×

জাতীয়

বিচারে দীর্ঘসূত্রিতায় বাড়ছে হতাশা আর ক্ষোভ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০৪ এএম

বিচারে দীর্ঘসূত্রিতায় বাড়ছে হতাশা আর ক্ষোভ

শাহ এএমএস কিবরিয়া

গতকাল ছিল ভয়াল ২৭ জানুয়ারি। এদিন জনসভা শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জন নিহত হন। আহত হন ৪৩ জন। এ ঘটনার ১৮ বছর পার হলেও বিচার পায়নি স্বজনরা। মূলত দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে থাকা ভয়ানক এ হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো আলোর মুখ দেখছে না। সাক্ষী না আসা, আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় ঠিকমতো আদালতে হাজির না হতে পারাসহ বিভিন্ন জটিলতায় বিচার কার্যক্রম দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে। এ অবস্থায় বিচার নিয়ে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভ বাড়ছে নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের মনে।

নিহত শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘১৪ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেও কেন আমার বাবা হত্যার বিচার করেনি তা দেশের মানুষ বুঝতে পারছে। আমরা সব সময়ই বলে আসছি গ্রেনেডের উৎস এবং আসল মদদদাতারা কে তা বের করতে হবে। যদি আসল খুনিদের চিহ্নিত করা যায়, তবে ভবিষ্যতে আর কারো আপনজনকে এভাবে হারাতে হবে না। কিন্তু আমরা বার বার এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইলেও তদন্তে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার একদিন ঠিকই বাংলাদেশে হবে। তবে সেদিন এখনো আসেনি।’

ওই গ্রেনেড হামলায় নিহত আব্দুর রহিমের মেয়ে ইউপি মেম্বার ফাতেমা আক্তার চম্পা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘১৮ বছর ধরেই বিচার চাচ্ছি। মামলার রায় হতে আর কতদিন অপেক্ষা করব?’ একই ঘটনায় নিহত সিদ্দিক আলীর ছেলে কদ্দুছ মিয়াও বলেন, ‘আমরা শুধু বিচার চাই। কিন্তু এতো বছরেও বিচার পাইনি।’

মামলার আইনজীবী সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সরওয়ার আহমেদ আবদাল বলেন, ১৭১ জন সাক্ষীর মাঝে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হয়েছে। সবার সাক্ষী নেয়া সম্ভব নয়। অনেকেই মারা গেছেন, অনেকের ঠিকানা বদল হয়েছে। তবে বর্তমানে মামলাটি যেভাবে চলছে তাতে আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ মোট ৫ জন নিহত হন। এতে আহত হন হবিগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ ৪৩ জন। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ৩ দফা তদন্ত শেষে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর মধ্যে ৩ জনের নাম, ঠিকানা সঠিক না পাওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেন আদালত। বিভিন্ন মামলায় ৩ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়। অন্য একজন হারিছ চৌধুরী পলাতক থেকে মারা যান।

এরপর ২০১৫ সালে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময় আসামি হাজির হলেও সাক্ষী হাজির করা সম্ভব হয়নি। কখনো আবার সাক্ষী হাজির হলে আসামি আদালতে হাজির না থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ নেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে মামলাটির ২৮ জন আসামি রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্য আসামিরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছেন। এসব কারণে মামলাটির বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে নিহতদের স্বজনদের মাঝে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App