রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় আবারো প্রথম স্থানে উঠে এসেছে ঢাকা। গত রবিবার সকালে সুইস বায়ুমান পর্যবেক্ষক সংস্থা আইকিউএয়ারের শহরভিত্তিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ২৭১, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকার ৯০ শতাংশ মানুষই ভয়াবহ বায়ুদূষণের শিকার। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন। বায়ুদূষণের কারণে বছরে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটছে। শীতকালে এমনিতেই বেড়ে যায় বায়ুদূষণ। তার ওপর নির্মাণকাজ, রাস্তার ধুলা ও অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত কণার ব্যাপক নিঃসরণের কারণে ঢাকা শহরের বাতাসের গুণমান দ্রুত খারাপ হচ্ছে। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১৫০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত ধূলিকণা থাকলে সহনীয় হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু শীতের সময় রাজধানীর বাতাসে এর পরিমাণ থাকে ২২০ থেকে ৩০০ মাইক্রোগ্রাম বা তারও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ধুলাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগ-জীবাণু মিশ্রিত ধুলা ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও য²াসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করছে। আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। বায়ুদূষণের জন্য ধুলাবালি ও যানবাহনে ব্যবহƒত জ¦ালানি অন্যতম কারণ। এছাড়া বর্জ্য পোড়ানোর কারণে দূষিত হচ্ছে বাতাস। শিল্প কারখানার ধোঁয়া এবং রাজধানী ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারণে দূষণ কমানো যাচ্ছে না। শহর ও আশপাশের এলাকায় যেখানে-সেখানে ময়লার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে মারা যাচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। ২০১৯ সালে দেশে বায়ুদূষণে সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। গবেষকদের মতে, দূষণের মাত্রা কমানো গেলে বাংলাদেশের মানুষ আরো ৫ দশমিক ৪ বছর বেশি বাঁচতেন। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার কারণে শুধু ঢাকায় বসবাসকারীর গড় আয়ু কমেছে ৭ দশমিক ৭ বছর। রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দূষণ রোধে কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। কেবল স্বাস্থ্য নয়, জিডিপির ক্ষতিও হচ্ছে ৩.৯-৪.৪ শতাংশ। শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ ও বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাংক ও গবেষকদের পর্যবেক্ষণকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। জনস্বার্থে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। বায়ুদূষণের উপাদানগুলো মূলত ধূলিকণা, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রো কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা ও অ্যামোনিয়া। অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা স্থাপনে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। ক্ষতিকর উপাদানগুলোর ব্যাপকহারে নিঃসরণ ঘটছে। সুস্থ থাকতে ও বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে হলে বায়ুদূষণ কমানোর বিকল্প নেই। আমাদের সম্মিলিত সচেতনতা ও চেষ্টায় পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করা অসম্ভব কিছু নয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।