×

জাতীয়

ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩২ এএম

ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি

ফাইল ছবি

উসকানি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ নির্বাচন পর্যন্ত দলের শক্তি ধরে রাখার চিন্তা

বিএনপির সরকার পতন আন্দোলনের মূলমন্ত্র- ‘দেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’। তবে এই রাজপথকে সহিংস বানাতে চায় না দলটি। সেজন্য দাবি আদায়ে কর্মসূচির বিপরীতে সরকারের পাল্টা কর্মসূচি উসকানিতেও শান্তিপূর্ণ থাকতে চায় বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, ষড়যন্ত্রমূলক কোনো পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে ভিন্ন কৌশল নিয়ে ভাবছেন তারা। তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও এমন বার্তা দেয়া হয়েছে। এমনকি অতীতের মারমুখী আন্দোলন থেকে সরে এসে কর্মসূচি দেয়ার ক্ষেত্রেও কৌশলী দলটি।

বিএনপির নেতাদের ভাষ্য- আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে বিএনপিকে মূলত ভয় দেখাতে চায়। একই সঙ্গে বিএনপির মিছিল সমাবেশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। তবে বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করুক বা কোনো ধরনের সংঘাত হোক, সেটি তারা চান না। জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার পায়ে পাড়া দিয়ে আমাদের সঙ্গে ঝামেলা করতে চাইছে। প্রতিটি কর্মসূচির বিপরীতে কর্মসূচি দিয়ে আমাদের আন্দোলন নস্যাৎ করার ফন্দি-ফিকির করছে।

বিএনপির মহাসচিবের অভিযোগ- নির্যাতন-নিপীড়নের খড়ক নামিয়েও দমিয়ে রাখতে না পেরে বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে উসকানি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের রাগ এবং ভয়ের কারণই হচ্ছে বিএনপির আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তিনি বলেন, জনগণকে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ করে, আরো সম্পৃক্ত করে এই ভয়াবহ দানব সরকারকে সারানোর বাইরে আমাদের কোন চিন্তা নেই। এবার বিএনপি কোনোভাবেই উসকানিতে পা দেবে না। কর্মসূচি যাতে শতভাগ শান্তিপূর্ণ হয়, সেটি দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অভিযোগ- বিএনপির কর্মসূচির ডাকলেই ওইদিনই আওয়ামী লীগের ‘পাহারা’ কর্মসূচিসহ সভা-সমাবেশ যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত ১০ ডিসেম্বর পাহারার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের মোড়ে মোড়ে চৌকি বসিয়ে পথচারীদের মুঠোফোন তল্লাশি করেছে। যাদের মুঠোফোনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বার্তা দেখেছেন, তাদের ‘শাস্তি’ও দিয়েছেন।

তারা বলেন, যেদিন ঢাকা শহরে গণমিছিল কর্মসূচি ছিল সেদিন আওয়ামী লীগও মাঠে ছিল। তারা ঢাকার দুটি স্থানে গণসমাবেশ করেছে। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরাও পাড়ায় পাড়ায় পাহারা দেয়ার কাজ করেছেন। এরপর গণঅবস্থান, বিক্ষোভ সমাবেশ, পদযাত্রাসহ সব কর্মসূচিতেই আওয়ামীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে নানাভাবে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করেছে।

নেতাদের আক্ষেপ- রাজনীতিতে বিএনপি সব সময়ই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে চলতে চায়। এর উদাহরণ হলো-কেন্দ্রীয় সম্মেলনের কারনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনুরোধে দলীয় কর্মসূচি পিছিয়ে নেয় বিএনপি। দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা ও জেল-জুলুমের প্রতিবাদে ২৪ ডিসেম্বর বিএনপি সারাদেশে গণমিছিলের কর্মসূচি পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর সেটি পালন করে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষায়-বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা যাতে কোনো রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত করতে না পারে, সে জন্যই তারা পাহারায় ছিলেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত দলের শক্তি ধরে রাখতে চায় বিএনপি। কারণ বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের দাবি উপেক্ষা করে ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ফের ক্ষমতায় আসার প্রানপণ চেষ্টা করবে। তাদের ঠেকাতে আন্দোলনের মাধ্যমে মরণ কামড় দিতে হবে। এজন্য এই মুহূর্তে সব শক্তি ক্ষয় হলে পরে পস্তাতে হবে। তাই আরো অন্তত ছয় মাস কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। ইস্যুভিত্তিক জনসম্পৃক্ত শাস্তিপূর্ণ কর্মসূচির পাশাপাশি নেতাকর্মীদের অনীহা তৈরি হয় এমন কর্মসূচিও এড়িয়ে চলবে দলটি।

সূত্রের দাবি, নির্বাচন মাফিক দাবি আদায়ে আন্দোলন কর্মসূচিকে দুই ভাগ করে সাজানো হচ্ছে পরিকল্পনা। যাতে বৈরি পরিবেশ সৃষ্টি হলেও রাজপথ ছেড়ে দিতে না হয়। একই সঙ্গে নেতাকর্মীরাও ক্লান্ত হয়ে না পড়ে। সেই হিসেবে আগামী অক্টোবর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সেপ্টেম্বর নাগাদ চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। এজন্য এখনই সরকারের ফাঁদে পা দিয়ে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে সাধারণ কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে চায় না বিএনপি। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির ৯ কর্মী নিহত হয়েছেন।

সূত্র জানায়, তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে কোনো স্যাবোটাজ (অন্তর্ঘাতমূলক কাজ) করতে না পারে, সে ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছে বিএনপি। দলটির নেতাদের শঙ্কা, প্রত্যেক কর্মসূচির দিন সরকার ইচ্ছা করে কর্মসূচি দিয়ে বিএনপিকে সহিংস কর্মসূচি দিতে বাধ্য করতে চায়। যাতে বিগত দিনের মতো এই অজুহাতে সরকারও সর্বোচ্চ হার্ডলাইনে চলে যেতে পারে। দেশব্যাপী জ্বালাও পোড়াও করে বিএনপির ওপর দায় চাপানো হবে। সারাদেশে নেতাকর্মীদের আরো ব্যাপক ধরপাকড় করবে। সহজে তাদের জামিনও হবে না। এর ফলে বিএনপি আবারো ব্যাকফুটে চলে যেতে বাধ্য হবে। সব হিসেবে মিলিয়ে বছরব্যাপী ধাপে ধাপে নরম থেকে গরম কর্মসূচির পথে হাঁটবে বিএনপি।

বিএনপির চলমান কর্মসূচির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রশ্ন রেখেছেন হঠাৎ বিএনপি এত শান্ত কেনো? ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যকে উসকানি মন্তব্য কবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার সংঘাতের উসকানি দিচ্ছে। তবে বিএনপি সরকারের ফাঁদে পা দেবে না। সরকার চাইছে বিএনপি এই মুহূর্তে এক দফা নিয়ে রাজপথে নামলে সেই সুযোগ তারা কাজে লাগাবে। তাদের এই আশা পূরণ হবে না। বিএনপি এবার রয়ে-সয়ে কৌশলে কর্মসূচি দেবে। কারন, আন্দোলনের গতি সব সময় এক রকম থাকে না।

তিনি বলেন, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের গতি পায়। তবে ঘটনার গতি-প্রকৃতি যাই থাকুক সরকারবিরোধী আন্দোলনে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে থাকব। আমরা সবুর করে ছিলাম। সবুরে মেওয়া ফলে। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। বিএনপির গণজাগরণ শুরু হয়েছে। এটাকে সিনেমার ট্রেইলার মনে করতে পারেন। পুরো সিনেমা এখনো বাকি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।

পরিবর্তন আসছে কর্মসূচির ধরনে : ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপি জোটের আন্দোলনে দেশজুড়ে হয় চরম সহিংসতা। হরতাল অবরোধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশ। ২০১৫ সালে টানা ৯৩ দিনের টানা হরতালে ফের রাজপথ উত্তাল করে বিএনপি। সে সময়ে আগুন সন্ত্রাসের তকমা লাগে বিএনপির গায়ে। এজন্য দলের নগর কমিটির নেতাদের দায়ী করে আসছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ফলে গত ৭ বছরে ব্যাপক বদলেছে বিএনপির কর্মসূচির ধরন। দলটি এখন সভা সমাবেশে, গণঅনশন, মানব বন্ধন, স্মারক লিপির মতো কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে আস্থায় এনে গণঅভ্যুথানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে চায়। ধীরে ধীরে গরম কর্মসূচিতে যেতে চায় তারা। সেক্ষেত্রে হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচির চিন্তাও রয়েছে। দলটির নেতারা মনে করেন, বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনের ভুলগুলো আর করা যাবে না। বরং এমন কৌশল নিয়ে রাজপথে নামতে হবে যাতে আন্দোলন মুখ থুবড়ে না পড়ে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App