×

মুক্তচিন্তা

বিদ্যাদেবীর বন্দনা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২৬ এএম

বিদ্যাদেবীর বন্দনা

বাগদেবী, জ্ঞানদেবী, সংগীতাধিষ্ঠাত্রী দেবী রূপে বন্দিতা। বাক, জ্ঞান, সংগীত সব মানুষের প্রিয়। সরস্বতী বন্দনায় বলা হয়েছে- যা কুন্দেন্দু তুষার হার ধবলা/যা শুভ্রাবস্ত্রাবৃতা/যা বীণাবরদমণ্ডিত করা/যা শ্বেত পদ্মাসনা। যিনি কুন্দফুল, চাঁদ, বরফের মতো শ্বেতবর্ণা, মুক্তাহার ও শ্বেত বস্ত্র পরিহিতা, যিনি শ্বেত পদ্ম অধিষ্ঠিত ও বীণাবাদিনী তিনি হচ্ছেন মা সরস্বতী। আমাদের সব পূজানুষ্ঠান এবং দেবদেবীর প্রতিমা আত্মসাধনা লব্ধ। দেবীর ধ্যানমন্ত্রে দেখি মা সর্বশুক্লা। যিনি চাঁদের ন্যায় শুভ্রবর্ণা। শুভ্রবর্ণ শুদ্ধ, পবিত্রতা ও জ্ঞানের প্রতীক। বিশুদ্ধ নির্মল জ্ঞান মানুষকে যথার্থ মানুষ করে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা লাভ করে। এই শিক্ষা লাভের সঙ্গে যদি প্রকৃত জ্ঞান অর্জন না করে তাহলে সমাজ উপকৃত হবে না। পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে ভালো বইও পড়তে হবে। জ্ঞানী ব্যক্তিরা যে পথ প্রদর্শন করেছেন সে পথ অনুসরণ করতে হবে। উত্তরায়ণ সংক্রান্তি পরবর্তী হচ্ছে সরস্বতী পূজা। উত্তরায়ণ হচ্ছে ঊর্ধ্ব দিকে গমন। সংবাদ মাধ্যমে যখন শুনি ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকদের অসম্মান করছে তখন খুব খারাপ লাগে। সুশিক্ষার অভাবে কিশোররা বিভিন্ন গ্রুপে বিভিক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। ভাবতে অবাক লাগে যখন একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রকে হত্যা করার জন্য অস্ত্র হাতে নেয়। আমাদের কিশোর, আমাদের ছাত্র, আমাদের ছেলেরা যদি ভালো হয়, শ্রদ্ধাশীল হয় তাহলে দেশের জন্য অনেক শুভ হবে, মঙ্গল হবে। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সুশিক্ষার আলোকে আলোকিত হব। শাস্ত্রে বলা হচ্ছে, ‘বিদ্যা আর রাজপদ কখনো তুল্য নয়/বিদ্বান রাজার চেয়েও সম্মানিত হয়/রাজা শুধু পূজা পান আপন রাজ্যতে/বিদ্বান পূজিত হয় সারা ধরণীতে। শাস্ত্র সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিদ্বান ব্যক্তি একজন রাজার চেয়ে সম্মানিত। একজন বিদ্বান ব্যক্তি পৃথিবীর জন্য অলংকার, কেননা তিনি শক্তি এবং লেখনীর অপূর্ব সমন্বয়ে পৃথিবীর সব মানুষের মঙ্গল সাধন করেন। তিনি নিজে শ্রদ্ধাবান হন এবং অপরকে শ্রদ্ধা করার মন্ত্র শিখিয়ে দেন। শ্রদ্ধা জানানোই হচ্ছে পূজা। শ্রীশ্রী গীতায় বলা হয়েছে- ‘শ্রদ্ধাবান ব্যক্তিই জ্ঞান লাভ করতে পারেন।’ এই জ্ঞান লাভের অদম্য উৎসাহ নিয়ে আমরা সরস্বতী পূজা করি। আজ সরস্বতী পূজা। সরস্বতীর অপর নাম বাগদেবী, ঋগ্বেদে বাগদেবী ত্রয়ী মূর্তি। ভূঃ, ভুবঃ, স্বঃ-ইলা, সরস্বতী, ভারতী। পৌষ সংক্রান্তি বা উত্তরায়ণের পরে শুক্লপক্ষের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে বিদ্যার্থী, জ্ঞান লাভেচ্ছু ভক্তবৃন্দ জ্ঞান লাভের আশায় সরস্বতী পূজা করেন। দেবী কাঠামোতে দেখি মা সরস্বতী পদ্মাসনা। পদ্মকে বলা হয় পঙ্কজ। এই পদ্ম ফুল কাদায় জন্মে। অথচ কাদার লেশমাত্র পদ্মফুলে থাকে না। আমরা প্রত্যেকে মায়াময় সংসারে আছি। যেখানে রয়েছে হিংসা, বিদ্বেষ, আত্ম অহমিকা। এগুলো ত্যাগ করে জীবনকে পদ্মের মতো সুশোভিত করতে হবে। যে কামনা-বাসনা মানুষের মনকে সংকুচিত করে সেই কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করতে হবে। মানুষকে সেবা দিতে হবে। মানুষের বিপদে আমাদের দাঁড়াতে হবে। দেশকে ভালোবাসা, মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর একান্ত কর্তব্য বিবেক দ্বারা নিত্যবস্তুর সারবার্তা ও অনিত্য বস্তুর অসারবার্তা নিরূপণ করা। ডিশ-স্যাটেলাইটের যুগে প্রতিনিয়ত আমরা অসত্য অসুন্দরের পথে পা দেয়ার অনেকগুলো রাস্তা খুঁজে পাই। আত্মবিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাজে ঘূর্ণায়মান অসত্য ও অসুন্দর থেকে সুন্দরকে গ্রহণ করতে হবে। মা সরস্বতীর হাতে বীণা দেখা যায়। এই বীণা কলা এবং সংগীতের প্রতীক। বীণাতে যেমন সংগীত বাজে তেমন সৃষ্টি হয় নাদ। যোগ শাস্ত্র মতে এই বীণা মেরুদণ্ডের প্রতীক। সরস্বতী সাধনায় সাধক যখন অনাহত ব্রহ্মানাদ শ্রবণ করেন তখন সংসারে শত কোলাহল তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। সরস্বতীর হাতে পুস্তক ও লেখনী। এই দুটিই মানুষের জ্ঞান লাভের প্রতীক। বই পড়ে আমাদের জ্ঞান ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে হবে। বিদ্যা এমন একটি ধন যাকে বিভাজন করা যায় না। চোর চুরি করতে পারে না। বিদ্যাধন কাউকে প্রদান করলে কমে না বরং বাড়ে। যারা প্রকৃত বিদ্যা অর্জন করেছেন তারা মানুষকে সম্মান করতে জানেন কারণ তারা চরিত্রগতভাবে বিনয়ী হন। প্রতি বছর শীতের হিমেল পরশে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা সরস্বতীর ভাবনায় ভাবিত হয় আমাদের প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সব ধরনের অশিক্ষা, কুশিক্ষাকে পরিত্যাগ করে সুশিক্ষার সুনিপুণ আবরণে আচ্ছাদিত করার প্রয়াস নিয়ে আমাদের ছাত্র সমাজকে এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রছাত্রী, পূজার্থীবৃন্দ ছুটে চলে পূজার ডালা নিয়ে মাতৃ চরণে অঞ্জলি দেয়ার জন্য। প্রকৃত বিদ্যা মানুষকে বিনয় দান করে। বিদ্যাহীন মানুষ অন্ধকারে হাবুডুবু খায়। যে যত বেশি বিদ্বান সে তত বেশি নিরহংকার, নিরভিমান। মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য সে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। ভক্তি, শ্রদ্ধা, প্রেম, ভালোবাসা একজন বিদ্বান ব্যক্তি থেকে শিখতে পারি। সরস্বতী পূজার তাত্ত্বিক রহস্য একজন মানুষকে প্রকৃত বিদ্বান হতে সাহায্য করে। এই পূজার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভুলত্রæটিগুলো সংশোধন করে আলোকিত মানুষ হতে পারি।

রূপম চক্রবর্ত্তী : সনাতন ধর্মীয় বক্তা ও লেখক, চট্টগ্রাম। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App