×

মুক্তচিন্তা

শওকত আলীর জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৬ এএম

শওকত আলীর জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

বাংলাদেশের স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে মৃত্যুঞ্জয়ী বীর কর্নেল (অব.) শওকত আলীর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। তার জন্ম ১৯৩৭ সালের আজকের এই দিনে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার লোনসিং বাহের দিঘিরপাড় গ্রামে। ১৯৫৩ সালে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া হাইস্কুল থেকে অঙ্কে লেটারসহ প্রথম বিভাগে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ওই বছরই ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে আইএ ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে তিনি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে বিকম পাস করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ লাভ করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্য হন। শিক্ষাজীবন শেষে শওকত আলী ১৯৫৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন র‌্যাংকে যোগ দেন। সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদান সত্ত্বেও পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বৈষম্য তার বিবেককে নাড়া দেয়। করাচিতে চাকরিরত থাকাকালীন নৌবাহিনীর লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেমসহ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত দেশপ্রেমিক কিছু বাঙালি কর্মকর্তা ও সৈনিকের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। যাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের সুসংগঠিত করে আকস্মিক হামলার মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে বাঙালির নিজস্ব আবাসভূমি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটানো। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই চক্রান্তের অভিযোগে ১৯৬৮ সালের ১০ জানুয়ারি তৎকালীন ক্যাপ্টেন শওকত আলীকে করাচির মালির ক্যান্টনমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার ও নজরবন্দি করে রাওয়ালপিন্ডি সামরিক আদালতে এক মাস আটক রেখে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে অন্য বন্দিদের সঙ্গে আটক রাখা হয়। জননেতা শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। যে মামলার প্রকৃত নাম ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’। প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের পক্ষেই সম্ভব ছিল লৌহমানব হিসেবে খ্যাত পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের শাসনামলে এমন দুঃসাহসিক ও দেশাত্মবোধক তৎপরতা, যার নেতৃত্বে ছিলেন জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বোচ্চ দণ্ড তথা মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকি জেনেও এমন পরিকল্পনা প্রণয়নের ঘটনা দেশপ্রেমের বিরল দৃষ্টান্ত। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জননেতা শেখ মুজিবের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে শওকত আলীও মুক্তি লাভ করেন। পাকিস্তান সরকারের দায়েরকৃত এ মামলা প্রকৃত অর্থে জননেতা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে অকুতোভয় বাঙালিদের সশস্ত্র সংগ্রামের ঐতিহাসিক উদ্যোগ। ছাত্রজীবন থেকে শওকত আলী প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা ধারণ ও লালন করতেন বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শে দীক্ষিত ছাত্রলীগের প্রাক্তন অনুসারী হিসেবে। সেনাবাহিনীতে যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তথা বঙ্গবন্ধু অনুসারীদের চিহ্নিত করে সুপরিকল্পিতভাবে চাকরিচ্যুত এমনকি হত্যা করা হতো তখন অকুতোভয় কর্নেল (অব.) শওকত আলীর আওয়ামী লীগে যোগদান দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ রাজনৈতিক নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার করে। জিয়ার শাসনামলে ১৯৭৯-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চরম দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ থেকে ৩৯ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যাদের মধ্যে কর্নেল (অব.) শওকত আলী (শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থেকে) একজন। এরশাদের আমলে মন্ত্রিত্বের প্রলোভন তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তখন তাকে মিথ্যা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার হীন চক্রান্ত করা হয়। কোনো প্রলোভনের কাছে তিনি কখনো মাথা নত করেননি, রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। কর্নেল (অব.) শওকত আলী নবম জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তাকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৩ বছর তিনি অসুস্থ থাকার পর স্মরণশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকায় সিএমএইচে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। জাতীয় বীর কর্নেল (অব.) শওকত আলী ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক তথা বিনয়ী ও সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ, তার অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এবং আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে জাতীয় বীরের মর্যাদা প্রদান করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে শওকত আলীর মতো বিনয়ী মানুষ বিশেষত রাজনৈতিক নেতার ভীষণ অভাব! তার চারিত্রিক গুণাবলি থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে। মৃত্যুঞ্জয়ী জাতীয় বীর কর্নেল (অব.) শওকত আলীর জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

হাসান-উজ-জামান : লেখক ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App