×

জাতীয়

ইভিএমে পিছুটান আর্থিক সংকটে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:১৫ এএম

ইভিএমে পিছুটান আর্থিক সংকটে

ফাইল ছবি

প্রকল্পটি নিয়ে আপাতত অগ্রসর না হওয়ার কথা ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন : ইসি সচিব

আর্থিক সংকটের কারণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প থেকে সরে এসেছে পরিকল্পনা কমিশন। বৈশ্বিক পরিস্থিতি আর আর্থিক সংকট বিবেচনায় ২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার নতুন প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।

ইসি সচিব বলেন, আমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত পেয়েছি। তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে না। আবার বাতিলও হচ্ছে না। তবে এ মুহূর্তে ইভিএম প্রকল্প পাস হচ্ছে না। গত রবিবার (২২ জানুয়ারি) পরিকল্পনা কমিশন ইসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি আপাতত অগ্রসর না হওয়ার কথা চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে মো. জাহাংগীর আলম বলেন, পরিকল্পনা কমিশন আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, ইভিএমের প্রকল্পটি বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় আপাতত প্রক্রিয়াকরণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, কমিশন আগেই জানিয়েছে নতুন প্রকল্প পাস না হলে আমাদের কাছে যতগুলো ইভিএম আছে, তা দিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব। বাকিগুলো ব্যালটে হবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ইভিএম দিয়ে যা সম্ভব, তা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সেটা বহাল রয়েছে। ইভিএমে ভোট ৫০টি আসনেও হতে পারে; ৬০-৭০টিতেও হতে পারে। আমরা মেশিনগুলো পরীক্ষা করে দেখব, আমাদের কাছে কতগুলো মেশিন ব্যবহারযোগ্য আছে- সেগুলো ব্যবহার করা হবে।

উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ব্যবহারের লক্ষ্যে গত বছরের অক্টোবর মাসে দুই লাখ মেশিন কেনার জন্য নির্বাচন কমিশন ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার নতুন একটি ইভিএম প্রকল্প প্রস্তাব করে সরকারের কাছে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন বৈশ্বিক সংকটের কারণে এ প্রকল্পটিতে কাটছাঁট করার জন্য গত বছরের মাঝামাঝি ইসিতে ফেরত পাঠায়। এ নিয়ে ইসির

ইভিএম প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা নিজস্ব ও বাইরের এক্সপার্টদের সঙ্গে বসে এ প্রকল্পটিতে কিছু কাটছাঁট করে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠান। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের আর্থিক পর্যালোচনা ও পরীবীক্ষণ কমিটি এ বিশাল অঙ্কের ইভিএম প্রকল্পটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট গাড়ি কেনা, চালক, জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ, ইভিএম রাখার গোডাউন ও গাড়ির গ্যারেজ তৈরিতে ব্যাপক খরচ কমানোর নির্দেশনা দিয়ে প্রকল্পটি আবারো ফেরত পাঠায়। তবে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা ইভিএম রাখার জন্য গোডাউন ও বহনের জন্য গাড়িচালক প্রভৃতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রকল্প কাটছাঁটে অপারগতা প্রকাশ করে। সেক্ষেত্রে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার এ প্রকল্পটিতে তেমন কোনো অর্থ বাদ দেয়া সম্ভব হয়নি। একদিকে কোভিড-১৯ অভিঘাতে বৈশ্বিক টালটামাল অর্থনীতি, কোভিডপরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাবে বিশ্বের বহু দেশের সঙ্গে আমাদেরও মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট প্রভৃতি কারণে সরকার ব্যয় সংকোচনের নীতি নেয়। যার ফলে দ্বাদশ নির্বাচনে অর্ধেক অর্থাৎ ১৫০টি সংসদীয় আসনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য নতুন করে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার নতুন প্রকল্পটি পাস করা ততটা জরুরি বলে মনে করেনি সরকার।

যদিও এর আগে গত বছরের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী দলীয় একটি বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে কথা বলেন। তারপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ঘোষণা দেন তারা সব আসনে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করতে না পারলেও ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চান। সে অনুযায়ী ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি নতুন প্রকল্প তারা পরিকল্পনা কমিশনে পাসের জন্য পাঠান। এর মধ্যে অন্য ইসিরাও এ প্রকল্পটি পাস হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তবে তারা জানান, প্রকল্পটি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে পাস না হলে ইভিএম কেনার জন্য টেণ্ডার করা, এলসি খোলা, দেশে আনা, সেটি ইন্সটল করা, কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রভৃতি সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। আবার গত মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে ইভিএম প্রকল্পটি না ওঠায় এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো কথা না বলায় কিছুটা ধরে নেয়া হয়েছিল প্রকল্পটি হয়তো পাস হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। সে কারণেই ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার ঘোষণা থেকে সরে এলো নির্বাচন কমিশন। ইসিসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি স্থগিত হওয়ায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা হোঁচট খেল। এক্ষেত্রে চলমান প্রকল্পের দেড় লাখ মেশিন থেকেই ব্যবহারযোগ্য ইভিএম দিয়ে কতগুলো আসনে ভোট নিতে পারবে তা নির্ধারণ করবে ইসি। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে এই ইভিএমগুলো কেনা হয়েছিল।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে গত বছরের ১৯ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি। কয়েক দফা চিঠি চালাচালি শেষে গত ১৭ জানুয়ারি একনেক সভায় তোলার তোড়জোড় করা হয়।

এদিকে নির্বাচন কমিশন গত বছরের জুলাইয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ করে, তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চায়। অন্যদিকে বিএনপি ইভিএমকে ‘কারচুপির যন্ত্র’ বলে অভিযোগ করে আসছে। সংলাপে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিল। জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের সংশয় ও সন্দেহের কথা স্পষ্টভাবেই বলেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও সংলাপে বলেছিলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App