×

জাতীয়

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সর্ম্পক নতুন মাইলফলকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:২২ এএম

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সর্ম্পক নতুন মাইলফলকে

ফাইল ছবি

৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপনকালে বিশ্বব্যাংক এমডি

মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপনকালে বেশ কিছু খাতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে আগামীতে বাংলাদেশের উন্নয়নে দৃঢ় সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এদেশের প্রথম উন্নয়ন সহযোগীদের অন্যতম হিসেবে এ যাত্রায় অংশীদার হতে পেরে গর্বিত বিশ্বব্যাংক। আগামীতে উন্নত রাষ্ট্র গড়তে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পাশে থাকবে। শুধু তাই নয়, উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের সর্ম্পক এখন নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান, আমাদের পরবর্তী টার্গেট ২০৩১ সালে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। এছাড়া ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে এ যাত্রায় বিশ্বব্যাংককে পাশে চায় বর্তমান সরকার।

গতকাল রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের ফলপ্রসূ অংশীদারিত্ব উদযাপন অনুষ্ঠানে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য নিয়ে মূল্যায়ন করছে আর্থিক খাতের অন্যতম আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক।

উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশের সাফল্য এবার বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানটি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। তিনটি সেশনে ‘বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব অনুষ্ঠানটি উদযাপন করা হয়। মূলপর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে সফররত বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি অপারেশন) অ্যাক্সেল ভ্যান টোর্টসেনবার্গ, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার, সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল্লাহে সেক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ইআরডি সচিব শরীফা খান বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। এ নিয়ে একটি আলোচকচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের এমডি বলেন, বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। এই অস্থিরতা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। সংকট উত্তরণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ

মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যেতে হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রপ্তানি, আর্থিক খাত, ম্যাক্রো ইকোনোমি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ও ভোকেশনাল ট্রেনিংমুখী শিক্ষায় জোর দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করা প্রয়োজন। রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সংকট মোকাবিলা করেই অগ্রগতি অর্জন করছে।

রোহিঙ্গা বিষয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার রোহিঙ্গারা। তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ মিয়ানমারেরই। তবে যতদিন তারা এদেশে রয়েছে তাদের ব্যাপারে যে ধরনের সহায়তা বিশ্বব্যাংক দিয়েছে সেটা অব্যাহত রাখা হবে।

অনুষ্ঠানে বৈদেশিক মুদ্রা ডলার সংকট, ডলার রেট, ব্যাংক সুদ, ট্যাক্স জিডিপি, মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশের রিজার্ভ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বাজেট সহায়তা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।

বিশ্বব্যাংকের এমডি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশটি এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এ যাত্রায় অংশীদার হতে পেরে বিশ্বব্যাংক গর্বিত। আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখছি যে, উন্নয়ন কীভাবে কাজ করে।

তিনি বলেন, গত ৫ দশকের অসাধারণ যাত্রায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অবিচল অংশীদার ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রমে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশনের (আইডিএ) আওতায় অনুদান, সুদবিহীন ঋণ এবং নমনীয় ঋণ হিসেবে প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। বর্তমান ৫৩টি চলমান প্রকল্পে প্রায় ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ আইডিএ কর্মসূচির বাস্তবায়ন চলছে এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশের উন্নয়ন শুরু হয়েছে। ১৯৭২ সালে জিডিপি ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন, বর্তমানে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। তবে আমাদের পরবর্তী টার্গেট ২০৩১ সালে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ শুরু করা হয়েছে। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭৪ গুণ বেড়েছে। আগামীর উন্নয়নে বিশ্বব্যাংককে পাশে চায় বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া বিদ্যুৎ-জ্বালানি, শিক্ষা, চিকিৎসা, মন্দা মোকাবিলা, ঢাকা সবুজায়ন ও জলবাযু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় নতুন করে ঋণ সহায়তা দেবে সংস্থাটি। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ এই সময়ে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহজ শর্তের ঋণ সহায়তার বিষয়টিও নিয়েও ফের আলোচনা করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের মতে, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে চমকপ্রদ উন্নতি করেছে। করোনা মহামারি পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, সবাইকে বিনামূল্যে করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো চলমান সংকট সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও এই সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকটে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নত রাষ্ট্র গড়তে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন অন্যতম সমস্যা। বিশেষ করে হাওড় ও উপকূল এলাকায় বেশি। এসব এলাকায় বড় বিনিয়োগ দরকার। বছরে প্রবৃদ্ধির আড়াই থেকে তিন শতাংশ দরকার বিনিয়োগ। জলবায়ুর কারণে ক্লাইমেট রিফিউজি সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, আর্থিক খাতের সংস্কার প্রয়োজন। ব্যাংক সুদের হার কী রকম হওয়া উচিত এটা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। ডলার সংকট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটার এক্সচেঞ্জ রেট কী হবে সেটা ঠিক করতে হবে।

প্যানেল আলোচনায় নিহাদ কবির বলেন, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ যেন বাড়ে সেই উদ্যোগ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এছাড়া পুঁজিবাজার শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App