×

আন্তর্জাতিক

দীর্ঘ হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ, ছড়ানোর শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:২৭ এএম

লেপার্ড আর আব্রামস ট্যাংক কিয়েভের পথে রওনা হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর প্রায় এক বছর পরে ইউক্রেনের রক্তদাবির মতো এই ট্যাংক যখন দেশটির মাটিতে পৌঁছবে তখন রাশিয়ার সৈন্যরা থাকবে অনেকটাই নিরাপদে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির এই সিদ্ধান্ত কিয়েভে যখন উদযাপন করা হয়েছে তখন ট্যাংক অনুমোদনে পশ্চিমা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণে রুশ গোয়েন্দারা নতুন ইস্যুকে হাজির করছে ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের সামনে।

রুশ গোয়েন্দাদের তৃপ্তির ঢেঁকুর: ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারের জর্জ ব্যারোস নিউজ উইককে বলেছেন ইউক্রেনের সর্বোচ্চ প্রয়োজনে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা পৌঁছতে দেরি হওয়াটা অবশ্যই রুশ গোয়েন্দাদের বিশাল বিজয়। তিনি বলেন, রাশিয়া সর্বদা অগ্রিম হুমকি দেয়। এটি তাদের তথ্য যুদ্ধ, যেটি সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে এবং বারবার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও আমরা এই দেরিটা করি। যতবার আমরা নতুন কিছু দেয়ার কথা বলি, রাশিয়া দাবি করে যে এটি তাদের ‘রেড লাইন’। তিনি ব্যাখ্যা করেন, আমরা অবশেষে ইউক্রেনে যা পাঠাই পরে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের কয়েক মাস আগেই তা পাঠানো উচিত ছিল। ব্যারোস বলেন, রাশিয়া একটি দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য অভ্যন্তরীণভাবে পরিস্থিতি তৈরি করছে।

রক্তদাবি পূরণে অনেক দেরি: তিনি বলেন, রাশিয়ার তৈরি পরিস্থিতির কারণেই ইউক্রেনকে ট্যাংক পাঠানোর প্রতিশ্রæতি পূরণে অনেক দেরি হয়েছে। এতে অনেক ঘাটের পানি খেতে হয়েছে ইউক্রেনকে। যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির ঠেলাঠেলির সংবাদে এ সপ্তাহে সরগরম ছিল বিশ্ব গণমাধ্যম। যুদ্ধের শুরু থেকেই পশ্চিমাদের কাছে এসব অস্ত্র চেয়ে আসছিল কিয়েভ। ১১তম মাসে এসে এই চাওয়া মিটতে যাচ্ছে অবশেষে। গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩১টি আব্রামস ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দেয়ার পরই জার্মানির পক্ষ থেকে ১৪টি লেপার্ড ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা আসে।

ট্যাংক না দিতে কত যুক্তি: এর আগে ট্যাংক পাঠাতে অসম্মতি জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। ইউক্রেনে আব্রামস ট্যাংক সরবরাহ করার আগে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে যে টারবাইন চালিত আমেরিকান যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জটিল এবং ব্যবহার করতে খুব বেশি জ্বালানির প্রয়োজন। প্রশিক্ষিত সৈন্য ছাড়া এই ট্যাংক পরিচালনা করা অসম্ভব। মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা কলিন কাহল ঠিক এই কারণগুলো উল্লেখ করে ইউক্রেনে ট্যাংক সরবরাহ করার কথা অস্বীকার করেছিলেন। মূলত জার্মানিকে রাজি করানোর জন্যেই যুক্তরাষ্ট্র এই আপত্তি তুলেছিল বলে গতকাল মন্তব্য করেছে গার্ডিয়ান।

ট্যাংক কতটুকু সাফল্য দেবে: তবে এই ঘোষণার পরেই রাশিয়ার বার্তা সংস্থা আরটির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অদক্ষ ক্রু দিয়ে এসব ট্যাংক পরিচালনা করার কারণে ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে। কৌশলগত সাফল্য পেতে হলে ইউক্রেনের অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ মার্কিন ট্যাংক থাকা প্রয়োজন। এছাড়া, আব্রামস ট্যাংক ইউক্রেনে সরবরাহ করলে সামরিক অথবা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো সাফল্য আসা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বেশির ভাগ পশ্চিমা বিশ্লেষক একমত হয়েছেন।

প্রথমে ট্যাংক কোম্পানিগুলো ইউক্রেনের ক্রুদের প্রশিক্ষণ দেবে। পোল্যান্ড জার্মান ও আমেরিকান ট্যাংকগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত সেবা দেবে। তবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে দীর্ঘ মেয়াদে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ফলে যুদ্ধের ময়দানে এসব ট্যাংক ব্যবহারে কিয়েভ খুব বেশি সাফল্য পাবে না, বলছে রাশিয়া।

জেলেনস্কির এবার নতুন দাবি: যুদ্ধ শুরুর বছরখানেকের মাথায় এসে মিত্রদের কাছ থেকে ট্যাংক পাওয়ার পরে এবার ইউক্রেনের চাওয়া অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভের উপদেষ্টা ইউরি সাক বলেন, পরবর্তী বড় চাওয়া হবে যুদ্ধবিমান।

তবে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ স্পষ্ট করে বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিমান পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা ফাইটার জেট নিয়ে কথা বলতে মোটেও আগ্রহী নই। এমনকি আমরা কোনোভাবেই ইউক্রেনে আমাদের সেনা পাঠাবো না, কারণ এই যুদ্ধে ন্যাটো সেনাদের অংশগ্রহণের কোনো নির্দেশনা নেই। এখন পর্যন্ত কিয়েভকে ফাইটার জেট ও সেনা সরবরাহ করার কোনো পরিকল্পনা নেই এবং ভবিষ্যতেও কোনো পরিকল্পনা থাকবে না।

ওলাফ শলৎজ আরো জানান, পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তবে এই সমর্থন যুদ্ধকে আরো উসকে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য যা প্রয়োজন তা করছি। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা এই যুদ্ধকে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে যুদ্ধে পরিণত হোক তা চাই না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App