×

মুক্তচিন্তা

পাঠ্যপুস্তকে ভুল : দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায় এড়াতে পারেন না

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২৬ এএম

পাঠ্যপুস্তকে ভুল : দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায় এড়াতে পারেন না

২০২৩ সালের পাঠ্যপুস্তকের কিছু ভুল এবং অসঙ্গতি নিয়ে সম্প্রতি বেশ আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মূলত এই সমালোচনা প্রথমে শুরু হয় নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে জীববৈচিত্র্যবিষয়ক অনুসন্ধানী পাঠ অধ্যায়টি নিয়ে, যে অধ্যায়টির কিছু অংশ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ওয়েবসাইট থেকে হুবহু গুগল ট্রান্সলেটের মাধ্যমে অধ্যায়টিতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বইটির সম্পাদনার দায়িত্বে দেশের দুজন বরেণ্য শিক্ষাবিদ জড়িত থাকায় এই সমালোচনায় নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে। অবশ্য ইতোমধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এবং বইটির সম্পাদনার দায়িত্বে থাকা দুজনের একজন শ্রদ্ধেয় ড. জাফর ইকবাল মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং উক্ত অধ্যায় ও বইটির লেখক সম্পাদকরা না হলেও এর দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। এর বাইরে নতুন কারিকুলামের ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইটিতেও বেশকিছু ভুল রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে মারাত্মক কিছু ভুল তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে যা পড়লে ইতিহাস বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে নবম এবং দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইটি তো পুরনো সংস্করণের এই বইটিতে যে ধরনের ভুল ছাপা হয়েছে তা সত্যিই দুঃখজনক। নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের ১৮১ পৃষ্ঠায় ‘অবরুদ্ধ বাংলাদেশ ও গণহত্যা’বিষয়ক অংশে প্রথম লাইনে ছাপা হয়েছে, ‘২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশজুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছিল।’ এটি আসলে সঠিক তথ্য নয়, প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের বর্বর হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ কালরাত্রি থেকেই নিরীহ বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এমন একটা সর্বজন স্বীকৃত ইতিহাসবিষয়ক তথ্য কী করে ভুল ছাপা হলো তা ভাবতেই অবাক লাগে। বইটির ২০০ পৃষ্ঠায় একটি অংশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা নিয়ে বলা হয়েছে, “মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থার ধরন কী হবে, এই সম্পর্কে তখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভায় দীর্ঘ আলোচনার পর ‘অস্থায়ী সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তন করেন। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত সায়েমের নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। একই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী।” মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওই সময়ের রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নিকট শপথবাক্য পাঠ করেছিলেন। এসব বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে থাকা ইতিহাসবিষয়ক তথ্য উপাত্তগুলো বারবার নিরীক্ষা না করে মাধ্যমিক পর্যায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধাপের বইয়ে ছাপানো হলো- তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটি ভুল নাকি ইচ্ছাকৃত ভুল তা সঠিকভাবে খতিয়ে দেখা সমীচীন বলে আমরা মনে করি। বিশেষ করে বইটির কিছু অংশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে একেবারে খাটো করে দেখা হয়েছে, যা অনেকের কাছে মনে হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়েছে। অবশ্যই অনেক সমালোচনার পর জাতীয় পাঠ্যপুস্তক প্রণেতাদের এ ভুল এবং অসঙ্গতিগুলো দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং এসব বিষয়ে তাদের ওয়েবসাইটে সংশোধনী দেয়া হয়েছে এবং সংশোধনীগুলো দেশের উপজেলার শিক্ষা অফিসগুলোতে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সংস্করণ থেকে এগুলো সংশোধন করা হবে। বর্তমানে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড যে সংশোধনীগুলো দিয়েছে সেগুলোই শিক্ষার্থীদের শিক্ষকরা পড়াবেন এটি জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপরও দেশের এত বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে যারা দায়িত্বের অবহেলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। কারণ তারা কোনো অবস্থাতেই এর দায় এড়াতে পারেন না। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা যারা এই কাজের জন্য সম্মানীও গ্রহণ করেছেন তাদের এমন দায়সারাভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বকে শেষ করার মানসিকতাকে কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। আগামীতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সঙ্গে যারা যারা জড়িত থাকবেন তাদের কাজ তদারকির জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ বই ছাপানোর আগে কিছু দক্ষ এবং নামকরা শিক্ষাবিদের দ্বারা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বইগুলোর ভুল একেবারে নগণ্য পর্যায়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

রতন কুমার তুরী : লেখক ও শিক্ষক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App