জন্মদিনের পার্টিতে এলোপাতাড়ি গুলি, নিহত ৮

আগের সংবাদ

তুষার নিয়ে খেললেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা

পরের সংবাদ

সংসদে এমপি মোতাহার

‘এরশাদের জামানাত বাজেয়াপ্ত করে সংসদে এসেছি’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ৮:৩৬ অপরাহ্ণ আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ৮:৩৬ অপরাহ্ণ

জোরালো প্রতিবাদ জাপার, সংসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি রাঙার
মোতাহারের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জাপার

এমপি মোতাহার হোসেন রাষ্ট্রপতি ভাষণের ওপর বক্তব্যে ‘২০১৪ সালে লালমনিরহাট-১ সংসদীয় আসনে এরশাদ সাহেবকে হারিয়েছেন ও তার জামানত বাজেয়াপ্ত করেছিলেন’ এমন মন্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাতীয় সংসদ। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ ও দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা মোতাহার হোসেনের বক্তব্যে মধ্যেই উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এসময় সংসদে সভাপতিত্ব করছিলেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। তাদের মাইক দেন তিনি। এসময় বক্তব্যে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ২০১৪ সালে এরশাদ সাহেব নির্বাচনই করেননি। তাহলে মোতাহার হোসেন কিভাবে আমাদের দলের চেয়ারম্যানকে হারান। এসময় তিনি মোতাহার হোসেনের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘ওনার (তার) সাহস বটে। উনি (তিনি) কীভাবে বলেন এরশাদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত করেছেন। এটা মিথ্যা, এটা এক্সপাঞ্জ করতে হবে।

পরবর্তীতে মশিউর রহমান রাঙাও মাইক নিয়ে একই দাবি জানিয়েছেন।

এসময় সংসদে সরকার দলীয় সদস্যরা হৈ চৈ করতে থাকেন। তখন মশিউর রহমান রাঙা তাদের শান্ত হতে বলেন। তার পরেও হৈচৈ চলতে থাকে, এসময় রাঙা বলেন এরশাদ সাহেব ও বছর নির্বাচন করেননি, তাহলে উনি (তিনি) কীভাবে আমাদের চেয়ারম্যানকে হারালেন। এটা এক্সপাঞ্জ করতে হবে। আর বিরোধী দলের কথা যদি আপনারা শুনতে না চান আমরা সংসদ থেকে বেরিয়ে যাবো।

পরে ডেপুটি স্পিকারের পরিবর্তে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে প্রবেশ করেন এবং স্পিকারের আসনে বসে সবাইকে শান্ত হতে বলেন। এসময় তাকে (কণ্ঠে) উত্তেজিত দেখা যায়। তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয় সংসদের শিষ্টাচার বজায় রাখবেন। এটা আমি আশা করি। একজন রাষ্ট্রপতির ভাষনের ওপর বক্তব্য দিচ্ছেন, তার বক্তব্য শেষ না হলে আপনি বক্তব্য রাখতে পারেন না। এই সহযোগীতাটুকু আমি আপনাদের কাছে রাখতে পারি। আমি আপনাদের কথা শুনবো। তাই বলে একজনের ভাষণের মধ্যে আরেকজনের বক্তব্য দেয়া সমিচীন নয়। প্রয়োজনে কোনো বক্তব্য অসাংবিধানিক বা মিথ্যা হলে আমি এক্সপাঞ্জ করবো, আপনাররা বসুন।

এরপরে স্পিকার মোতাহার হোসেনকে বক্তব্যের শেষ অংশ বলতে বলেন। এসময় মোতাহার বলেন, ১৯৮৫ সালে আমি যখন উপজেলা নির্বাচন করি তখন একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করি, আবার ১৯৯০ সালেও উপজেলায় জাপার প্রার্থীর জামানত আমি বাজেয়াপ্ত করে নির্বাচিত হই। এমনকি শেষবার ভোটে, উনারা (তারা) সবাই ছিল, রাঙা সাহেব ছিলেন, বরিশালের মনোরঞ্জন হালদার ও এরশাদের ভাইও ছিলেন, ঢাকা এয়ারপোর্টে, এসময় এরশাদ সাহেব বলেছিলেন, তুমি আমার জামানত বাজেয়াপ্ত করলে। আমি বলেছিলাম আগে দুবার করেছি এবারও করলাম’। আমি কোন মিথ্যা কথা বলি নি। এটা কোন ভাবে হতে পারে না। আমি বক্তব্য দিতেছি তার মধ্যে উনারা ঢুকে বক্তব্যে বাঁধা দেবেন এটা হতে পারে না। আমি অনেক কষ্ট পাইছি।

পরে মাইক নিয়ে এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা বলেন, মাগরিবের নামাজের পরে আমরা বাইরে ছিলাম। এসময় হঠাৎ করে শুনি মোতাহার সোসেন বলছেন, ২০১৪ সালে আমি এরশাদকে হারিয়েছি, এমনকি তার জামানত বাজেয়াপ্ত করে এই সংসদে এসেছি।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে এরশাদ সাহেব আমাকে লালমনিরহাটে গিয়ে তার নমিনেশন সাবমিট করার নির্দেশ দেন। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে লালমনির হাটে যাই। আমার ছেলে গাড়ি চালাচ্ছিল। আমি লাল মনির হাটে গেলে আমাকে নমিনেশন সাবমিট করতে বাঁধা দেয়া হয়। অনেকে আমাকে বাধাঁ দেন। তারা বলেন , মোতাহার হোসেন বলেছেন নমিনেশন সাবমিট না করতে, নমিনেশন দিলে তো ভোট হবে। এসময় আমি বলি এরশাদ সাহেব আমার পার্টির চেয়ারম্যান। আমি তার এক জেলার সভাপতি মাত্র। ওনার আদেশ আমাকে পালন করতে হবে। তার পরে আমি নমিনেশন (মনোনয়ন) সাবমিট (পেশ) করি। ফেরার সময় উনি (তিনি) ইউক্লিকটাস গাছ দিয়ে সমস্ত রাস্তা ব্যারিকেট করে দেন। এসময় আমার ছেলে গাড়ি চালাচ্ছিল। আমি কোন ড্রাইভার পাইনি। বিএনপি সমস্ত দেশে বন্ধ-অবরোধ করে রেখেছিল। এ অবস্থায় মোতাহার হোসেনের লোকজন আমার ছাদে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়। আমি আমার লিগার্ল আর্মস নিয়ে যাই। আমি ৬৭টি রাউণ্ড গুলি করেছিলাম এবং নিজেকে রেসকিউ করেছিলাম, এসপিকে এসময় সবস বলেছিলাম। সেবারে ২০১৪ সালে এরশাদ সাহেব বলেন, আমি নির্বাচন করলে রংপুর থেকে করবো, লালমনিরহাট থেকে নির্বাচন করবো না। ২০১৯ এ উনি নির্বাচন করতে চাননি। আমরা তাকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম, বলেছিলাম নির্বাচন করেন, যদি পদত্যাগ করতে হয় তাহলে সবাই পদত্যাগ করবো। তবে আপনি নির্বাচনটা করুন। তাই ২০১৪ সালে রংপুর থেকে জোর করে আমরা তাকে নির্বাচন করাই। উনি (তিনি) লালমনিরহাট থেকে নির্বাচন করেনে নি। তাহলে কিভাবে মোতাহার হোসেন বললেন, এরশাদ সাহেবকে হারিয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত করে আমি এই সংসদে এসেছি। এটা এক্সপাঞ্চ করার দাবি জানান তিনি।

পরে কাজী ফিরোজ রশিদ তার বক্তব্যে বলেন রংপুরে এরশাদ সাহেবকে হারাবেন এমন মানুষ জম্মায়নি। তিনি যখন কারাগারে ছিলেন তখনও দুই-দুইবার পাঁচটি করে আসনে জয়লাভ করেন। এরশাদ সাহেব যখন ২২টি আসেন নির্বাচন করেন তখন ২১টি আসনে এরশাদ সাহেব বিজয়ী হয়েছেন। আর জামায়াত বিজয়ী হয় একটিতে। আর উনি (মোতাহার) এমন বীর বিক্রম হয়ে গেল উনি (তিনি) নাকি এরশাদ সাহেবকে হারিয়ে এই সংসদে এসেছেন। তিনি তো ২০১৪ সালে নির্বাচনে দাঁড়াইনি। তিনি আমাদের উইড্র করাইছিলেন, আমি জোর করে দাঁড়াই। তা নাহলে এই সংসদে বিরোধী দল থাকে না। আর উনি (তিনি) কিনা বলেন, এরশাদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত করেছেন। রংপুরে এরশাদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত করার মত সন্তান আজ পর্যন্ত জম্মাইনি। তার সম্পর্কে কথা বলার সময় চিন্তা করা উচিৎ ছিল। তিনি একটি দলের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমরা কখনো তো কোন দলের চেয়ারম্যানকে নিয়ে কোনো খারাপ মন্তব্য করি না। এরশাদ সাহেবের সম্পর্কে কথা বলার আগে ওনার (তার) অনেকবার চিন্তাভাবনা করা উচিৎ ছিল। ধৃষ্টটার একটা সীমা থাকে। তা না হলে কিন্তু রংপুরের মাটিতে তার সমস্যা হবে।

এসময় স্পিকার ফিরোজ রশীদকে বলেন, ‘আপনি কোন কথাটায় আপত্তি তুলছেন’। ফিরোজ রশীদ এসময় বলেন, ‘এরশাদ সাহেবকে হারিয়ে ও তার জামানত বাজেয়াপ্ত করে মোতাহার সাহেব এই সংসদে এসেছেন’ এই অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করবেন।

এসময় স্পিকার বলেন, ‘মাননীয় সদস্যবৃন্দ মোতাহার হোসেনের বক্তব্যে যদি তথ্যগত কোন ত্রুটি থাকে তা বিশ্লেষণ করে, কোন ত্রুটি থাকে সেটা বিবেচনা করে তা এক্সপাঞ্জ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে’। এরপর সংসদ শান্ত হয়।

ডি- এইচএ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়