×

সাহিত্য

বইমেলার পর্দা উঠবে ১ ফেব্রুয়ারি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:২০ পিএম

বইমেলার পর্দা উঠবে ১ ফেব্রুয়ারি

সোমবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কেএম মুজাহিদুল ইসলাম। ছবি: ভোরের কাগজ

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আর মাত্র একদিন পরেই হাতুড়ি পেরেকের ঠোকাঠুকিসহ যাবতীয় শব্দযন্ত্রণা থেমে যাবে। ভাষার মাসের প্রথম দিন পাঠকের গুঞ্জরণে মুখর আর সুবাসিত হয়ে উঠবে অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণ।

আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের মূলমঞ্চে সশরীরে উপস্থিত থেকে অমর একুশে বইমেলার ৩৯তম আসর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের অমর একুশে বইমেলার পরিসর বেড়েছে, বেড়েছে স্টল ও প্যাভিলিয়ন সংখ্যাও। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে এবার মেলা আয়োজন করছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। প্যাভিলিয়ন (স্টল) থাকছে ৩৮টি।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কেএম মুজাহিদুল ইসলাম।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব এএইচএম লোকমান হোসেন, মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ক্রোস ওয়াকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মারুফ, বাংলা একাডেমির পরিচালক (জনসংযোগ) সমীর কুমরার সরকার প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি ইউনিট ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিটসহ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় প্যাভিলিয়ন (স্টল) থাকছে ৩৮টি।

তিনি আরো বলেন, মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, গতবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এম্ফিথিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে। এবার সেখান সরিয়ে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের সামনে রাখা হচ্ছে। বইমেলায় বরাবরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।

অন্যবারের মতো এবারও একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট চারটি প্যাভিলিয়ন থাকছে বাংলা একাডেমির। এগুলোর মধ্যে তিনটি প্যাভিলিয়ন সাধারণ বইয়ের জন্য ও একটি প্যাভিলিয়ন শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য। এছাড়া, মাসিক উত্তরাধিকারের জন্য একটি স্টল থাকবে বলে জানিয়েছেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব।

তিনি বলেন, এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে শিশু ও অভিভাবকদের কথা মাথায় রেখে প্রবেশ পথের কাছে শিশুচত্বর রাখা হচ্ছে। কোভিডের কারণে গত বছর মেলার শুরুর দিকে শিশুপ্রহর না থাকলেও এবার শুরু থেকেই থাকছে।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এবারও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। তবে গতবারে তুলনায় এবারের মঞ্চ বড় হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জলাধারের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে পাম গাছের কাছে নির্মিত এ মঞ্চ ও প্যান্ডেল ‘আশ্রয় কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার হবে। অমর একুশে বইমেলা প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে একটি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুটি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় মিডিয়া সেন্টার এবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে।

তিনি বলেন, বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে প্রবেশের জন্য আপাতত চারটি গেট চূড়ান্ত হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের গেটটিও আমরা চেয়েছি। এ ব্যাপারে ডিএমপি থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন পাইনি। আশা করি পেয়ে যাব। বের হওয়ার পথ থাকবে চারটি। বরাবরের মতো এবারও বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরো বলেন, বইমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা থাকছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নিরাপত্তার জন্য মেলার এলাকাজুড়ে কয়েকশ’ ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত ও দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ধূলা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেল চারটায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই, গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।

মুজাহিদুল ইসলাম জানান, অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এছাড়া ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক বইয়ের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই স্মৃতি পুরস্কার’ ও এ বছর মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।

এবার বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত মিলে ১৩৬টি বই। এর মধ্যে মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমির ‘জেলা সাহিত্য মেলা ২০২২’ প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করবেন। একই সঙ্গে ‘বঙ্গবন্ধুর রচনা সমগ্র প্রথম খণ্ড’-এর মোড়ক উন্মোচন করবেন তিনি- জানান মেলার সদস্য সচিব।

তিনি আরো বলেন, বইমেলা ১-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। শুক্রবার দুপুর একটা থেকে বিকেল তিনটা ও শনিবার একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত বিরতি। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল আটটায়, রাত নয়টা পর্যন্ত চলবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App