×

জাতীয়

গ্যাস সংকট কাটছে না সহসা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩১ এএম

গ্যাস সংকট কাটছে না সহসা

ফাইল ছবি

দৈনিক চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ ২৬৬ কোটি ঘনফুট দুর্ভোগে রাজধানীর বাসিন্দারা

রাজধানীতে গ্যাস সংকট সহসাই কাটছে না। আবাসিকে গ্যাসের চুলা জ্বালাতে বাসিন্দাদের খরচ এখন দ্বিগুণ হয়েছে। একদিকে তিতাসের গ্যাসের নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে; অন্যদিকে বাজার থেকে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে প্রতিদিনের কাজ চালাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে আবার শিল্পকারখানার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। ভোর ৬টা থেকে বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানায় গ্যাসের জন্য চলছে হাহাকার। গ্যাস না পেয়ে অনেকেই বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহার করছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে কেউ কেউ মাটির চুলা ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন।

তিতাস বলছে, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরবরাহ না বাড়লে গ্রাহকদেরও গ্যাস দেয়া সম্ভব হবে না। বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে সরবরাহ বাড়লে সংকট থেকে কিছুটা পরিত্রাণ মিলতে পারে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করলে সংকট কাটানো সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে প্রতিদিন ৩৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে পেট্রোবাংলা ২৬৬ কোটি ঘনফুটের কম গ্যাস সরবরাহ করছে। মোট গ্যাসের পরিমাণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় আসা এলএনজি থেকে ৪২ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। বাকি গ্যাস নতুন ও পুরনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। আবার সেক্টর অনুযায়ী চাহিদার বিপরীতেও কম গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২৫০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে এখন সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৮২ কোটি ঘনফুট, সার কারখানার ৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে দেয়া হচ্ছে ৩১ দশমিক ৬ কোটি ঘনফুট। বাসাবাড়িতে ৬০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে দেয়া হচ্ছে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। উৎপাদন ব্যবস্থা সমুন্নত রাখতে শিল্পকারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। বাসাবাড়ির জন্য চাহিদার অর্ধেকে নেমে আসায় নাগরিক জীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে তিতাসের একটি সূত্র জানায়, ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর জন্য প্রতিদিন তাদের ২২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস।

রাজধানীর বাসাবো এলাকার গৃহবধূ স্বপ্না বলেন, ভোর ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে গ্যাস চলে যায়। এরপর সারাদিন আর চুলা জ¦লে না। রাত ১০টার পরে টিমটিম করে চুলা জ্বলতে শুরু করে। এই শীতের মধ্যে গরম পানির ব্যবহার বেড়ে যায়। উপায় না পেয়ে চাহিদা মেটাতে ৮ মাস ধরে এলপিজি সিলিন্ডার কিনে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা সিলিন্ডারের পেছনে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। আবার গ্যাস না পেয়েও তিতাসের নির্ধারিত মাসিক বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে গ্যাসের খরচ দ্বিগুণ হয়েছে।

জুরাইন এলাকার গৃহবধূ আসমা খাতুন রান্নার জন্য মাটির চুলা কিনেছেন। বাড়ির ছাদের ওপর তার পরিবারের রান্না চলে। তিনি বলেন, এই এলাকায় গ্যাস পাওয়া যায় না বললে ভুল হবে না। অনেক বাড়িতেই এখন মাটির চুলা ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার অনেকে ইলেকট্রিক চুলা বা গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করে।

জানা গেছে, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, লালবাগ, আজিমপুর, হাজারীবাগ, সূত্রাপুর, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, মানিকনগর, রামপুরা, মগবাজার, মালিবাগ, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বাড্ডা এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ঢাকার আশপাশের সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, গ্যাস নিয়ে পূর্ববর্তী ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই আজকে গ্যাসের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে এবং আমাদের সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগেও বলেছি, এখনো বলব- দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে গুরুত্ব না দিয়ে সরকারের উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। এলএনজি আমদানি করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। কিন্তু এখন আমাদের সাধারণ ভোক্তাদের খেসারত দিতে হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম আরো বলেন, গ্যাস দিতে না পারলে তিতাসের উচিত বিল না নেয়া। কিন্তু গ্যাস না দিয়েও তিতাস বিল আদায় করছে। ক্ষুব্ধ ভোক্তারা বিল দিতে না পারলে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছেন। গত বছরের জুন মাসে এলএনজির দাম হিসাব করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু চাহিদার বিপরীতে তারা গ্যাস সরবরাহ করছে না, এটা অনৈতিক।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান জানিয়েছেন, গ্যাসের সংকট চলছে। তাই সরবরাহ কম। সংকট মেটাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দেশীয় উৎপাদন ও আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। পেট্রোবাংলা নতুন কূপ খনন, নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, পুরনো কূপগুলো খননের কাজ হাতে নিয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসের দিকে গ্যাস সংকট থেকে কিছুটা পরিত্রাণ মিলতে পারে বলে আশা করছি।

তিনি আরো জানান, পেট্রোবাংলা গ্যাস অনুসন্ধানে আগামী চার বছরে ৪৬টি কূপ খনন করবে। এসব প্রকল্প সফল হলে ভবিষ্যতে নতুন করে প্রতিদিন ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ববাজারে স্পট মার্কেটে দাম কমলে ঘাটতি মেটাতে এলএনজি আমদানির বিষয়টিও পরিকল্পনায় রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App