×

জাতীয়

ফোনালাপের সূত্র ধরে খুনের রহস্য উদঘাটন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:০৪ পিএম

ফোনালাপের সূত্র ধরে খুনের রহস্য উদঘাটন

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। ছবি: ভোরের কাগজ

ফোনালাপের সূত্র ধরে খুনের রহস্য উদঘাটন
ফোনালাপের সূত্র ধরে খুনের রহস্য উদঘাটন

ক্লুলেস ঘটনাটির তদন্তে নেমে বেশকিছু ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করেও কোন কূলকিনারা করতে পারছিলো না থানা পুলিশ। চলতি মাসের গত ২৬ জানুয়ারি একটি ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ী এলাকার নিজ বাসা থেকে মো. আরিফ (২৮) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারের পর ওই ব্যক্তি তার মায়ের সঙ্গে ফোনালাপে জানায়, অন্য কোন ঘটনায় নয় তাকে আগের ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার এই বক্তব্যটি সন্দেহজনক হওয়ায় খলু মিয়া (২৮) হত্যা মামলায় তাকে শোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এর ভিত্তিতে তিনদিনের রিমান্ড পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে খুনের বিষয়টি স্বীকার করে আরিফ জানায়, খলু মিয়াকে পথরোধ করে ছিনতাই করার সময় তিনি বাধা দিলে তাকে উপর্যুপরি আঘাত করে তার মোবাইলে ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায় আরিফ।

গত ২২ জানুয়ারি ভোরে যাত্রাবাড়ী থানাধীন ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাশের সড়কে ছুরিকাঘাতে খলু মিয়া খুনের ঘটনায় ছিনতাইকারী আরিফকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। রবিবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গত ২২ জানুয়ারি ভোরে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ জানতে পারে, ধলপুর এলাকায় একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি আছে। এ খবরের ভিত্তিতে থানা পুলিশ ঢামেকে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভুক্তভোগীকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানতে পারে।

এরপর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত স্থানটি দেখতে পায়। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভুক্তভোগী গোলাপবাগ থেকে পাঁয়ে হেঁটে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওৎপেতে থাকা অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ভুক্তভোগীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।

ভুক্তভোগীর কাছে প্রাপ্ত জিনিসপত্র ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় জানা যায়, ভুক্তভোগীর নাম খলু মিয়া। তিনি নারায়নগঞ্জের রূপসী এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সেদিন গাইবান্ধা থেকে সোনালী পরিবহনে করে রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটায় গোলাপবাগে পৌঁছান। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ছুরিকাঘাতের শিকার হন তিনি।

ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, ক্লুলেস এ ঘটনার তদন্তে নেমে বেশকিছু ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করেও কোন কুলকিনারা করতে পারছিলোনা থানা পুলিশ। ২৬ জানুয়ারি একটি ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ী এলাকার নিজ বাসা থেকে আরিফকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তখন মায়ের সঙ্গে ফোনালাপে এ ব্যক্তি জানায়, অন্য কোন ঘটনায় নয়, তাকে আগের ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরিফের এই বক্তব্যটি সন্দেহজনক হওয়ায় খলু মিয়া হত্যা মামলায় তাকে শোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এর ভিত্তিতে আরিফের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে খলু মিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য। একপর্যায়ে খলু মিয়াকে খুনের দায় স্বীকার করেন আরিফ, পরে তার হেফাজত থেকে খলু মিয়ার খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।

আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, একাধিক ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ায় আরিফ দীর্ঘদিন ধরে তার নিজ বাসায় অবস্থান না করে পলাতক ছিলেন। কিন্তু খুনের ঘটনার পরপর পুলিশী তৎপরতা দেখে হত্যার ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে আগের ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার হতে সে বাসায় অবস্থান করছিলো।

ঘটনার সময় আরিফ অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে একটি ছুরিসহ ধলপুর নতুন রাস্তায় একটি ব্যাটারীর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। ভিকটিম রাস্তা দিয়ে আসার পথে তারা তার গলায় ছুরি ধরলে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ঘটনার একপর্যায়ে তারা ভিকটিমের বুকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে ভিকটিমের মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তার আরিফ আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তার অন্যান্য সহযোগীদের নাম-ঠিকানাও জানিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ঢাকা শহরটি ২৪ ঘন্টাই কর্মব্যস্ত থাকে। দিনের বেলায় যেমন অফিস পাড়া থাকে, অফিসে সবাই ব্যস্ত থাকে। রাতের ঢাকায় ব্যাপক হারে ট্রাক ঢুকে। কাঁচা বাজারে বিভিন্ন পণ্য যারা বিক্রি করে সেখানে বাজার খুবই সক্রিয় থাকে। আর যারা রাতের বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে বাইরে থেকে আসে তারা যখন গভীর রাতে চলাচল করে, তখন অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠে।

অপরাধটা যারাই করে আমাদের প্রথম কাজটি হল ঘটনা ও অপরাধীকে চিহ্নিত করা। আমরা একটা তালিকা তৈরি করছি, এদেরকে সবসময় নজরদারিতে রাখতে অপরাধ কমে যায়। চুরি বলেন আর ছিনতাই বলেন তাদেরকে ব্যাপক হারে গ্রেপ্তার করতে পারলে অনেকদিন কমে যায়। যখন তারা আবার বেরিয়ে আসে তখন আবার ঘটনা বেড়ে যায়।

অপরাধের যে প্রক্রিয়া সেটি শুধু পুলিশিং দিয়েই একদম নির্মূল করা বিশ্বের কোথাও নাই। কারাগারে গিয়ে সংশোধন বা অন্য কোনো পেশায় যাবে সেটাও হচ্ছে না। একটা এলাকা থেকে কয়েকটা এরকম যদি ধরে ফেলি সে এলাকা অনেক দিনের জন্য ঠান্ডা থাকে। তারা জেল থেকে বেরিয়ে হয়তো তারা জায়গা পরিবর্তন করে। সামনের দিনগুলোতে যদি আমরা উন্নয়নের দিকে আরো অগ্রসর হতে পারি এবং তাদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পেশা যদি পরিবর্তন করা যায় তাহলে অপরাধটা কমিয়ে আনতে পারবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App