×

মুক্তচিন্তা

অপপ্রচার-মিথ্যাচারের শিকার পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষার্থী ও গোটা জাতি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১০ এএম

আবার সেই একই অপশক্তির মাঠে নামার দৃশ্য। এই অপশক্তিটি কেবলই অপবাদ দেয়ার জন্য হাজির হয়, মুখিয়ে থাকে কখন দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় সরকার কোনো পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেয়। শিক্ষাকে এরা ভয়ানকভাবে নজরদারিতে রাখছে, কিছুতেই দেশে যেন একটি যুগোপযোগী আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে। মনে আছে বঙ্গবন্ধু যখন ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি তৈরি করেছিলেন তখনই একটি গোষ্ঠী এই কমিশনের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার মাঠে, ঘাটে আর মানুষের কানে কানে পৌঁছে দিচ্ছিল। ’৭৫ এর পর এত বছর কেটে গেছে, এখনো কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আক্রমণ যেন থেমে নেই। যারা কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করে এত বছর ধরে বেরিয়ে এসেছেন, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি তাদের কেউই ওই কমিশনের রিপোর্ট দেখতে কেমন, এর ভেতরে কী লেখা ছিল, সেটি কত পৃষ্ঠার- এর কিছুই তারা কখনো চোখে দেখেননি। কোথাও তারা পড়ে দেখারও চেষ্টা করেননি। কিন্তু কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আজগুবি সব কথাবার্তা বলছেন, অন্যদেরও শোনাচ্ছেন। শিক্ষানীতির কথা উঠলেই তাদের মাথাব্যথাটা প্রচণ্ড আকার ধারণ করে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে অধ্যাপক মুহাম্মাদ ড. শামসুল হকের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। তখনো একই কাণ্ড ঘটতে দেখেছি। শুধু সমালোচনাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে মিছিল, সভা, সমাবেশ করেও শিক্ষা কমিশন গঠনের বিরোধিতায় তারা নেমে পড়েছিল। আবার ২০০৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে নতুন শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল। তখনো একই অপশক্তি শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে বক্তৃতা-বিবৃতি, সমালোচনা, এমনকি মিছিল, সভা, সমাবেশও করেছিল। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া জোট সরকারের আমলে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়েছিল। শিক্ষানীতিও প্রণীত হয়েছিল। কিন্তু তাদের কোনো শিক্ষানীতি বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও তাদের কোনো মাথাব্যথা দেখা যায়নি। কিন্তু এ কথা তো মানতেই হবে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলেন সেটি বাস্তবায়িত হলে আজকে শিক্ষাব্যবস্থায় যে ১২-১৩টি ধারা, উপধারা দেখা যাচ্ছে তা সৃষ্টি হতো না, শিক্ষায় বাণিজ্য, মানহীন সংকট এবং নৈরাজ্যও এভাবে বিস্তার ঘটার সুযোগও পেত না। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা হয়তো দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এতদিনে অনেককিছুই গর্ব করতে পারতাম। শিক্ষানীতিবিহীন কোনো শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক কোনো রাষ্ট্রে থাকতে পারে না, চলতে দেয়া যায় না। কিন্তু আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে যেভাবে চলতে দিয়েছি তার ফলে দেশে মানসম্মত শিক্ষা, মানবসম্পদ সৃষ্টি ও একটি জাতি গঠন এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমগ্র জাতিকে প্রস্তুত করার তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য শিক্ষা আমরা দাঁড় করাতে পারিনি। এমন অবস্থার মধ্যেও যখনই শিক্ষানীতি প্রণয়ন, নতুন শিক্ষাক্রম প্রস্তুত করা এবং শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, পঠন-পাঠন ইত্যাদির উদ্যোগ নেয়া হয়, তখনই দেশে একই অপশক্তি হইচই ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। সবাই তখন যেন পাঠ্যপুস্তক বিশারদ হয়ে ওঠেন! পাঠ্যপুস্তকে এই নেই, সেই নেই, কেন এটা হলো, কেন সেটা হলো না, শিশুদের গিনিপিগ বানানো হচ্ছে, শিশুদের এটাসেটা শেখানো যাবে না- এমন হাজারো রকমের নসিহত তখন চারদিক থেকে চলতে থাকে। পাঠ্যবই নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা হতেই পারে। কোনো তথ্যগত ভুলভ্রান্তি থাকলেও সেটিও ধরিয়ে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু পাঠ্যবই নিয়ে যেভাবে অপপ্রচার, মিথ্যাচার এবং সাম্প্রদায়িক নানা উসকানিমূলক কথাবার্তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতায় নামা হয় সেটি খুবই বিস্ময়কর এবং জাতির জন্য অকল্যাণ ছাড়া কিছুই বয়ে আনার কোনো লক্ষণ দেখার আশা করা যায় না। বিশেষত এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন বিষয়কে নিজেদের ইচ্ছামতো জোড়াতালি দিয়ে যেভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে তা খুবই দুঃখজনক। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছে। কয়েকটি শ্রেণিতে এ বছর নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী রচিত পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। তাতে কিছু কিছু বইয়ে তথ্যগত কিছু ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে। যারা এ ভুলগুলো দেখিয়ে দিয়েছেন তারা পাঠ্যপুস্তক বোর্ডেরই উপকার করেছেন। এ ধরনের নজরদারিকে অবশ্যই আমরা স্বাগত জানাই। যেসব ভুল এরই মধ্যে ধরা পড়েছে সেগুলোর সংশোধনী এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ অনলাইনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করার ব্যবস্থা করতে পারে। এমনটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও পাঠ্যপুস্তক বা অন্যান্য বইতে ঘটলে তা করা হয়ে থাকে। আমাদের এখানে অতীতে সঙ্গে সঙ্গে করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখন প্রযুক্তির সহযোগিতায় খুব সহজেই সংশোধনী দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এজন্য এক বছর অপেক্ষা করে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। পরের বছর যথারীতি সংশোধনীসহ পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশ করা হবে এটি ধরেই নেয়া যায়। এত গেল তথ্যগত ভুলভ্রান্তি সংশোধন করা প্রসঙ্গে। কিন্তু যেটি এরই মধ্যে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে তা খুবই ভয়ানক। পাঠ্যবইয়ে লেখা হয়েছে যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ঘুরিয়ে দিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো প্রচার, অপপ্রচার, বানোয়াট ও মিথ্যাচার ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, যা এক কথায় সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। সামাজিক গণমাধ্যমে এখন পাঠ্যপুস্তকের খণ্ডিত অংশ নিয়ে বানোয়াট ট্রল করা হচ্ছে। এসব ট্রল অনেকেই দেখছেন, বিস্মিত হচ্ছেন, ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই পাঠ্যবইয়ে কী লেখা আছে তা জানার অবস্থানে নেই। অনেকেই এজন থেকে সেজনে বিষয়গুলো পাচার করছেন। কেউ বুঝে করছেন, কেউ না বুঝে করছেন। তবে বেশির ভাগই বইয়ের পাতায় কী লেখা আছে তা যাচাই-বাছাই করে দেখছেন না। দেখলে প্রকৃত সত্যটা জানতে পারতেন, বুঝতে পারতেন। অবশ্য সবাই শিক্ষাদীক্ষায় এক মানেও নেই। তাই এই অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যারা পাঠ্যপুস্তক পড়ে দেখার পর্যায়ে নেই। এর ফলে লাভবান হচ্ছে সেই অপশক্তি যারা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশে একটি শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাক্রম পরিচালিত হোক সেটি চায়নি। তারাও অনেকেই শিক্ষার মৌলিক আদর্শ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা বা শেখার সুযোগ পায়নি। আবার অনেকে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে নানা অব্যবস্থাপনা সৃষ্টির সুযোগ নিয়ে বাণিজ্য বেসাতি করে বেড়াচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থেই এখন তারা দেশে একটি আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাক্রম চালু হোক তা মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারছে না। রাজনৈতিকভাবেও সমাজটি গত ৫০ বছরে বহুধাবিভক্ত হয়ে গেছে। অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতি, শিক্ষা সংস্কৃতি কোনো কথার কথা নয়। এটি একটি জ্ঞানভিত্তিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতিরও বিষয়। সেই ধারণা অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতির সর্বত্র জেঁকে বসেছে। তারা এটিকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশি শিক্ষা নিয়ে টানাটানি, ভাগাভাগি এবং বিভাজনের দৌরাত্ম্য ও দ্ব›দ্ব এখানেই বিশেষভাবে নিহিত। শিক্ষাকে আমরা জাতির মেরুদণ্ড বলি। কিন্তু ক’জনই এর মানে ঠিক বুঝতে পারেন জানি না। কজনইবা শিক্ষা বলতে কী বোঝায় সে সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন? কিন্তু শিক্ষা যে একটি বিজ্ঞান সেটি ক’জনইবা জানেন? একসময় শিক্ষার বিষয়গুলো দার্শনিকদের চিন্তায় জন্ম নিয়েছিল। তারাই ব্যক্তি উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। কালক্রমে ছোট ছোট সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেক বড় হয়েছে, শিশু থেকে তরুণ অবধি অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করার চেষ্টা করেছে- যারা অগ্রসর চিন্তাভাবনায় সমাজে পরিচিত ছিলেন, তারাই পাঠদানে যুক্ত ছিলেন। বইপুস্তক রচনার ধারা সূচিত হয়েছিল, নানা বিষয়ে ধীরে ধীরে উচ্চশিক্ষাও প্রসারিত হতে থাকে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক এই শিক্ষাব্যবস্থাকে বিজ্ঞান ও জ্ঞানতাত্ত্বিক পঠনপাঠন, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদিতে নিয়ে আসার নিয়মে সূত্রবদ্ধ করার বিষয়টি ছিল গত দেড়-দুইশ বছরের শিক্ষার অভিযাত্রা। এখন পৃথিবীর দেশে দেশে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত করার জন্য এডুকেশনাল সাইন্স তথা প্যাডাগোগি নামে একটি উচ্চতর পঠন-পাঠন ও গবেষণাভিত্তিক বিষয় সর্বত্র চালু হয়েছে। শিক্ষাবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাদানের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারণা, প্রশিক্ষণ ও প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ করে দিচ্ছে। এ বিষয়ে জ্ঞানলাভ করা ছাড়া কেউ কখনো বিষয় বিশেষজ্ঞ, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, পাঠ্যপুস্তক রচনাকারী, সম্পাদনাকারী এবং শ্রেণি শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন না। উন্নত দুনিয়ায় শিক্ষাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে এডুকেশনাল সাইন্স বা প্যাডাগোগি ইনস্টিটিউট। যে কোনো পর্যায়ের শিক্ষক হতে হলে এডুকেশনাল সাইন্স বা প্যাডাগোগি বিষয়ে তাকে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা লাভ করতেই হয়। একইভাবে শিক্ষাক্রম (ঈঁৎৎরপঁষঁস) প্রণয়নেও শিক্ষাবিজ্ঞানের জ্ঞানতাত্ত্বিক পড়াশোনা থাকতেই হবে। শিক্ষাক্রম সামগ্রিক অর্থে যেমন আছে আবার বিষয়ভিত্তিকও রয়েছে। সুতরাং বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ ছাড়া শিক্ষাক্রম তৈরি করা যায় না, আবার শিক্ষাক্রমের ধারণা ছাড়া পাঠ্যপুস্তকও রচনা কিংবা সম্পাদনা করা যায় না। শিক্ষার বিষয়গুলো এখন প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানতাত্ত্বিক চর্চার বিষয়, কোনো মেঠো বক্তৃতা কিংবা বিবৃতি অথবা সংগঠনের বলা-কওয়া বিষয় নয়। এটি অত্যন্ত গভীর জ্ঞানতাত্ত্বিক বিষয়। বিষয়টি বোঝার জন্য একটি সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। আমরা সবাই শিক্ষাক্রম শব্দটির কথা প্রায়ই শুনছি। কিন্তু কজনই জানি শিক্ষাক্রম হচ্ছে শিক্ষার হৃৎপিণ্ড, যা চললে গোটা শিক্ষাই চলে। একজন হৃৎপিণ্ড বিশেষজ্ঞই কেবল হৃৎপিণ্ডের চিকিৎসা করতে পারেন। অন্য বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হৃৎপিণ্ড স্পর্শ করবেন না। সুতরাং শিক্ষাক্রম সম্পর্কে যাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান নেই তারা শিক্ষার কিংবা বিশেষ বিষয়ের শিক্ষাক্রমের ধারণা কীভাবে পোষণ করবেন? শিক্ষাক্রমে যে তিনটি মৌলিক বিষয় থাকতেই হয় তার প্রথমটি হচ্ছে কী শিখব? দ্বিতীয়টি কেন শিখব? এবং তৃতীয়টি হচ্ছে শিখনফল কী হবে? মৌলিক এই ৩টি প্রশ্ন শুধুই প্রশ্ন নয়, অনেক কিছুই প্রতিটি প্রশ্ন ধারণ করে। জবাব দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হয়। সে ধরনের বিষয়বস্তু সাজিয়ে একটি বিষয়ের শিক্ষাক্রম দাঁড় করাতে হয়, সেই বিষয়বস্তুর আঙ্গিকেই পাঠ্যপুস্তক রচনা ও সম্পাদনা করতে হয়। শিক্ষাবিজ্ঞান প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক এবং সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার শিক্ষাক্রমের সিঁড়ি উপস্থাপন করে যার পাদদেশ থেকে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের স্তর অতিক্রম করে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠেন। এই জটিল শিক্ষার বিষয়টি বর্তমান দুনিয়ায় শিক্ষাব্যবস্থার এক অপরিহার্য জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তি। এর যথাযথ ধারণা ছাড়া কেউ এই মানসম্মত শিক্ষক, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষক ও পাঠ্যপুস্তক লেখক, সম্পাদক এবং শিক্ষা প্রশাসকের দায়িত্ব নিতে পারেন না। আমাদের দেশে একসময় শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের সুযোগ ছিল না, তখন এনসিটিবিতে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা দিয়ে অনেকে বিশেষজ্ঞ হতেন। তবে সেটি ব্যক্তির মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অনেকেই এখন এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তারপরও আমাদের শিক্ষক নিয়োগব্যবস্থায় শিক্ষাবিজ্ঞানের আবশ্যকতা নির্ধারিত হয়নি। সে কারণেই শিক্ষকদের বেশির ভাগই পঠন-পাঠন ও পাঠদানে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। এখান থেকেই বুঝে নিতে হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুরবস্থা এবং পাঠ্যপুস্তক নিয়ে প্রচার, অপপ্রচার, মিথ্যাচার এবং রাজনীতির শিকারে পরিণত হওয়ার অন্তর্নিহিত কারণ কোথায় লুকিয়ে আছে? মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App