×

মুক্তচিন্তা

ডোপামিন ডিটক্স মোবাইল আসক্তির মুক্তি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৩৫ এএম

তরুণ প্রজন্মের মোবাইল আসক্তি যেন কোনো এক ভূতের গল্পের খলনায়ক চরিত্র। ভূত যেমন উড়ে এসে জুড়ে বসে তেমনি মোবাইল আসক্তি তরুণ প্রজন্মের বিকশিত হওয়ার পথে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এই মোবাইল আসক্তির প্রথম জোগানদাতা ফেসবুক, ইউটিউব, গেমসের কথা না বললেই নয়। এসব সাইটের আসক্তির পেছনের গল্পে রয়েছে ডোপামিন নামের এক বিশেষ নিউরো ট্রান্সমিটারের কারসাজি। তাহলে প্রথমেই জানা দরকার ডোপামিন ও ডোপামিন ডি টক্স কী? ডোপামিন এক ধরনের নিউরো ট্রান্সমিটার, যা মস্তিষ্ক থেকে উৎপন্ন হয়। এই ডোপামিন ক্ষরণ আমাদের মোটিভেশন, আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছা, আগ্রহ, প্রত্যাশা ও নিজের ভালো লাগার প্রতি বিশেষ সাড়া দেয়। বর্তমানে ফেসবুক, ইউটিউবের কনটেন্ট মেকানিজম এই ডোপামিন ক্ষরণের প্রতি লক্ষ রেখে করা হয়। এসব অ্যাপের মূল লক্ষ্য থাকে কম সময়ে কে কত বেশি ডোপামিন নিঃসরণ করতে পারছে। যে যত বেশি নিঃসরণ করতে পারবে তার অ্যাপের প্রতি ব্যবহারকারীর আসক্তি তত বেশি হবে। ভিন্নভাবে ডোপামিন ছিনতাই থেকে রক্ষা পাওয়ার বিপরীত প্রক্রিয়া হলো ডোপামিন ডিটক্স। মোবাইল আসক্তি বর্তমানে আমাদের তরুণ প্রজন্মের মূল্যবান সময়কে নষ্ট করছে। কয়েক দিন আগে একটি পত্রিকায় দেখলাম, একটি ছেলে রেললাইনের পাশে গেমস খেলার সময় ট্রেনের হর্নের প্রতি তার মনোযোগ ছিল না বিধায় ট্রেনে কাটা পড়ে ছেলেটির মৃত্যু হয়। ঘটনাটির পেছনে একটু বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করি। ছেলেটি যখন গেমস খেলছে তখন তার ডোপামিন ক্ষরণ দ্রুত হচ্ছিল। এমনভাবে দ্রুততার সঙ্গে ক্ষরণ হচ্ছিল যে অন্য বিষয়ের প্রতি তার মনোযোগ দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। আর এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। ফলে ট্রেনে কাটা পড়ে। একটু স্বাভাবিকভাবে বিষয়টা যদি চিন্তা করি যেখানে মোবাইল আসক্তি জীবনের তোয়াক্কা করছে না সেখানে সময়ের সদ্ব্যবহার বা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন তো বৃথা। অতএব বুঝতেই পারছেন আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কোন গঙ্গায় পতিত হচ্ছে। মোবাইল আসক্তির বড় একটি কারণ ছিল করোনাকালে পড়াশোনার বাহানায় মোবাইল কেনা। যদিও কেনাটাকে সাধুবাদ জানাই, তবে অভিভাবকের লাগামহীন স্বাধীনতা দেয়াকে ধিক্কার জানাই। অভিভাবকের ন্যূনতম দায়িত্ব ছিল সন্তানের এই মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রতি নজর রাখা ও কিছু সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করা। এই খামখেয়ালিতে মোবাইল আসক্তিতে আজ আমাদের নতুন সমাজ আক্রান্ত। ফলে অভিভাবকের দায় সবচেয়ে বেশি। সমাজ, রাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে দায় ফেলে দেয়ার মতো নয়। ঘুম থেকে ওঠামাত্রই ফোন হাতে নেয়া আপনার সারাদিনের কার্যপ্রণালিকে অন্যদিকে নেয়ার চেষ্টা করে। তাই আপনার উচিত ঘুম থেকে উঠে কাজে মনোনিবেশ করা। সেই সঙ্গে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয়া- সারাদিন কী কী কাজ করবেন। তাহলে আপনার মস্তিষ্ক সেই রুটিন অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করবে। একদিন আপনি মোবাইল ছাড়া থাকলে দেখবেন কিছুই ভালো লাগছে না, মন অস্থির অস্থির লাগছে, কাজে মন বসছে না। যত সমস্যাই হোক সম্পূর্ণ একদিন মোবাইল ছাড়া থাকুন। তখন দেখবেন আপনার মস্তিষ্ক কোনো না কোনো দিকে ডোপামিন ক্ষরণের জন্য আপনাকে তাগিদ দেবে। তখন আপনি যে কাজই করবেন ওই কাজে ডোপামিন ক্ষরণ হবে। যা আপনার ওই কাজের প্রতি ভালো লাগার সৃষ্টি করবে। আপনার অবসর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে বই পড়া, গল্প করা, ব্যায়াম করা, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো ইত্যাদি কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। দেখবেন মোবাইল আসক্তি আপনার থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। এভাবে কয়েক দিন চেষ্টা করুন। দেখবেন ডোপামিন ডিটক্সের মাধ্যমে মোবাইল আসক্তি থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। জ্যোতিষ শিশুদের মোবাইল আসক্তির ক্ষেত্রে সমতলের চিন্তা করি। তাহলে তাদের বিনোদনের বিকল্প ক্ষেত্র তৈরি করা, শিশুদের মাঠমুখী করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। সামাজিক সংগঠনগুলো সচেতনতামূলক প্রচারণা সৃষ্টি করতে হবে। শেখ সায়মন পারভেজ হিমেল : শিক্ষার্থী, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App