×

সারাদেশ

সিসিকে করধার্য শাখার অনিয়ম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:২৯ এএম

সিসিকে করধার্য শাখার অনিয়ম

ছবি: সংগৃহীত

সিলেট সিটি করপোরেশনের কর ধার্য শাখার অনিয়ম নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিসিক কর্তৃপক্ষ। বরং দায়ী ব্যক্তিরা এখনো বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন।

ঘটনার শুরু গত বছরের সেপ্টেম্বরে। সিসিকের রাজস্ব বিভাগের অন্যতম প্রধান অঙ্গ করধার্য শাখার অব্যাহত অনিয়মের অভিযোগে শাখা প্রধান চন্দন দাশকে ওসডি করে অনিয়ম তদন্তে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে সিসিক প্রশাসন।

পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির দুই সদস্যকে অব্যাহতি দিয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে দেয়া হয় তদন্ত ভার। সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় সেই কমিটি সময় নেয় চার মাস। সিসিকের দুই শাখার বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা ও মেয়রসহ ১৩ জনের বক্তব্য নিয়ে গত ১০ জানুয়ারি সিসিকের প্রধান নির্বাহীর দপ্তরে ১৫ পৃষ্ঠার এক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে কমিটি। তদন্তে কর ধার্য শাখার নানা অনিয়মের সত্যতা পেয়ে চিফ এসেসর চন্দন দাশ, সহকারী এসেসর শেখর দেবনাথ ও আহমদুজ্জামানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সিসিকের আর্থিক ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করার সুপারিশ করা হয়। তবে রিপোর্ট প্রদানের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

তদন্ত রিপোর্টের একটি কপি ভোরের কাগজের সংগ্রহে রয়েছে। যা পর্যালোচনা করে জানা যায়, সিলেটের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সাফওয়ান চৌধুরীর মালিকানাধীন আর্কাডিয়া ভবনের কর নির্ধারণে ভয়ংকর অনিয়মের আশ্রয় নেন সিসিকের তিন কর্মকর্তা। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভবনটির অ্যাসেসমেন্ট করে ভবনটিতে ১৬টি হোল্ডিং এ কর ধার্য করে সিসিকের কর ধার্য শাখা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অ্যাসেসমেন্ট রেজিস্ট্রারে মাত্র ৬টি হোল্ডিং উল্লেখ করে কর আদায় শাখাকে চিঠি দেয়া হয়। একই সঙ্গে ধার্য করকে এক বছর পর থেকে কার্যকর করা হয়। তবে সেই ৬ হোল্ডিং নিয়ে করা হয় জালিয়াতি, ভবনটির প্রথম ৬ তলায় মোট ৫টি হোল্ডিং ধরে তাতে প্রতি কোয়ার্টার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। সিলেট অঞ্চলে টাকার প্রসঙ্গ এলেই উদাহরণ হিসেবে যার নাম আসে সেই সুন্নাত চৌধুরীর জেষ্ঠ পুত্র সাফওয়ান চৌধুরীর নামে আর্কাডিয়া ভবনের ‘ধার্যকৃত কর পরিশোধ কষ্টসাধ্য হবে’ উল্লেখ করে করের হার কমানোর জন্য সিসিক মেয়র বরাবর একটি আবেদনপত্র প্রদান করা হয়।

সেই অনুযায়ী ধার্যকৃত সাড়ে ৭ হাজার টাকা কোয়ার্টার থেকে তিন হাজার টাকা কর পুনর্নির্ধারণ করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তবে মেয়রের অনুমোদনের পর নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতিটি হোল্ডিং এর ধার্যকৃত টাকার পরিমাণ ‘ওভার রাইটিং করে’ পরিবর্তন করে কর আদায় শাখাকে চিঠি প্রদান করেন সিসিকের করধার্য শাখার প্রধান চন্দন দাশ।

ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে জানা যায়, আর্কাডিয়া ভবনের স্বত্তাধিকারী সাফওয়ান চৌধুরীর নামে কর পুনর্নির্ধারণ করার যে আবেদন দেয়া হয়েছে তা সম্পর্কে সাফওয়ান চৌধুরী কিছুই জানেন না। এমনকি আবেদনে যে স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে তাও তার নয়। ঘটনা জানতে পেরে গত ২১ ডিসেম্বর সিসিকের প্রধান নির্বাহী বরাবর চিঠি দিয়ে স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি অবহিত করেন সাফওয়ান চৌধুরী। যার একটি কপি ভোরের কাগজের নিকট সংরক্ষিত আছে। এসব ব্যাপারে জানতে আর্কাডিয়া ভবনের সত্ত্বাধিকারী সাফওয়ান চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করলে তিনি জানান, তার নামে আবেদন করে সিসিকে সংগঠিত অনিয়ম সম্পর্কে তিনি জানার পর পরই সিসিক প্রধান নির্বাহী বরাবর পত্র দিয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এ সময় তিনি ও তার কোম্পানি সবসময় নিধারিত কর জমা দিয়ে আসছেন বলেও জানান।

সিসিকের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, কর ধার্য শাখা প্রধান চন্দন দাশ গত দশ বছর ধরে তার অধঃস্তন কর্মীদের চাপ দিয়ে দুই হাজারেরও বেশি ভবনকে রেখেছেন কর আদায়ের বাইরে। নামমাত্র হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন আর্থিক সুবিধা। এসব অনিয়ম নজরে আসায় গত ৭ সেপ্টেম্বর ওএসডি করা হয় চন্দন দাশকে। তবে চন্দন দাশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও সিসিকের তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১১০টি হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট রেজিস্ট্রারে তোলাই হয়নি। এতে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশন অন্তত সাড়ে ৫ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত অন্তত ১৮৩১টি হোল্ডিং কম্পিউটারে এন্ট্রি দেয়া হয়নি। যাতে সিসিকের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ আরো প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার মতো। সব মিলিয়ে ১৯৪১ হোল্ডিং থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় সিসিক।

এসব ব্যাপারে জানতে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হকের সঙ্গে দেখা করলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী তদন্ত কমিটি কিছু সুপারিশ করেছেন। তবে সিসিকের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় নথিটি এখনো যাচাই বাছাই করা হয়নি। তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্টের আলোকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণটি এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা সব দিক বিবেচনায় রেখে বিধি অনুযায়ী ববস্থা নেব। এসব ব্যাপারে জানতে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি অসুস্থ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App