×

জাতীয়

৩৫ টাকায় গরুর মাংস পাবেন যেখানে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:০৩ পিএম

৩৫ টাকায় গরুর মাংস পাবেন যেখানে

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার বুকেই একটি দোকান আছে যেখানে ২৫ টাকায় ইলিশ মাছ, ৩৫ টাকায় গরুর মাংস, ৫ টাকায় শুঁটকি, ৩ টাকায় চা পাতা, ১ টাকায় মুড়ি, ১৫ টাকায় পাঙাশ কিংবা তেলাপিয়া মাছ নিঃসংকোচে ক্রয় করা যায়। শুধু তাই নয়, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীও স্বল্প দামে ক্রয়ের সুযোগ পাবেন সেই দোকানে।

রাজধানীর দক্ষিণখানের মুদি দোকানি মোহাম্মদ জুয়েল তৈরি করেছেন এমন একটি দোকান। জুয়েলের সেই দোকানের নাম ‘পাটোয়ারী স্টোর’।

বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থায় এক অনন্য মানবিক উদাহরণ হিসেবেই দেখছেন সাধারণ জনগণ।

এ প্রসঙ্গে একজন সাধারণ ক্রেতা বলেন, সামর্থ্য যেমনই থাকুক না কেন, সেখানে গেলে বাজার আপনি করতে পারবেনই। ধরুন আপনার পকেটে রয়েছে মাত্র ১০০ টাকা। এর মধ্যেই আপনাকে আজকের খাবারের জন্য বাজার করতে হবে। চিন্তা নেই, আপনি নিশ্চিন্তে চলে আসতে পারেন এই দোকানে। দাম ও পরিমাণ নিয়ে চিন্তা নেই। আপনার সাধ্য অনুযায়ী পণ্য পেয়ে যাবেন।

বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বাইরে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করতে চান না বিক্রেতারা। ফলে বাংলাদেশের নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং অতি নিম্নবিত্তরা নিজের সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় বা অনেক সময় শখ করে কিছু কিনে খেতে পারেন না।

অভিনব এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, করোনা শুরুর কিছুদিন আগে পেঁয়াজের বাজার দর যখন কেজি প্রতি ২৮০ টাকায় পৌঁছাল, তখনই আমি দেখলাম অনেক ক্রেতা পেঁয়াজ কিনতে পারছেন না। কারণ অনেকের দৈনিক উপার্জনই হয়তো তখন ২০০ টাকা। আর দোকানে পেঁয়াজ কিনতে গেলে এক পোয়ার কমে পেঁয়াজ বিক্রি হয় না। দেখলাম এক পোয়া পেঁয়াজ কিনতেই ক্রেতার খরচ হচ্ছে ৭০ টাকা। কেউ তো তখন দোকানে এসে বলতেও পারবে না, আমাকে ১০ টাকার পেঁয়াজ দেন। অথচ হয়তো একটি পেঁয়াজ হলেই সেই লোকের রান্না হয়ে যাচ্ছে। আমি তখন বাজার দর অনুযায়ী ৪টি করে পেঁয়াজ ছোট ছোট প্যাকেটে পুরে ১০ টাকা করে বিক্রি করতে শুরু করলাম। ঢাকা অনেক ব্যাচেলর থাকেন। হঠাৎ দেখা যায় তার বাজার শেষ হয়ে গেছে। সেই মুহূর্তে তার কাছে যে টাকা আছে সে টাকা দিয়ে হয়তো তিনি স্বল্প পরিমাণে বাজার খরচ চালিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু দোকানে গেলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের কমে তিনি কিনতে পারছেন না। এটি বেশ ঝামেলার। আমি এই বিষয়টি ভেবেও উদ্যোগটি নিয়েছি।

জুয়েল বলেন, আমার দোকানে খাদ্যসামগ্রী যা কিছু বিক্রি হয় সবকিছুই আমি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করি। পরিমাণ যতটুকুই হোক না কেন আমি দেবো। ব্যবসায় হাতেখড়ি ২০০৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায়। আমি কিন্তু লোকসান করে ব্যবসা করছি না। আর লোকসান করে ব্যবসা করাও যায় না। আমি মূলত ব্যবসাটাকে একটি সেবা মনে করে সবার কাছে পৌঁছাতে চেয়েছি, যেন আমার কাছে কোনো ক্রেতা এসে ফিরে না যায়। অন্য ব্যবসায়ীদের মতো আমার ব্যবসাতেও একই লাভ হচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে এসে কেউ অর্থের অভাবে ফিরে যাচ্ছেন না, এর মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষ উপকৃত হচ্ছেন- এটি আমার সবচেয়ে বড় আত্মতৃপ্তির জায়গা

প্রথমে বাবার ব্যবসায় সঙ্গ দিলেও বর্তমানে তিনি নিজেই দোকানের মালিক। বছর তিনেক আগে বাড়ির পাশে দোকানটি চালু করেছিলেন তিনি। আগে রাজধানীর গুলশানের শাহজাদপুরে বাবার দোকানে বসতেন। এখন সেই দোকানটির দেখভাল করেন তার বড় ভাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App