×

জাতীয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং বুলিং করলেই বহিষ্কার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৫৬ এএম

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং বুলিং করলেই বহিষ্কার

ছবি: সংগৃহীত

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুলিং বা র‌্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ এর খসড়া তৈরি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যঙ্গ করে কারো নাম ধরে ডাকা, গালিগালাজ করা, বদনাম করা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেয়া, বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করা বা উত্ত্যক্ত করা, এমনকি গায়ের রং নিয়ে অবহেলা বা এড়িয়ে চলে মানসিক চাপ দেয়া বুলিং বা র‌্যাগিং হিসেবে চিহ্নিত হবে। এ র‌্যাগিং বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ও জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপরাধের ধরন অনুসারে র‌্যাগিংকারীকে সাময়িক বা স্থায়ী বহিষ্কারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। এ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হলে তা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নীতিমালায় বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র‌্যাগিং বিষয়টি বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে শিক্ষাজীবনে শিক্ষার্থীর সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। র‌্যাগিংকারী সাধারণত দুর্বল শিক্ষার্থীকে বেছে নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে ভিকটিমকে হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। শুধু সহপাঠী বা শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষক-অভিভাবকদের দ্বারাও বুলিং বা র‌্যাগিং হতে পারে। এটি প্রতিরোধ না করলে সমাজে গঠনমূলক নেতৃত্ব ও সুনাগরিকের অভাব পরিলক্ষিত হবে।

বুলিং বা র‌্যাগিংয়ের ধরন : কাউকে নিয়ে উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করে ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, শিস দেয়া, হুমকি দেয়া ইত্যাদি মৌখিক বুলিং বা র‌্যাগিং বলে বিবেচিত হবে। আর কাউকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা, হাত দিয়ে চড়থাপ্পড়, পা দিয়ে লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেয়া, থুথু মারা, বেঁধে কোনো বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বা বসে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেয়া অথবা বাধ্য করা, কারো কোনো জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা, মুখ বা হাত দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করা হবে শারীরিক বুলিং বা র‌্যাগিং।

সামাজিক বুলিং বা র‌্যাগিংয়ে গণ্য হবে- কাউকে ব্যঙ্গ করে সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়া, কারো সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, প্রকাশ্যে কাউকে অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা জাত তুলে কোনো কথা বলা ইত্যাদি। এছাড়া বন্ধুদের মধ্যে কারো সম্বন্ধে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কটু কিছু লিখে বা অশালীন কিছু পোস্ট করে তাকে অপদস্থ করা সাইবার বুলিং বা র‌্যাগিং। সেক্সচ্যুয়াল বুলিং বা র‌্যাগিং হবে ইচ্ছাকৃতভাবে কারো শরীরের বিভিন্ন স্থানে আপত্তিজনক স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা করা, ইঙ্গিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন, কয়েকজন মিলে জামাকাপড় খুলে নেয়া বা খুলতে বাধ্য করা, শরীরে পানি বা রং ঢেলে দেয়া ইত্যাদি। অন্যদিকে জাতি, বর্ণ, গোত্র, ধর্ম, পেশা, গায়ের রং, অঞ্চল ইত্যাদি নিয়ে কাউকে অপমান ও হেয় করা জাতিগত বুলিং বা র‌্যাগিং বলে গণ্য হবে।

প্রতিরোধ ও শাস্তি

বুলিং বা র‌্যাগিং প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নীতিমালায় ‘বুলিং বা র‌্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করার কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিযোগ বক্স রাখার ব্যবস্থা নেয়া এবং অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বুলিং বা র‌্যাগিংয়ে কোনো শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ তাদের বিধিমালা অনুয়ায়ী বুলিং বা র‌্যাগিংকারীকে সাময়িক বা স্থায়ী বহিষ্কার করবেন। প্রয়োজনে ফৌজদারি আইনে কিংবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অন্যদিকে বুলিং বা র‌্যাগিংয়ে কোনো শিক্ষক অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি হবে এবং তা শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এরূপ অভিযোগের জন্য তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর আওতায় অসদাচরণের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। শিক্ষক-কর্মচারীদেরও কারণ দর্শানোর পর প্রয়োজনে সাময়িক বা স্থায়ী বরখাস্ত করা হবে।

এছাড়া র‌্যাগিং বন্ধে নিয়মিত সচেতনমূলক সভা করা, এক্সট্রা কারিকুল্যার কার্যক্রম পরিচালনার কথাও বলা হয় নীতিমালায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সাইকোলজিস্ট’ নিয়োগ করে বুলিং বা র‌্যাগিংয়ের শিকার ভিকটিমকে তৎক্ষণাৎ কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতেও কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। যাতে ভিকটিম র‌্যাগিংয়ে শিকার হওয়ার পর নিজের মধ্যে গুটিয়ে না যায় কিংবা কোনোরকম আত্মক্ষতির চিন্তা না করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App