যে ব্যবসা খাতে দুর্নীতি দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি। দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া চলবে না। দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়া এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করতে হবে। আমাদের দেশে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে বৈদেশিক মুদ্রার উত্থান-পতন, আমলাতন্ত্র ও মূল্যস্ফীতি। বড় ব্যবসায়ীদের জন্য এসবের পাশাপাশি অবকাঠামোর অপ্রতুলতা সমস্যার সৃষ্টি করছে। এছাড়া জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপেশাদার আচরণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে জরিপে। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিভিন্ন নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা নেয়া। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একটি বড় সংস্কার নিশ্চিত করা অর্থাৎ ঢেলে সাজানো জরুরি। আরো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। মোট কথা, আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এসব পরামর্শ আমলে নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য খাতসহ দেশের সর্বস্তরে সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ করার কোনো বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App