×
Icon ব্রেকিং
জয়দেবপুরে যাত্রীবাহী ট্রেনে সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ

জাতীয়

খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আরো এক দফা বাড়ানো হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৪ এএম

খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আরো এক দফা বাড়ানো হবে

ফাইল ছবি

আর্থিক সংকটে ভর্তুকি থেকে সরে আসতে চায় সরকার

অস্থিরতার কারণে জ্বালানি খাত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যেন কমছেই না। একদিকে সরকার তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি থেকে সরে আসতে জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ এই মুহূর্তে দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর ব্যবসায়ীরা একে অসহনীয় বলছেন। অল্প সময়ের মধ্যে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আরো এক দফা বাড়ানো হবে বলে গুঞ্জন উঠেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোরও আশঙ্কা করছেন ভোক্তারা। একের পর এক জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নাভিশ্বাস উঠেছে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশীয় জ্বালানি খাতে অস্থিরতা বিরাজমান।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে সরকার তেল-গ্যাস বিক্রিতে লাভে রয়েছে। তাই ঘন ঘন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত হবে না। যদিও গ্যাসের কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও সার্বিকভাবে এখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। কয়েক মাস আগেও বিদ্যুতে লোডশেডিং যে অবস্থায় পৌঁছেছিল, তার চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অনেক ভালো। রাজধানীতে লোডশেডিং এখন নেই বললেই চলে। শীত মৌসুমের কারনে বিদ্যুতের ব্যবহার কম হলেও আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীর বাইরে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই। পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতি হয়নি। আগামী মার্চ মাস থেকে সেচ মৌসুম শুরু হলে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা সামনে আসবে। শীত মৌসুমের কারণে বর্তমানে ১০ হাজার মেগাওয়াটের নিচে চাহিদা রয়েছে। তারপরও উৎপাদনে বিদ্যুৎ বিভাগকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখনই এই অবস্থা সামাল দিতে না পারলে আগামী মার্চ থেকে লোডশেডিং আবারো জনগণের ভোগান্তিতে পরিণত হবে।

এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের জন্য দুঃসংবাদ হলো- বিদ্যুতের দাম আরো এক দফা বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জানিয়েছেন, জ্বালানিতে বড় ধরনের ভর্তুকি দেয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য সরকারের নেই। বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের আর্থিক সংকট চলছে। বাংলাদেশও এর বাইরে না। করোনা মহামারির পর যখনই সারাবিশ্ব ঘুরে দাঁড়ানোর জোর চেষ্টা শুরু করে ঠিক তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। অনেক দেশ আর্থিক সংকটের কারণে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ সেই অবস্থায় না গেলেও আর্থিক সংকট রয়েছে। জ্বালানিতে বড় ধরনের ভর্তুকি দিতে হয়। আর্থিক সংকটের কারণে বড় ধরনের ভর্তুকি দেয়ার মতো সামর্থ্য কমেছে।

তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারছি, বিদ্যুতের দাম বাড়ালে মানুষের কষ্ট হবে। কিন্তু আমাদেরও উপায় নেই। বিদ্যুতে ভর্তুকি কমাতে হলে দাম বাড়াতেই হবে। দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর অন্য কোনো সুযোগ থাকলে আমরা তা নিতাম। সরকারের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। একবারে না, আমরা ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে চাই।

দেশে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকই গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই সব কেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ১৪ টাকায় কিনতে হবে। গ্যাসের দাম এক লাফে প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাবে বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৯ টাকা। এই অবস্থায় গ্যাসের নতুন দাম কার্যকর হলে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ আরো ১ টাকা বাড়বে। এতে বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবির প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। এই বাড়তি টাকা আদায় করতে বা লোকসান কমাতে অথবা সমন্বয়ের প্রধান পথই হচ্ছে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো। দাম না বাড়ালে সরকারকে ভর্তুকি বাড়াতে হবে।

বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। সরকার বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে ভর্তুকি কমাতে এখন থেকে প্রতি মাসেই বিদ্যুতের দাম অল্প অল্প করে সমন্বয় করা হবে।

এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে সরকার তেল-গ্যাস বিক্রিতে লাভে রয়েছে। তাই ঘন ঘন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত হবে। দাম না বাড়িয়েও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা যায়।

ভূতত্ত্ববিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি বলেই আজকের দিনে আমাদের সংকটে পড়তে হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি করে ফেলেছি। বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট সামনে আসার পর আমাদের দুর্বলতাগুলো প্রকাশ পেয়েছে। আজ থেকে ৫ বছর আগে দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধান ও উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হলে এখন গ্যাসের উৎপাদন বাড়ত। গ্যাসের উৎপাদন বাড়লে বিদ্যুতের উৎপাদনে ঘাটতি থাকত না, সংকটও তৈরি হতো না।

তিনি বলেন, মাটির নিচের কয়লা তুলে ব্যবহারে সুফল মিলবে। আগামীতে কয়লাভিত্তিক যেসব বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো উৎপাদনে আসছে তার জন্যও তো বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে। আমরা দেশের কয়লার ব্যবহার করতে পারলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি নির্ভর না হয়ে স্থানীয় উৎসগুলোর ওপর নির্ভরতা বাড়তে হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই সরকার জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমাতে এতো তোড়জোড়ের কারণ খুঁজে পাই না। এই মুহূর্তে সরকার তেল-গ্যাস বিক্রিতে লাভে রয়েছে। তাই ঘন ঘন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত হবে না। দাম না বাড়িয়েও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা যায়। মূল্যস্ফীতির এই দুঃসময়ে সরকারের আরো ভর্তুকি দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App