×

আন্তর্জাতিক

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় নারীদের নিষিদ্ধ করলো তালেবান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৫৪ এএম

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় নারীদের নিষিদ্ধ করলো তালেবান

ছবি: রয়টার্সের

আফগানিস্তানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। সম্প্রতি এ নিয়ে তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলসহ উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোয় ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা। এর আগে প্রদেশগুলোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান নির্দেশ মানবে না, তাদের আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।

২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নারীদের জন্য পৃথক শ্রেণিকক্ষ ও প্রবেশপথ চালু করেছিল তালেবান। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের শুধু নারী শিক্ষক বা বয়স্ক পুরুষ শিক্ষক পড়াতে পারতেন। গত ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলেছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নারী শিক্ষার্থীদের যেন পাঠদান করা না হয়।

পুরুষদের মন্ত্রীসভা (অগাস্ট ২০২১) ২০০১ সালে তালেবানের প্রথম সরকার উৎখাত হওয়ার পর গত দুই দশকে হামিদ কারজাই এবং পরে আশরাফ গনি সরকার রাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা বাড়ানোর নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। নারীরা সংসদে ঢুকেছে। মন্ত্রীসভায় জায়গা পেয়েছে। তাদের রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয়েছে। পরে এমনকি রাজ্যের গভর্নর এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের অগাস্টে তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার পর বাকি বিশ্ব উদ্বেগের সাথে দৃষ্টি রেখেছিল এবারের তালেবান আগের বারের চেয়ে আলাদা হবে কি না। তারা বদলেছে কি না। ৩০শে অগাস্ট সর্বশেষ আমেরিকান সৈন্যদের দলটি কাবুল বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার পরদিন কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক অফিসের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “কোনও সন্দেহ নেই সরকারে নারীদের ভূমিকা থাকবে, কিন্তু আমি বলতে পারবো না তাদেরকে কোনো ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ করা হবে কি না।" কিন্তু এক সপ্তাহ পর তালেবান যে মন্ত্রীসভা গঠন করে, তাতে একজন নারীও ছিল না। নারীদের জীবনযাপনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে এ সময়ে ২০টিরও বেশি লিখিত এবং মৌখিক নির্দেশ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এর বাদেও, খেয়াল খুশিমতো বিচ্ছিন্নভাবে এমন বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। হিজাব (মে ২০২২) তালেবান কাবুলে প্রবেশের কদিনের মধ্যে শহরের রাস্তার চেহারা পাল্টে যায়। বিউটি পার্লার এবং দেয়ালের বিজ্ঞাপনে মেয়েদের সমস্ত ছবির ওপর রং দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। সেসবের বদলে দেয়ালে দেয়ালে লেখা হতে থাকে তালেবানের বিভিন্ন স্লোগান । সেগুলোর অন্যতম ছিল নারীদের হিজাব পরার নির্দেশ। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারীদের হিজাব পরা নিশ্চিত করতে প্রচারণা শুরু করে তালেবান। রাস্তায় রাস্তায় এ ব্যাপারে বিলবোর্ড টাঙানো হয়। কয়েক মাস পর ৭ই মে, তালেবান নারীদের জন্য ড্রেস কোড ঘোষণা করে। বলা হয় জনসমক্ষে সব নারীকে মুখ ঢেকে রাখতে হবে। না মানলে ঐ নারীর পুরুষ অভিভাবকদের শাস্তি পেতে হবে। ড্রাইভিং (মে ২০২২) ঐ একই মাসে হেরাতে ড্রাইভিং স্কুলগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয় তারা যেন আর নারী শিক্ষার্থী না নেয়। তালেবান এমন নির্দেশ দেওয়ার কথা অস্বীকার করে, তবে হেরাত ও কাবুলের অনেক নারী বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেছেন তারা ড্রাইভিং ক্লাস করতে পারছেন না। যারা শিখেছেন তাদের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। তালেবানের একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় সরকার নতুন করে নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বিদেশী ভাষা এবং ধর্ম শিক্ষা (সেপ্টেম্বর ২০২২) ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাবুল এবং অন্যান্য প্রদেশে বিদেশী ভাষা শিক্ষার কিছু প্রতিষ্ঠান বিবিসিকে জানায় তালেবান এগুলো একরকম জোর করে বন্ধ করে দিয়েছে। শর্ত দেওয়া হয়েছে নারী এবং পুরুষ শিক্ষার্থীদের পৃথক ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে, এবং নারীদের জন্য শুধু নারী প্রশিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। অনেক পরিবার অভিযোগ করেছে অনেক মসজিদ ধর্ম শিক্ষার ক্লাস থেকে মেয়েদের বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে আফগানিস্তানের ৩৩টি প্রদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। এবং এই প্রথম সেদেশে কিছু কিছু বিষয়ে মেয়েদের ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। বেশ কিছু প্রদেশে কৃষি, পশু চিকিৎসা, নির্মাণ প্রকৌশল এবং খনিজ সম্পদ আহরণের মত বিষয়ে মেয়েদের আবেদন করতে দেওয়া হয়নি। যদিও তালেবান সরকার তা অস্বীকার করেছে কিন্তু অনেক নারী শিক্ষার্থী বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেছেন তাদের পছন্দ সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহ পরই তালেবান কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নোটিস টাঙ্গিয়ে বলে দেয় কৃষি, ব্যবসা, কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগসহ বেশ কিছু বিষয়ে নারীরা মাস্টার্স ডিগ্রি করতে পারবে না । গ্রাজুয়েশন (ডিসেম্বর ২০২২) গত মাসে অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আফগান সোশ্যাল মিডিয়াতে গ্রাজুয়েশন উদযাপনের বহু ছবি প্রকাশিত হতে শুরু করে। কিন্তু সেখানে শুধুই পুরুষ ছাত্রদের ছবি। শুধু তাদেরই মাথার হ্যাট খুলে আকাশে ছুড়ে আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা যায়। নারীদের সেখানে চোখেই পড়েনি। অনেক নারী বলেন, ক্যাম্পাসের বাইরে এমন গ্রাজুয়েশন উৎসবে তাদের যোগ দিতে মানা করা হয়। অমান্য করা হলে তাদের সার্টিফিকেট না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। মেয়ে গ্রাজুয়েটদের কোনও অনুষ্ঠানে পুরুষ শিক্ষক বা ছাত্রীদের পুরুষ অভিভাবকদের যোগদান নিষেধ করা হয়। অমান্য করা হলে শিক্ষকদের বরখাস্তের হুমকি দেওয়া হয়। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের কাছে পাঠানো এসব নির্দেশনা সম্বলিত নোটিস বিবিসি দেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় (ডিসেম্বর ২০২২) ২০২২ সালের ২১শে ডিসেম্বর তালেবানের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারীদের উচ্চশিক্ষা বন্ধ করে দেয়। সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত” মেয়েদের ভর্তি নিষিদ্ধ করা হয়। মন্ত্রী নেদা মহম্মদ সাদিম বলেন, “শারিয়া আইন প্রবর্তন” করতে এবং “অনৈতিকতা আটকাতে” তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এনজিও (ডিসেম্বর ২০২২) ২০২২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর তালেবান সরকার সমস্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা বা এনজিওতে নারীদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করে। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক চিঠিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা যেন তাদের নারী কর্মীদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। তালেবানের যুক্তি ছিল এসব প্রতিষ্ঠানে হিজাবসহ ইসলামের অন্যান্য বিধি-নিষেধ অনুসরণ করা হচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App