×

মুক্তচিন্তা

কোটা পদ্ধতিতে বৈষম্য

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২৫ এএম

কোটা পদ্ধতিতে বৈষম্য

শিক্ষাই শক্তি, শিক্ষাই মুক্তি- অর্থাৎ দেশের অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে শিক্ষা। আর উচ্চশিক্ষার সুতিকাগার বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। এখানে গবেষণা ও নতুন নতুন আবিষ্কার হবে, হবে মেধাবীদের মিলনমেলা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মেধাবীদের উচ্চশিক্ষার এক স্বপ্নের জায়গা। কারণ এখানে পড়াশোনার মান ভালো এবং পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে কম। হাজারো স্বপ্ন, কঠোর পরিশ্রম এবং অর্থ ব্যয় করে ভালো পরীক্ষা দিয়েও এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া অনিশ্চিত। এর প্রধান কারণ ভর্তিতে কোটা পদ্ধতি। প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী অন্যদের চেয়ে শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য এক নম্বর কম পাওয়ার কারণে যেখানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না; সেখানে কোটার কারণে অনেক কম নম্বর পেয়েও বহু শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নিচ্ছে। এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও কোটার ভিত্তিতে চান্স পেয়েছে। অথচ কোটা পদ্ধতি ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলের। কিন্তু তা ছিল সীমিত পর্যায়ে উচ্চতর পদেই আর সীমিত আকারে। বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতি চালু হয়েছিল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের সাময়িক সুবিধার জন্য। কিন্তু পরে তাদের নাতি-নাতনিদের এর আওতায় নিয়ে আসা হয়। পর্যায়ক্রমে চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও কোটার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে। সরকারি চাকরিতে যেমন : পোষ্য, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নারী, উপজাতিসহ নানা কোটা পরিলক্ষিত হতো। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটাবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে। সরকার এই জোরালো আন্দোলনের ফলে কোটা সংস্কার করতে বাধ্য হয়। কিন্তু অধিকাংশ সরকারি চাকরিতে কোটায় নিয়োগ এখনো বহাল রয়েই গেছে। সম্প্রতি ‘প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ২০২০’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন প্রার্থীকে ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। এ পরীক্ষার নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা, ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা প্রয়োগ করে যেখানে এই কোটার ওপর ২০ শতাংশ বিজ্ঞান কোটা রাখা হয়। সে হিসেবে নারী ও পোষ্য নারী ২৬ হাজার ৩০২, পোষ্য পুরুষ ৩ হাজার ৭৫৭ এবং পুরুষ মেধায় ৫ হাজার ৭১৫ জন নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এমনকি কোটায় নিয়োগের ফলে ভিন্ন ভিন্ন কার্ট মার্কে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ফলশ্রæতিতে কোটার প্রেক্ষিতে মেধায় তুলনামূলক অল্পসংখ্যক পুরুষই নিয়োগ পায়। এভাবে কোটা ব্যবস্থার বেড়া জালে পরে বাংলাদেশের সরকারি নিয়োগের একটা বড় খাত সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্যের কারণে বঞ্চিত হচ্ছে যোগ্যরা। কোটা ব্যবস্থায় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ রাজনীতির ধূম্রজাল বুনে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অযোগ্যদের চাকরির সুযোগ করে দেন। ফলে যোগ্যরা হারাচ্ছে তাদের কর্মসংস্থান এবং তৈরি হচ্ছে অযোগ্যদের এক বিশাল বলয়। কোটা ব্যবস্থার বৈষম্যে পড়ে প্রতি বছর কাক্সিক্ষত শিক্ষা এবং চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লক্ষাধিক মেধাবী শিক্ষার্থী। সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের জন্য সবার সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। তবে উপ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কোনো অনগ্রসর অংশের (প্রতিবন্ধী ও উপজাতি) জন্য বিশেষ বিধান রাখার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি চাকরির বাজারে অধিকাংশ প্রার্থী পোষ্য কোটার সুবিধাভোগী। তাহলে সবার সমান অধিকারের বিষয়টি কতটুকু বাস্তব। সম্প্রতি, পোষ্য কোটা বাতিলে ডিসিদের সুপারিশ নজরকাড়ার মতো। কিন্তু অধিকাংশ কোটা ব্যবস্থা এখনো রয়েই গেছে। কোটা ব্যবস্থা, যেটা অনগ্রসর জাতির জন্য দেয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ সুবিধা ভোগ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এই অযৌক্তিক কোটাব্যবস্থা বাতিল করা এখন সময়ের দাবি। এতে মেধাবীরা অর্জন করবে তাদের যোগ্য স্থান। তারাই এগিয়ে নেবে দেশকে। তাই দেশের কল্যাণার্থে কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মো. আনোয়ার হোসেন : শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App