চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ উপনির্বাচন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ বুধবার। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুল ওদুদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুবলীগ নেতা সামিউল হক লিটন ছাড়াও বিএনএফের প্রার্থী কামরুজ্জামান খাঁন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এ নির্বাচনে।
তবে ভোটের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মূলত লড়াই হবে নৌকা প্রতীকের ওদুদ ও আপেল প্রতীকের লিটনের মধ্যে। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে উঠলেও ভোটারদের আগ্রহ কম। আমেজহীন নির্বাচনেও শেষ মুহূর্তে উত্তাপ-উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর আপেল প্রতীকের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ ও কর্মীকে মারধর করায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। সংশয় দেখা দিয়েছে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার কথা বলা হলেও ভোটাররা শঙ্কিত।
এর আগে গত রবিবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আপেল প্রতীকের ১১টি প্রচার অফিস ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ ও কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটগ্রহণের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এতে ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে ভোট নিয়ে শঙ্কা থাকলেও, ভোটারদের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন- নির্বাচনে এ রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পৌর এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক সুমন বলেন, হাঠাৎ করে নির্বাচনী মাঠে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। গত রোববার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে ভাংচুর চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের হুমকি-ধামকি ও অফিস ভাংচুরে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ভোটের দিন পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
মেহেদী হাসান জানান, দুজনই জিততে মরিয়া। এ কারণে শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আওয়ামী লীগের নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীও আপেল প্রতীকের মধ্যেই মূল লড়াই হবে। সে ক্ষেত্রে ভোটের দিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। তার পরও আমরা ভোটাররা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হোক।
এদিকে সোমবার বিকালে শহরের আরামবাগ এলাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন অভিযোগ করে বলেন, রবিবার রাত ৯টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমার ১১টি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন এটা করেছেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রত্যক্ষদর্শীরা ভাংচুরকারী যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের নাম বলেছে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালই ছিল। কিন্তু রবিবার রাতে আমার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ভোটাররা শঙ্কিত। লিখিত ও মৌখিকভাকে বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। কিন্তু ঘটনার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাইনি।
যদিও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল ওদুদ প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিপক্ষ প্রার্থী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে আসছেন। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক রয়েছে। আমি ক্ষমতার অপব্যবহারে বিশ্বাসী নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লিটন মানুষের সহানুভূতি নেতার জন্য তার লোকজন দিয়ে নিজের অফিস ভাংচুর করিয়েছে। এ ঘটনায় আমার লোকজন জড়িত নয়। সরকারের উন্নয়নের ধারবাহিকতা বজায় রাখতে ভোটাররা তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এ বিষয়ে উপ-নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের ঘটনায় খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়। নির্বাচনে এ রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। আমরা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। ভোটের দিন পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ভোটাররা যেন অবাধে এসে তাদের ভোট প্রদান করতে পারেন সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।